Saeed Al Owairan : ওয়াইরানদোনা! ভ্রু কুঁচকে মারাদোনার মুচকি হাসি, যেন আলাদিনের ফুটবল দৈত্য

সাইদ আল ওয়াইরান (Saeed Al Owairan) নামটা ফুটবলের ম্যাজিক গোলদাতা তালিকায় জ্বলজ্বল করছে। জেলখাটা এক চাঁদ! যার জন্য চিরশত্রু আরব আর ইরান একসাথে বলে ওঠে-…

Saeed Al Owairan

সাইদ আল ওয়াইরান (Saeed Al Owairan) নামটা ফুটবলের ম্যাজিক গোলদাতা তালিকায় জ্বলজ্বল করছে। জেলখাটা এক চাঁদ! যার জন্য চিরশত্রু আরব আর ইরান একসাথে বলে ওঠে- মারহাবা…মারহাবা। (ধন্য-ধন্য)

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ভিড়ে গমগম করছে বাজার। রিয়াধবাসী ইফতারি সুবাসে মাতোয়ারা। বড় বড় খেজুরের টুকরো মুখে পুরে আয়েশ করে স্বাদ নিচ্ছেন। এরপর কড়া কালো কফি আর রোস্ট আসলেই সেগুলোর উপযুক্ত ব্যবহার হবে। ইতি উতি রয়েছে নীতি পুলিশ। হঠাৎ তাদের চোখ কুঁচকে গেল। ওখানে কী হচ্ছে!

টেবিলটার চারদিকে কয়েকজন হুল্লোড়বাজ। বিদেশি মহিলা আর আরব নাগরিক খোশগল্পে মত্ত। নি:শব্দে এগিয়ে গেলেন অফিসার। কুঁচকে থাকা চোখ কপালে উঠে গেল অফিসারের। ও আচ্ছা এই ব্যাপার! দাঁড়াও বাপধন দেখাচ্ছি মজা। অনেকটা এমন মনোভাব নিয়ে দলবল সমেত নীতি পুলিশ অফিসার হাজির টেবিলের সামনে।
-ওয়াইরান তুমিও!
-না, মানে ইয়ে… এদের সঙ্গে বসেছিলাম। ঘামতে শুরু করেছেন সৌদির চাঁদ সাইদ আল ওয়াইরান। গলা শুকিয়ে গেল। টেবিলে ছড়ানো ছোট ছোট মদের পানপাত্রগুলো বলে দিচ্ছে ওয়াইরানের ‘অপরাধ’।
রমজান মাসে এ এক ভয়াবহ কাণ্ড। ভয়ে ঘামতে থাকা ওয়াইরানকে দেখে কে বলবে এই লোকটার জন্য সৌদি আরব তো বটেই পুরো আরব বিশ্ব জীবন দিতে এগিয়ে আসবে। বিশ্ববিখ্যাত ক্রীড়া পত্রিকাগুলোর প্রচ্ছদে বারবার মারাদোনার সাথে ওয়াইরানের গোল করার তুলনা করা হয়েছে- ওয়াইরানদোনা!

সেদিন সৌদি আইন ভেঙে নীতি পুলিশের (ধর্মীয় আইন পুলিশ) খপ্পরে পড়ে বিশ্ববিখ্যাত অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সাইদ আল ওয়াইরানকে জেলে যেতে হয়েছিল। পড়ে রইল সৌদি বাদশাহর উপহার দেওয়া বিলাসবহুল রোলস রয়েজ।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

ধর্মীয় আইন ভাঙলে সৌদি আরবের বিখ্যাত চপ চপ স্কোয়ারে জহ্লাদের সামনে হাজিরা দিতে হয়। দোষ অনুযায়ী কারোর হাত, কারোর মাথা নির্দিষ্ট হয় শাস্তির জন্য। বাকিটা সহজে অনুমান করা যায়। তবে ওয়াইরানের জেল হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে জেলে ঢোকার পরও ওয়াইরান নায়ক। এই নায়কোচিত ঝলকের জন্ম ১৯৯৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফুটবল বিশ্বকাপের মাঠে। সে এক অবিশ্বাস্য মুহূর্ত।

ফিফার পর্যালোচনা, ভ্রু কুঁচকে বারবার ভিডিও ফুটেজটি দেখে মুচকি হাসা মারাদোনার বিরল মুহূর্ত, বিশ্বখ্যাত ক্রীড়া পত্রিকা-সাময়িকীর বিশ্লেষণে বারবার গোনা হয়েছে ১ ২ ৩ ৪ …গো ও ল ল ল! সৌদি আরবের সবজে-সাদা জার্সির দশ নম্বরি ওয়াইরান প্রতিপক্ষ বেলজিয়ামের রক্ষণভাগ চিরে এগিয়ে যাচ্ছেন। বল কাড়তে আসা বেলজিয়ান ডিফেন্ডাররা ঠিক কাটা কলাগাছের মতো ছিটকে পড়ছেন। পর পর চার জনকে কাটিয়ে শিকারি জাগুয়ারের মতো বেলজিয়ামের গোল পোস্টের কাছে গিয়ে সেই সোনালি কিক!

রেফারির বাঁশি বাজল। হাজার হাজার দর্শক হতবাক। এ যে অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কয়েকটি সেকেন্ডের সেই বিহ্বলতা কাটিয়ে বিশ্বজুড়ে ছড়াল আলোড়ন। ধারাভাষ্যকার বলেছিলেন ‘unbelievable’ !

১৯৯৪ সালে এই বিশ্বকাপ ম্যাচে সৌদি আরব (Saudi Arabia) তার প্রতিপক্ষ শক্তিশালী (Belgium)  বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে পরাজিত করে। আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ দৈত্যর মতো গোলদাতা ওয়াইরানের সেই রক্ষণভাঙা দৌড় তুলনা করা হয় ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে মারাদোনার বিখ্যাত গোলটির সাথে। সেই ম্যাচেও আর্জেন্টিনার (Argentina)  প্রতিপক্ষ ছিল বেলজিয়াম। তাদের রক্ষণভাগ একাই দুরমুশ করেছিলেন মারাদোনা।

বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর মানেই ঘটনার ঘনঘটা। খেলা শুধু মাঠে নয়, খেলা হয় মাঠের বাইরেও। যথারীতি সৌদি ফুটবলার সাইদ আল ওয়াইরানকে নিয়েও খেলা শুরু হয়ে গেল। তাবড় তাবড় ‘ফুটবলার ক্যাচার’ তাদের নোটবুকে লিখে রাখল নতুন টার্গেট-ওয়াইরান। মার্কিন মুলুকে জন্ম নিল এক ফুটবলের নক্ষত্র, যে কিনা আসলে আরব দুনিয়ার চাঁদ। এশিয়া শ্রেষ্ঠ ফুটবলার।

‘ওয়াইরানদোনা’-এই নামে সেদিন সৌদি আরব কাঁপছিল আবেগে। আরবের চিরশত্রু ইরান কাঁপছিল আবেগে। কাতার, কুয়েত, ওমান, আমিরশাহি, মিশর, মরক্কো, প্যালেস্টাইন, বাহারিন, টিউনিসিয়া, তুরস্ক, সিরিয়া হয়ে লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর, আরব সাগর পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে টিভির পর্দায় চোখ রাখা কোটি কোটি মানুষের একটাই কথা এ কি সত্যি হতে পারে! এ যে অবিশ্বাস্য।

New York Times কে দেওয়া সাক্ষাতকারে ওয়াইরান বলেছিলেন, এক হাজারবার দেখেছি গোল করার ভিডিওটা। কী করে করলাম বিশ্বাস করতে পারিনা। মনে হয় একটা দুর্দান্ত স্বপ্ন। যে স্বপ্ন দেখতে যে কোনও ফুটবলার পছন্দ করবেন। আর দয়া করে দিয়েগোর সাথে তুলনা টানবেন না। উনি-উনিই।

জেলে থাকার সময় চেষ্টা করতাম মনকে শক্ত রাখতে। সৌদি জাতীয় দলের হয়ে আরও কত কিছু করার ছিল। একটা ভুল হয়ে গেছিল। আর কিছু নয়। পরে বলেছিলেন ওয়াইরান।

জেল খেটে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু আর ঝলক আসেনি তেমন। তবে বিশ্বের অন্যতম সেরা ম্যাজিক্যাল গোলদাতা তালিকায় মারাদোনার ঠিক পাশে থেকে গেছেন সাইদ আল ওয়াইরান।