বিজেপির বাংলা ভাগের ঘৃণ্য চক্রান্তের প্রতিবাদে জলপাইগুড়িতে বিরাট মিছিল ও সভার আয়োজন বাংলা পক্ষের। বিজেপি বাংলা ও বাঙালির শত্রু। খুবই রাজনীতি করে বাংলা ভাগ করতে চাইছে এমনটাই দাবি বাংলা পক্ষের। দ্বিতীয়বার বঙ্গভঙ্গ রোধে জেলায় জেলায় বাংলা পক্ষ লড়ছে। বিজেপির বাংলা ভাগের চক্রান্তের বিরুদ্ধে জলপাইগুড়িতে বিশাল মিছিল করল বাংলা পক্ষ(Bangla pokkho)।
জলপাইগুড়ির সমাজপাড়া এলাকায় ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার মূর্তিতে মাল্যদান করে শুরু হয় আজকের মিছিল। বাংলা পক্ষের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আজকের মিছিলে বাঙালি, রাজবংশী-সহ শত শত মানুষ অংশ নেয়। মিছিলে হাঁটেন বাংলা পক্ষের সাংগঠনিক সম্পাদক কৌশিক মাইতি, জলপাইগুড়ি জেলার সম্পাদক অভিষেক মিত্র মজুমদার। আরও উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলা সম্পাদক প্রবাল চক্রবর্তী ও জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সদস্য ও সমর্থকরা। মিছিলের শেষে জলপাইগুড়ি শহরে সমাজপাড়া মোড়ে এক সভারও আয়োজন করা হয়েছিল।
মিছিল শেষে সভা থেকে বাংলা পক্ষের সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি বাংলাদেশের দালাল ও পশ্চিমবঙ্গের শত্রু। তাই বাংলাকে শুকিয়ে তিস্তার জল বাংলাদেশকে দিয়ে দিতে চায়। তারা নেপাল বর্ডার খোলা রেখে নেপাল থেকে বিদেশি ঢুকিয়ে ও বিহার-ইউপি থেকে বহিরাগত ঢুকিয়ে এই রাজ্যের বাঙালি-সহ ভূমিপুত্রদের সংখ্যালঘু করতে চায় এবং বাংলা ভাগ করতে চায়। বাংলা পক্ষ বাংলা ভাগ হতে দেবে না, তার জন্য প্রতিটা প্রান্তে লড়াই শুরু হয়ে গেছে।”
অন্যদিকে বাংলা পক্ষের সাংগঠনিক সম্পাদক কৌশিক মাইতি বলেন, “বাংলা পক্ষ ভূমিপুত্রদের মধ্যে বিভেদ চায় না। বাংলা পক্ষ কলকাতা কেন্দ্রিকতা ধ্বংস করে প্রতিটা জেলার ও প্রতিটা ভূমিপুত্রর উন্নয়ন চায়। তাই আমরা দ্বিতীয় AIIMS চাই। জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়িতে লোকাল ট্রেনের পরিষেবা উপলব্ধ করা ও নানা দাবিতে লড়ছে বাংলা পক্ষ। আমরা রক্ত দেব, কিন্তু বাংলা ভাগ হতে দেব না। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়ি, দুই দিনাজপুর, কোচবিহার-সহ বাংলা জুড়ে লড়ছি।”
জেলা সম্পাদক অভিষেক মিত্র মজুমদার জেলার প্রতিটা ভূমিপুত্রকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজেপির এই ভয়ংকর চক্রান্তকে ব্যর্থ করার আহ্বান জানান। তিনি বাঙালি-রাজবংশী ঐক্যের জন্য কাজ করবেন বলে জানান। তিনি বিশেষ করে বাঙালিদের উদ্দেশ্যে বলেন, “বাংলা ভাগের মতো ভয়ংকর কিছু হলে বাংলার বাঙালির অবস্থা আসামের বাঙালিদের থেকেও খারাপ হবে। বাঙালি সংখ্যালঘু হয়ে যাবে। বাঙালি ডিটেনশন ক্যাম্পে যাবে। সব দখল হয়ে যাবে। আমরা এটা হতে দিতে পারি না।”
দুর্গাপুজোর বিসর্জনের সময় মালবাজারে হড়পা বানে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়। সেই বিপদের সময় তরিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ রাজা, ফরিদুল ইসলাম, মনোজ মুন্ডা, রেজাউল হকের মতো ব্যক্তিরা যারা বীরের মতো মানুষকে উদ্ধার করে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন তাদের বাংলা পক্ষের তরফ থেকে “বঙ্গবীর পদক” পরিয়ে দেন সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায়।
- এক নজরে বাংলা পক্ষের দাবি-
- ১. প্রতিটা রাজ্য সরকারি চাকরির পরীক্ষা কেন্দ্র প্রতিটা জেলা সদরে থাকতে হবে। দূরের জেলা থেকে কাউকে কলকাতা যেতে না হয়।
- ২. বিহার, ইউপি বাংলার থেকে কম ট্যাক্স দিলেও বিহারে দুটো, ইউপিতে ৩ টা AIIMS আছে। কিন্তু বাংলায় একটা কেন? রায়গঞ্জ বা জলপাইগুড়িতে দ্বিতীয় AIIMS চায় বাংলা পক্ষ। এ ব্যাপারে বিজেপি সাংসদরা চুপ কেন?
- ৩. তিস্তার জল বাংলাদেশকে দিয়ে বাংলার উপরের দিকে ৮ টা জেলাকে শ্মশান বানানো যাবে না। তিস্তা জলবন্টন চুক্তির বিরুদ্ধে লড়ছে বাংলা পক্ষ।
- ৪. NJP কে কেন্দ্র করে লোকাল ট্রেন নেটওয়ার্ক চালুর দাবিতে বাংলা পক্ষ লড়াই করছে৷ রেল আধিকারিকদের ইতিমধ্যে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে।
- ৫. কেন্দ্র সরকারের কাছে দাবি, বাংলা, হিন্দি, তামিল, নেপালী ইত্যাদি ভাষার সম মর্যাদার রাজবংশী ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তপশিলে যোগ করতে হবে।
- ৬. জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়িতে ভূমিপুত্রদের কাজ ও চাকরি দিতে হবে। বিহার-ইউপি থেকে লোক আমদানি করা যাবে না।
- ৭. কলকাতা থেকে জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট ও কোচবিহার আরও তিনটি নতুন ট্রেনের দাবিতে আন্দোলন করছে বাংলা পক্ষ।
- ৮. দিল্লির দ্বারা বাংলায় হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
- ৯. শিলিগুড়ি মোড় কে চক করা হয়েছে, চক গুলিকে আবার মোড় করতে হবে।
- ১০. চিলা রায় ও ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার জন্মদিনে বাংলা জুড়ে সরকারি ছুটি দিতে হবে।
বিভেদ নয়, বাংলা পক্ষ সৌভ্রাতৃত্ব চায়। ক্ষোভের রাজনীতি নয়, বাংলা পক্ষ বাংলার প্রতিটা জেলার উন্নয়ন চায়। উত্তরবঙ্গ বা দক্ষিণবঙ্গে বিশ্বাসী নয় বাংলা পক্ষ। বাংলা একটাই ও অখণ্ড। যাতে বাংলার প্রতিটা ছেলেমেয়ে বাংলাতেই কাজ পায়, সে জন্য সমস্ত বেসরকারি চাকরি, ঠিকা কাজ, টেন্ডারে ভূমিপুত্র সংরক্ষণের দাবিতে বাংলা ব্যাপী লড়াই করছে।