ছবি আঁকতে আঁকতে হঠাৎ যেন মাঝপথে উঠে চলে গেছে কোনও এক অজানা শিল্পী। উদাস হেঁটে গেছে মাইলের পর মাইল। পাহাড়ের কোলে নির্জন উপত্যকায় আনমনে ফেলে রেখে গেছে আঁকার সরঞ্জাম, কালার প্যালেট। যে কোনও সময় হয়তো ফিরে আসবে আবার। আবারও আঁকতে বসবে নিসর্গ চিত্র। ততদিন রঙের উজ্জ্বলতায় ঝলসাতে থাকবে একাকী রং–দানি।
‘ডংচুয়ান রেড ল্যান্ডস’ প্রকৃতির এমনই এক আশ্চর্য নির্মাণ, যাকে তুলনা করা যায় কোনও শিল্পীর রঙিন প্যালেটের সঙ্গে। সেই কারণেই হয়তো জায়গাটিকে ‘গডস প্যালেট’-ও বলা হয়।
আসলে চিন হল এমন এক প্যান্ডােরাবাক্স, যেখানে প্রকৃতির আশ্চৰ্যতম ভেলকিগুলি দেখা গেছে বারবার। উপত্যকা জুড়ে এই রঙের খেলা দেখা যায় যে ভূখন্ডে, সেটি চিনের কুনমিং থেকে ১৫৫ মাইল উত্তর-পশ্চিমে এবং ডংচুয়ান থেকে ২০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,৯০০-৮,৫০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই লাল ভূখন্ডটির রং বদলে যায় ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে। বসন্ত সমাগমে এর বাহার সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এখানকার ভূমির রঙে খানিকটা মেরুন টোন। নানা ধরনের খনিজ পদার্থ, বিশেষত আয়রন থাকার কারণেই এই রং। আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বছরের পর বছর ধরে এখানকার মাটিতে জমা হওয়া আয়রন ।
এলিমেন্টস–এর অক্সিডেশনের ফলে এমন রং ধারণ করেছে। শতাব্দীকাল ধরে এই রং তৈরি হতে হতে এখনকার বর্ণময় ভূমিখন্ডটি নির্মিত হয়েছে। অন্যান্য যে রংগুলি বিশেষ বিশেষ ঋতুতে দেখা যায়, সেগুলি আসলে আলাদা আলাদা ভাগে বিভক্ত ভূমিখন্ডে জন্মানাে নানা ধরনের ফসলের কারণে হয়। প্রত্যেক ঋতুতে আলাদা রং, আলাদা সিনিক ভিউ আকর্ষণ করে পর্যটকদের।
এক চৈনিক ফোটোগ্রোফার প্রথম এই আশ্চর্য সুন্দর জায়গাটিকে আবিস্কার করেন। মায়াবী ভােরের সূর্যোদয় কিংবা মনকেমনের বিকেল বেলা সূর্যাস্তের সময় সবথেকে মনােরম দেখায় এই দিগন্তবিস্তৃত রংবাহারি উপত্যকা। নীল আকাশের নীচে এই রেড ল্যান্ড, সবুজ ভেজিটেবল প্লট তার অনন্য আকৃতি সবকিছু নিয়ে এই জায়গাটি ঠিক যেন এক ফেয়ারি ল্যান্ড। ঠিক যেন স্বপ্নে দেখা কোনও রঙিন ছবি।