শীতের শুরুতেই ঘুরে আসুন দুবরাজপুর শিবমন্দির ও মামা ভাগ্নে পাহাড়

বীরভূমের দুবরাজপুরের মন্দিরের স্থাপত্য এবং তার অলঙ্করণ বাংলার মন্দির স্থাপত্য-শিল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।যে ঐতিহাসিক পটভূমিকায় এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় এবার সেই ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানো…

dubrajpur-shiva-temple-travel

বীরভূমের দুবরাজপুরের মন্দিরের স্থাপত্য এবং তার অলঙ্করণ বাংলার মন্দির স্থাপত্য-শিল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।যে ঐতিহাসিক পটভূমিকায় এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় এবার সেই ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানো যাক।

প্রাচীন এই মন্দিরের ভিত্তিস্থাপন হয়েছিল আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগে। তারপর কালের নিয়মে মন্দিরের অবক্ষয় হলে বর্তমান চেয়ারম্যান পীযূষ পান্ডে নতুন করে ২০১৬ সালে ফের মন্দির নির্মাণ করেন। জানা যায় যে, বর্তমান সেবাইতের পিতামহ ছিলেন বাকসিদ্ধ যোগী পুরুষ। ঘন জঙ্গলের মধ্যেই তিনি শৈব আরাধনা শুরু করেছিলেন। সেইসময় অবশ্য ছিল না কোন তথাকথিত মন্দির। ছিল শুধু চারিদিকে পাথর আর অনেক উঁচুতে আদি শিবের অবস্থান।

   

সেই ব্যক্তি নিজের যোগ বলে শূণ্যে ভেসে থাকা অবস্থাতেই আদি শিবের পূজা-অর্চনা করতেন। এরপর, বৃদ্ধাবস্থায় তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন কিভাবে তার পরবর্তী প্রজন্ম পূজাপাঠ করতে সক্ষম হবে সেই প্রসঙ্গে। তিনি চেয়েছিলেন আদি শিব ভূমিতে নেমে এসে তার পুজো গ্রহন করুক। কিন্তু, তার আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ থাকায় তিনি আদির শিবের জন্য মন্দির তৈরী করতে অপারগ ছিলেন। পরবর্তীকালে আদি শিবের এক পরম ভক্ত যিনি দুবরাজপুরে থাকতেন, তিনি স্বপ্নাদেশ পান। আর তার পরেই ঘটে চমকপ্রদ কাহিনী।

এতো গেল, মন্দিরের ইতিকথা। প্রাচীন এই শিবমন্দিরটিতে আজও লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীদের সমাগম হয় শিবরাত্রীর দিনে। সেদিনকে মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ অনুষ্ঠান। এছাড়াও, শ্রাবণ মাসে বাবার মাথায় ঢল ঢালার উদ্দেশ্যে অগণিত ভক্ত পা রাখেন এই মন্দিরে।

দুবরাজপুরে শিবমন্দির ছাড়াও আরেকটি বিশেষ আকর্ষণীয় স্থান মামা-ভাগ্নে পাহাড়।ছোট ছোট বিক্ষিপ্ত পাথরের টিলা দিয়ে তৈরি এই অঞ্চলে জুড়ে আছে ছোটো ঘন জঙ্গল। তার মধ্যে দুটি পাথরের অবস্থান বেশ আশ্চর্যের। এখানে বড় পাথরের ওপর রয়েছে ছোট পাথরটি।স্থানীয় লোকজনদের মুখে মুখে তারাই পরবর্তীতে বড় পাথরটি মামা আর ছোটটি ভাগ্নে হিসাবে পরিচিত হয়েছে। কথিত আছে, এখানে মামা হলো কংস আর ভাগ্নে হলো কৃষ্ণ। এই পাহাড়ের সঙ্গে জুড়ে আছে নানান পৌরাণিক কাহিনী। কথিত আছে যে, ওখানে যুদ্ধ করতে যাওয়ার আগে নিজেদের মধ্যে ‘কে বড়ো’ সেটা পরখ করতেই প্রতিদ্বন্দিতায় নেমেছিলেন। আর তার পরেই কংস সৃষ্টি করেছিলেন মাটি বিহীন দুটি তালগাছ আর কৃষ্ণের হাতে সৃষ্টি হয়েছিল মায়ের ‘যোনীপীঠ ‘ ।

প্রসঙ্গত, অজস্র পৌরাণিক কাহিনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দুবরাজপুরের চারিপাশে।সেখানকার সবুজ শান্ত পরিবেশ প্রতিমুহূর্তে মুগ্ধ করে।সব মিলিয়ে, ইতিহাস কিংবা মিথ এখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।