স্বজন পোষণের অভিযোগে বাংলায় বাতিল কবিতা উৎসব

পশ্চিমবঙ্গ, তার সমৃদ্ধ সাহিত্য ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত, সেখানে কবিতা উৎসব (poetry-festival) নিয়ে একটি নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্য পরিচালিত ‘কবিতা উৎসব’, যা ২০১৬ সাল থেকে…

poetry-festival cancelled in bengal

পশ্চিমবঙ্গ, তার সমৃদ্ধ সাহিত্য ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত, সেখানে কবিতা উৎসব (poetry-festival) নিয়ে একটি নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্য পরিচালিত ‘কবিতা উৎসব’, যা ২০১৬ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমি আয়োজন করে আসছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়নি। এই বাতিলের ঘটনা তীব্র সমালোচনা ও দুর্নীতির অভিযোগের জন্ম দিয়েছে।

বাংলার একদল বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন, যাতে তারা কবিতা আকাদেমির কার্যকলাপে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলেছেন।

   

খোলা চিঠিতে অভিযোগ

খোলা চিঠিতে, যাতে বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক (poetry-festival) স্বাক্ষর করেছেন, বলা হয়েছে, “পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমি—একমাত্র রাজ্য হিসেবে আমাদের এমন একটি সংস্থা রয়েছে—আপনার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কবি ও আবৃত্তিকারদের মধ্যে আকাদেমির কার্যকলাপ নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে আর্থিক অনিয়ম এবং অন্যান্য দুর্নীতির অভিযোগে এ বছর কবিতা উৎসব বাতিল করা হয়েছে।” চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এই বাতিলের ফলে রাজ্যের সাহিত্যিক সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

কবিতা উৎসবের তাৎপর্য (poetry-festival)

পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমি ২০১৬ সাল (poetry-festival) থেকে প্রতি বছর কবিতা উৎসব আয়োজন করে আসছে, যা বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই উৎসবে নবীন ও প্রবীণ কবিরা তাদের সৃষ্টি প্রকাশের সুযোগ পান, এবং আবৃত্তিকাররা বাংলা কবিতার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেন।

উৎসবটি (poetry-festival) কেবল সাহিত্যিকদের জন্যই নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও একটি সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজিত হয়, যেখানে হাজার হাজার কবিতাপ্রেমী অংশ নেন। এই বছর উৎসব বাতিল হওয়ায় অনেকেই মনে করছেন, বাংলা সাহিত্যের প্রতি রাজ্য সরকারের উদাসীনতা প্রকাশ পেয়েছে।

দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ

খোলা চিঠিতে সাহিত্যিকরা অভিযোগ করেছেন যে কবিতা আকাদেমির (poetry-festival) কার্যকলাপে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। তারা দাবি করেছেন, আকাদেমির তহবিলের অপব্যবহার এবং নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে এই উৎসব বাতিল হয়েছে। একজন স্বাক্ষরকারী কবি বলেন, “আকাদেমির কার্যকলাপে স্বজনপোষণ এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে চলছে।

এই বছর উৎসব বাতিলের ঘটনা এই সমস্যাগুলির একটি স্পষ্ট প্রমাণ।” তারা আরও জানান, আকাদেমির কিছু কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিজেদের স্বার্থে তহবিলের অপচয় করেছেন, যার ফলে কবি ও আবৃত্তিকারদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

Advertisements

মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন

চিঠিতে সাহিত্যিকরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন। তারা বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে একজন কবি এবং সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে কবিতা আকাদেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাই তাঁর কাছে তাদের প্রত্যাশা, তিনি এই দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করবেন এবং কবিতা উৎসব পুনরায় শুরু করার জন্য পদক্ষেপ নেবেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, “আমরা আশা করি, আপনি এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন এবং বাংলা কবিতার ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করবেন।”

সাহিত্যিক সম্প্রদায়ের ক্ষোভ

কবিতা উৎসব (poetry-festival) বাতিলের ঘটনা রাজ্যের সাহিত্যিক সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। একজন তরুণ কবি বলেন, “এই উৎসব আমাদের জন্য একটি বড় মঞ্চ ছিল। এটি বাতিল হওয়ায় আমরা আমাদের সৃষ্টি প্রকাশের সুযোগ হারিয়েছি।” অনেকে মনে করছেন, এই ঘটনা বাংলা সাহিত্যের প্রতি রাজ্য সরকারের উদাসীনতার প্রতিফলন। সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে, যেখানে অনেকে কবিতা আকাদেমির কার্যকলাপের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বিরোধীদের সমালোচনা

বিরোধী দলগুলি,(poetry-festival) বিশেষ করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং বামফ্রন্ট, এই ঘটনাকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা অভিযোগ করেছে, তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের অধীনে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলি দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এক বিরোধী নেতা বলেন, “কবিতা উৎসব বাতিলের ঘটনা দেখায় যে সরকার সংস্কৃতির প্রতি কতটা উদাসীন। এটি শুধু দুর্নীতির প্রশ্ন নয়, বাংলার সাহিত্য ঐতিহ্যের প্রতি অবমাননা।”

১ জুলাই লঞ্চ হচ্ছে Nothing Phone 3, ফিচারে থাকছে…

আকাদেমির নীরবতা

কবিতা আকাদেমি (poetry-festival) বা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগের বিরুদ্ধে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে কিছু সরকারি সূত্র জানিয়েছে, আর্থিক সংকট এবং সাংগঠনিক সমস্যার কারণে এ বছর উৎসব আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এই ব্যাখ্যা সাহিত্যিকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি, যারা দাবি করছেন যে এটি দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার ফল।

ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা

কবি ও সাহিত্যিকরা মুখ্যমন্ত্রীর (poetry-festival) কাছে দাবি জানিয়েছেন যে কবিতা আকাদেমির কার্যকলাপে স্বচ্ছতা আনা হোক এবং দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করা হোক। তারা আশা করছেন, আগামী বছর থেকে কবিতা উৎসব নিয়মিতভাবে আয়োজিত হবে এবং এটি বাংলা সাহিত্যের জন্য একটি সত্যিকারের মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে। একজন কবি বলেন, “আমরা চাই না বাংলা কবিতার ঐতিহ্য দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হোক। মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে আমরা আশাবাদী যে সমাধান সম্ভব।”

পশ্চিমবঙ্গ কবিতা উৎসব বাতিলের ঘটনা রাজ্যের সাহিত্যিক সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে কবিতা আকাদেমির কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লেখা খোলা চিঠি এবং সাহিত্যিকদের প্রতিবাদ এই ঘটনার তীব্রতা প্রকাশ করে। বাংলার সাহিত্য ঐতিহ্য রক্ষার জন্য এখন সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ প্রয়োজন।