পুরী: ওড়িশায় ফের নারকীয় বর্বরতা। রাজ্যের পুরী জেলায় পনেরো বছরের এক নাবালিকাকে রাস্তার মাঝখানে পেট্রল ঢেলে আগুনে ঝলসে দিল দুষ্কৃতীরা (Odisha Teen Set Ablaze)। শনিবার দুপুরে বাইয়াবার গ্রামে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা রাজ্যজুড়ে। চিকিৎসাধীন ওই কিশোরীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভরতি করা হয়েছে ভুবনেশ্বরের এইমস হাসপাতালে।
জানা গিয়েছে, বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার পথে হঠাৎই রাস্তা আটকায় তিন যুবক। কোনও কথাবার্তা না বলেই কিশোরীর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা দৌড়ে এসে আগুন নিভিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্তরা। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তল্লাশি, তবে মূল অভিযুক্তদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
“শুধু অপরাধ নয়, এ এক সামাজিক পতনের দলিল”
এই মর্মান্তিক ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও মহিলা-শিশুকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী প্রভাতী পরিডা। তিনি বলেন, “একটা ১৫ বছরের মেয়েকে এভাবে রাস্তায় পুড়িয়ে মারা চেষ্টা করার ঘটনা শুধু অপরাধ নয়, এ এক সামাজিক পতনের দলিল। প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেকোনও মূল্যে দোষীদের ধরতে হবে। মেয়েটির চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার।”
পুরীর জেলা শাসক চঞ্চল রানা জানান, “নাবালিকার শরীরে ৭০ শতাংশের বেশি পোড়ার ক্ষত রয়েছে। সরকারি সমস্ত সহায়তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”
রাজনীতির ময়দানে গর্জন: “মেয়েরা নিরাপদ নয়, প্রশাসন ব্যর্থ”
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক বর্তমান বিজেপি সরকারের দিকে তীব্র আক্রমণ ছুড়ে বলেন,
“এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। একের পর এক ভয়াবহ হিংসার কাহিনি প্রমাণ করে রাজ্যে নারীরা নিরাপদ নন। অপরাধীরা নিশ্চিত জানে, তাদের কিছুই হবে না।”
তৃণমূল কংগ্রেসও কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দুষেছে। দলের এক মুখপাত্রের ভাষায়, “বেটি বচাও? কোথায় সেই স্লোগান? আজ দেশের মেয়েরা আগুনে পুড়ছে, ধর্ষিতা হচ্ছে, মরছে… প্রধানমন্ত্রী মোদীর হাতেই রক্ত লেগে আছে। এটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, এটা অপরাধে মদত।”
সাম্প্রতিক ঘটনা
ফকিরমোহন কলেজের ছাত্রী আত্মহত্মা করে মারা যাওয়ার রেশ কাটেনি এখনও৷ মাত্র কয়েক দিন আগেই, বালেশ্বরের ফকিরমোহন কলেজে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করে নিজেকে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন এক ২০ বছরের ছাত্রী। তাঁর শরীরের ৯৫ শতাংশ ঝলসে যায়। চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর। সেই ঘটনার রক্ত শুকানোর আগেই, ফের আগুনের নৃশংসতা, তাও এক নাবালিকার উপর!