ডারউন-পিরিওডিক টেবিল বাদ দেওয়ায় মোদী সরকারের তুলোধনা করল Nature ম্যাগাজিন

কিছুদিন ধরেই বিতর্ক এবং নিন্দার ঝড়ের মাঝে ন্যাশনাল কাউনসিল অফ এডুকেশন রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং বা NCERT। কেন? NCERT-র তরফে নেওয়া কিছু ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত ভারতীয় শিক্ষা…

কিছুদিন ধরেই বিতর্ক এবং নিন্দার ঝড়ের মাঝে ন্যাশনাল কাউনসিল অফ এডুকেশন রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং বা NCERT। কেন? NCERT-র তরফে নেওয়া কিছু ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত ভারতীয় শিক্ষা সমাজে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। আগেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল ডারউনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব। এরপর দশম শ্রেণির বিজ্ঞানের বই থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় পিরিওডিক টেবিল (পর্যায় সারণি)-এর মতো এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বাদ গেছে গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্র রক্ষা অধ্যায়।

NCERT-র তরফে জানানো হয় ছাত্রছাত্রীদের উপরে পড়াশোনার চাপ কমানোর জন্যই এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। NCERT বিবৃতি দিলেও থামেনি বিতর্ক। সমালোচনার ঝড় বয়েই চলেছে। এবার তার প্রতিফলন দেখা গেল বিশ্ববিখ্যাত নেচার ম্যাগাজিনের সম্পাদকীয়তে। ভারতে বিদ্যালয় পাঠ্যক্রমে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়ার প্রবল সমালোচনা করা হলো মোদী সরকারের।

ভারতের সংবিধানের একটি সংশোধনীতে ১৯৭৬ সালে প্রথম লেখা হয়, “To develop the scientific temper, humanism and the spirit of inquiry and reform.” অর্থাৎ, সংবিধানের লেখকরা সঠিকভাবেই দেখতে পেয়েছিলেন যে প্রমাণ অন্বেষণ, যুক্তি এবং মানবতা প্রতিটা ভারতীয় নাগরীকের দায়িত্ব। কিন্তু যারা ভারতের শিক্ষানীতি তৈরির সঙ্গে যুক্ত তাদের কাছে এই গুণাবলীর মূল্য আজ কমে গিয়েছে। ঠিক এই ভাষাতেই আক্রমণ শানিয়ে শুরু হয়েছে নেচারের সম্পাদকীয়।

সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে যে অনেকগুলি পরিবর্তন আনার ফলে স্কুলের বিজ্ঞান থেকে বাদ চলে গিয়েছে পিরিওডিক টেবিল, বিবর্তনের ব্যাখ্যা, ইলেক্ট্রোম্যাগনাটিজম এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার। ১৪ থেকে ১৬ বছরের ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে নেচার ম্যাগাজিন বলেছে গত বছর শুধু এই বিষয়গুলো পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল কোভিড অতিমারির সময়, ছাত্র-ছাত্রীদের চাপ কমাতে। কিন্তু এবারে পুরোটাই একেবারে বই থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারী ফানডেড হলেও পুরোপরি অটোনোমাস NCERT এই পরিবর্তনগুলো কারুর সঙ্গে আলোচনা না করেই নেওয়া হয়েছে। না জানানো হয়েছে অভিভাবক, না বলা হয়েছে শিক্ষকদের বা গবেষকদের।

নেচারের প্রতিবেদনে সম্পাদক আশঙ্কা করছেন এই সিদ্ধান্তের ফলে ৩৮ মিলিয়ন শিশুর ওপর প্রভাব পড়বে। বিজ্ঞান নিয়ে যারা পড়াশোনা করেন, তারা নেচারকে জানিয়েছেন যা এমন পরিবর্তনে তারা হকচকিয়ে গিয়েছে।

ভারতের ২০২০ জাতীর শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সমস্যার সমাধানকারী এবং সমালোচনামূলক চিন্তাবিদ হতে হবে। তাই এই শিক্ষানীতি মুখস্থ বিদ্যাকে কম এবং এক্টিভ শিক্ষা কে বেশি প্রাধান্য দেয়। সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে যে NCERT-এর চিন্তাধারা থেকে বোঝা যায় চার্লস ডারউন এবং মাইকেল ফারাদে কে বাদ দেওয়ার কারণ। এগুলো বাদ দিয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে ভারতের বিজ্ঞানের প্রাক-ঔপনিবেশিক ইতিহাস নিয়ে পড়ার এবং শেখার জন্য।

সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে যে পিরিওডিক টেবিল থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা নিয়ে জগৎ-কে আরও বড় করে দেখার এবং ভাবার জন্য উৎসাহিত করে। এইভাবেই মানুষ জীবনে বড় হয়ে ওঠেন শিক্ষার ফলে। তাই এই বিষয়গুলো বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তে এই কারণে প্রশ্ন তুলেছে নেচার ম্যাগাজিন।

যে গবেষকরা ভারতের শিক্ষানীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন তারা নেচারকে বলেছেন, যে সংস্থাগুলি বিজ্ঞানের সমালোচনা করে, তারাই পাঠ্যক্রমে এইরম পরিবর্তিন আনার জন্য প্রভাব বিস্তার করছে। সম্পাদকীয়তে সরাসরি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দিতে আঙ্গুল তোলা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবকের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে বলেই বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

NCERT-এর সকলের থেকে মত নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সম্পাদকীয়তে। নিজে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিলে ছাত্র-ছাত্রীদের, বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং গবেষকদের সাহায্য করবে, এমনটাই মনে করছে নেচার। NCERT কে চুপ না থেকে এগিয়ে এসে ছাত্ররা যে পড়াশোনা উপভোগ করে করতে পারবে, সেটাকে প্রাধান্য দিতে বলছেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকার সম্পাদক।