ইঞ্জিনিয়ার থেকে কবি: দেরীতে শুরু করেও পৌঁছেছিলেন সাফল্যের শিখরে

বিশেষ প্রতিবেদন: ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। রীতিমত চাকরি করতেন। সেই মানুষটার মধ্যেই কোথাও যেন লুকিয়ে ছিল অন্য এক শিল্প সত্বা। ইঞ্জিনিয়ার থেকে হয়ে গেলেন বিখ্যাত কবি। তিনি…

Jatindranath Sengupta Indian poet

বিশেষ প্রতিবেদন: ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। রীতিমত চাকরি করতেন। সেই মানুষটার মধ্যেই কোথাও যেন লুকিয়ে ছিল অন্য এক শিল্প সত্বা। ইঞ্জিনিয়ার থেকে হয়ে গেলেন বিখ্যাত কবি। তিনি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত।

১৯১১, শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন যতীন্দ্রনাথ। প্রথমে নদীয়া জেলাবোর্ড ও পরে কাশিমবাজার রাজ-এস্টেটের ওভারসিয়ার হন। চাকরির পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চাও শুরু করেন খুব অল্পকালের মধ্যেই কবি হিসেবে খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। সমাজ ও সমকাল তাঁর কাব্যের বিষয়বস্ত্ত। ভাষার মধ্যে তর্ক, কটাক্ষ ও প্রচ্ছন্ন পরিহাস তাঁর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

   

দর্শন ও বিজ্ঞান উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই তিনি ছিলেন দুঃখবাদী, আর এই দুঃখবাদ তাঁর কাব্যের মূল সুর। প্রকৃতি ছলনাময়ী, জীবন দুঃখময়, সুখ অনিত্য ও ক্ষণিকের এই দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি জগৎ-সংসারকে দেখেছেন। কোনোরূপ ভাববাদের বশবর্তী হয়ে নয়, বরং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও বাস্তব পর্যবেক্ষণ থেকে তিনি দুঃখ ও নৈরাশ্যের চিত্র এঁকেছেন।

তাঁর প্রকাশিত বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ গুলির মধ্যে অন্যতম মরীচিকা (১৯২৩), মরুশিখা (১৯২৭), মরুমায়া (১৯৩০), সায়ম (১৯৪০), ত্রিযামা (১৯৪৮), নিশান্তিকা (১৯৫৭) এবং কবিতা-সংকলন অনুপূর্বা (১৯৪৬)। যতীন্দ্রনাথের মতে মানুষের জীবনের প্রথমার্ধ অবিরত দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে নিদারুণ দুঃখ-কষ্টে অতিবাহিত হয়, দ্বিতীয়ার্থে অপরাধ জরা-ব্যাধি ভারাক্রান্ত অবসন্নতা নেমে আসায় রাত্রির অন্ধকার-সদৃশ অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটে।

প্রেম, প্রকৃতি বা ঈশ্বর মানবজীবনের দুঃখের দহনজ্বালা ও নৈরাশ্যের অবসন্নতা দূর করতে পারে না। তাঁর বিশ্বাস ছিল ঈশ্বর স্বয়ং দুঃখময়, ঈশ্বরের বার্তা মানুষের জন্য কোনও কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। জগৎ যেমন তেমনই থাকে; প্রেম বলে কিছু নেই, চেতনাই জড়কে সচল করে।

যতীন্দ্রনাথের ভাষা আবেগমুক্ত ও যুক্তিসিদ্ধ। তিনি সরাসরি বিষয়ের প্রকাশ ঘটান। তবে অন্ত্যপর্বের কাব্যগুলিতে তাঁর রোম্যান্টিক বিহবলতা ও চাঞ্চল্য প্রকাশ পায়।

মহাত্মা গান্ধীর জীবনদর্শন ও রাজনীতিতে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর জীবনদৃষ্টিতে মানবতাবাদ ও দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের প্রতি গভীর মমতা লক্ষণীয়। শেষ বয়সে তিনি ম্যাকবেথ, ওথেলো, হ্যামলেট, কুমারসম্ভব ইত্যাদি অনুবাদ করেন। ১৯৪৯ সালে ‘বিপ্রতীপ গুপ্ত’ ছদ্মনামে তিনি স্মৃতিকথা নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন।