এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে মুখ খুললেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, দোষ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তকে যেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
গত শনিবার এসএসসি দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে হানা দেয় ইডির আধিকারিকরা। সেদিন রাজ্যের প্রায় ১৩টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালায় ইডির দল। সেদিন রাতেই পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ২১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়। এরপর লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় পার্থকে। সেইসঙ্গে গ্রেফতার করা হয় পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতাকেও। এরপর ঘটনার দুদিন কেটে যাওয়ার পরেও দলীয় সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন নিশ্চুপ সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। তবে অবশেষে নিজের মৌনতা ভেঙে পার্থ প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মমতা।
তিনি বলেন, ‘যদি এটা প্রমাণিত হয়, তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলে আমার আপত্তি নেই। আমি চাই, সময় মতো সত্যিটা সামনে আসুক। দুর্নীতিকে সমর্থন করি না, সব মানুষ এক নয়।’
সবাই সাধু একথা বলতে পারবো না, সাধু এর মধ্যেই ভূত আছে, দাবী মমতার
এদিন তিনি বলেন, ‘সবাই সাধু একথা বলতে পারবো না, সাধুর মধ্যেই ভূত আছে। সারা জীবন আমি রাজনীতি করেছি এই কারণে নয়, ফলটা ভোগ করার জন্য। আমি ছোট্ট বেলা থেকে রাজনীতি করি তার কারণ, আমার একটা ধারণা ছিল রাজণিতি মানেই ত্যাগ। মানুষকে ভালোবাসা। এটাই আমি আমার পিতৃ মাতৃ দেবের কাছ থেকে পেয়েছি। শিক্ষকদের কাছ থেকেও পেয়েছি। কিন্তু বলুন তো, স্কুলের কি সব স্টুডেন্টরা একরকম হয়? হলে যারা এসেছেন, তাঁরা কী একই জামা পড়ে এসেছেন? এক গাছে কলা আপেল ফোঁটে? নাকি এক গাছে আম আর আমড়া হয়? নাকি আলু আর আলুবখরা হয়? আমি কোন অন্যায়কে সমর্থন না করেও, দুর্নীতিকে সমর্থন করা আমার জীবনের নেশাও নয়, পেশাও নয়।’
মমতা আরো বলেন, ‘আমি গত ১১ বছর ধরে ১ লক্ষ্য টাকা পার্লামেন্টের পেনশন পাই। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ২ লক্ষ টাকা করে পাই। আমি তো এক পয়সা নিইনি। আমি স্বেচ্ছায় কাজ করি। আজকে আমি সত্যিই দুঃখিত, মর্মাহতও শোকাহত। কিছু চাকরি প্রার্থী বঞ্চিত হয়েছিল, সিপি(আই)এম এবং বিজেপি তাঁদের নিয়ে রাস্তায় বসেছিল। আমি আমার তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রীকে নিয়ে গিয়ে তাঁদের অঙ্গে দেখা করি। আমি তখন বলেছিলাম শিক্ষা মন্ত্রীকে এই কটা কেস করে দিন। তাঁরা বলল কতগুলো আইনি পদক্ষেপ রয়েছে। আমি এবারের কেবিনেটে বঞ্চিতদের ছাড়াও লিস্ট বাড়িয়ে দিলাম। আমি পোস্ট তৈরি করে দিলাম।’
ইতিমধ্যেই বিজেপির তরফে একই মঞ্চে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখ্যোপাধ্যায়ের ছবি একসঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে। স্যোশাল মিডিয়ায় রোল উঠতেই মমতার বার্তা, ‘জেনে শুনে আমি কোনও দিন কাউকে অন্যায় করতে দিইনি। ভুল করার অধিকার আমার রয়েছে। অজ্ঞানে করলেন সংশোধনের সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু জ্ঞানত করা অপরাধ। আমি চাই, সত্য সামনে আসুক। সত্য প্রমাণ হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিন। আমার কোনও আপত্তি নেই। আমার ছবির সঙ্গে টাকার পাহাড়ের ছবি দিয়ে কুৎসা রটাচ্ছে বিরোধীরা। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আচরণে আমি সত্যিই দুঃখিত। আমি পুজোয় যাই। অর্গানাইজাররা যদি কাউকে স্টেজে আগে থেকে ডেকে রাখে, তাতে আমি কী করতে পারি। তার মানে আমি পুজো প্যান্ডেলে যাব না? যদি কেউ চোর হয়, ডাকাত হয়, তৃণমূল রেয়াত করবে না। কিন্তু অযথা আমার গায়ে কালি ছেটানো হলে আমি ছেড়ে কথা বলব না। আমার হাতেও আলকাতরা রয়েছে।’