Banadurga: জঙ্গলে বাজছে ঢাক, বনদুর্গা-বনবিবির ভোগে মুছে গেছে ধর্মের ভেদ

জঙ্গলে ঢাকের আওয়াজ। কারোর থালায় সিঁদুর কৌটো, কেউ এনেছেন তসবি মালা-আজ দুর্গাপূজা! এ দুর্গা ইসলাম অনুসারীদের কাছে ‘বনবিবি’, আর সনাতনী হিন্দু রীতিতে (Banadurga) বনদুর্গা। আজ…

জঙ্গলে ঢাকের আওয়াজ। কারোর থালায় সিঁদুর কৌটো, কেউ এনেছেন তসবি মালা-আজ দুর্গাপূজা! এ দুর্গা ইসলাম অনুসারীদের কাছে ‘বনবিবি’, আর সনাতনী হিন্দু রীতিতে (Banadurga) বনদুর্গা। আজ বনবাসীদের উৎসব।

উত্তরবঙ্গের অরণ্যাঞ্চল হোক বা বিস্তির্ণ সুন্দরবন কোনও কোনও মন্দিরে একসঙ্গে বনবিবি, দক্ষিণ রায় ও কালু রায়ের পুজো হয়। এরা মূর্তিরূপে অরণ্য আর বাঘ। ইসলামে মূর্তিপুজা নিষিদ্ধ। তবে কেন বনবিবির পুজো?

বাংলা ভূমিতে সনাতনী রীতির ব্রাহ্মন্যবাদ থেকে বাঁচতে ইসলামী রীতি প্রবেশের পর তাতেই ঝুঁকে পড়েন লক্ষ লক্ষ বঙ্গবাসী। মূলত এরা ছিলেন অব্রাহ্মণ। ফলে তাদের মধ্যে প্রচলিত অরণ্যের বনদুর্গা হয় বনবিবি। ফলে দুই ধর্মের মধ্যেই বনদুর্গা-বনবিবি আরাধনা ছড়িয়ে আছে।

গভীর জঙ্গলে পুজো হয় দুর্গার। এই বনদুর্গা পূজার অপেক্ষায় থাকেন সবাই। অনেকে তো সারা বছর দিন গুনতে থাকেন কবে হবে এই বন দুর্গার পুজো। অন্যরকম প্রস্তুতি থাকে সবার। কেউ দল বেধে যান কেউ যান পরিবার নিয়ে। গা ছমছমেই এই পুজো, রোমহর্ষক যাতায়াতের পথ। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে অনেকটা পথ কখনো চলে আসে হরিণ, হাতি, ময়ূর সহ নানা বন্যপ্রাণী। পুজো মণ্ডপেও রাতে হাতি চলে আসে বহু অভিজ্ঞতা আছে ভক্তদের।‌ অনেকে পুজো দেখতে এসে অতীতে অনেক স্মৃতি নিয়ে গেছেন। তারা আজও ছুটে যান পুজো দেখতে। নিয়ম নিষ্ঠা যেমন আছে তেমনই এই পুজো ঘিরে হাজার হাজার মানুষের সমাগম, মেলা আরও কত কী।

জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুরের গভীর জঙ্গলে পূজিত হচ্ছেন বনদুর্গা। জানা গেছে প্রতিবছর পৌষ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই পূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে। গত কয়েক দশক ধরে এই রীতি মেনে শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া বৈকন্ঠপুর গভীর জঙ্গলের ভেতরে পূজিত হয়ে আসছেন বনদুর্গা। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই সকাল থেকে শুরু হয় পুজো।

বনদুর্গার পুজো উপলক্ষে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গাতে হাজারে হাজারে ভক্তরা ভিড় করেন। আসেন ভিন রাজ্য এমন কি বিদেশ থেকেও।

জানা গেছে ব্রিটিশ আমল থেকে ওই পুজো হয়ে আসছে। বৈকন্ঠপুর গভীর জঙ্গলে যেখানে বন দুর্গার মন্দির রয়েছে সেই জায়গার নাম দিল্লি ভিটা চাঁদের খাল বলে পরিচিত। পূজো উপলক্ষে বিশাল মেলা বসে, যেহেতু একেবারে গভীর জঙ্গলে পুজো হয় তাই নিরাপত্তার স্বার্থে বন দপ্তরের তরফ থেকে বিশেষ সাহায্য করা হয়। স্থানীয় রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের হাত ধরে এই পুজোর সূচনা। তখন ঠুনঠুনি পুজো নামে এটি পরিচিত ছিল। এখন বনদুর্গা নামে পুজো পান দেবী।

কথিত আছে জলপাইগুড়ি রাজগঞ্জ ব্লকের বৈকন্ঠপুরের জঙ্গলের ভিতর এই দিল্লি ভিটা চাঁদের খালের সন্ন্যাসী হাট। এই নামে লড়াই শুরু লাগে দেশপ্রেমীদের নিয়ে সভা করেছিলেন দেবী চৌধুরানী। সঙ্গে ছিলেন ভবানী পাঠক। যেখানেই এই পুজো হয় সেখানে ৮ প্রজাতির গাছ দিয়ে ঘেরা। এই দিল্লি ভিটা চাঁদের খালে এখন উৎসবের আবহ। মানুষ মেতে উঠেছেন বনদুর্গা পুজোয়।