ঘুণ ধরেছে তৃণমূলে, জায়গা করছে বাম

এক সময় জঙ্গলমহল ছিল বামেদের দুর্গ৷ পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনে এই এলাকার একাংশ থেকে উত্থান হয় তৃণমূল কংগ্রেসের। এরপর বেলদা, বালিচক, কেশিয়াড়ি ও কেশপুরে ঘাসফুলের…

এক সময় জঙ্গলমহল ছিল বামেদের দুর্গ৷ পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনে এই এলাকার একাংশ থেকে উত্থান হয় তৃণমূল কংগ্রেসের। এরপর বেলদা, বালিচক, কেশিয়াড়ি ও কেশপুরে ঘাসফুলের বিস্তার হয়৷ বাম দুর্গে ধীরে ধীরে ফাটল ধরতে শুরু করে। এমনকি বিরাট জনমতের সমর্থনে ভোটের অঙ্কে বদল ঘটায় ঘাসফুলের নেতারা। সময় বদলে এখন ঘুণ ধরেছে তৃণমূলে৷ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফের হারানো জায়গায় শক্তি অর্জন করছে সিপিআইএম।

দীর্ঘ সময় ধরে পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের আধিপত্য বিস্তারের পিছনে সিপিআইএম নেতা সুশান্ত ঘোষের অনুপস্থিতিকেই প্রধান কারণ মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ তার ওপর জঙ্গলমহলকে ঘিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পের একাধিক ভাবনা তৃণমূলের জন্য রাস্তা আরও মসৃণ করে দিয়েছিল৷ তবে দুর্নীতির জেরে হাঁসফাঁস করছেন জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়া বাঁকুড়া জেলাবাসী। গোটা রাজ্যেই এই পরিস্থিতি। ফলে বিকল্প হিসেবে বিজেপির সাময়িক উত্থান হলেও সাংগঠনিক কারণে সিপিআইএম ফের জমি শক্ত করছে বলে মেনে নিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা।

স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে লড়াকু মেদিনীপুরের বাসিন্দা বারবার সরব হয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। একইভাবে এখন সরব হচ্ছেন যেভাবে৷ সেখানেই খেলা ঘুরছে বলে মনে করছেন বিরোধীরা।

গত রবিবার মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতোর ভাইরাল বক্তব্যের কারণে তাঁকে সাবধান করেছে দল৷ যেখানে তিনি বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি খারাপ লোককে তাঁরা ভালো বলছে। তাহলে আমরা বাঁচব কী করে? খারাপ লোককে খারাপ লোক বলতে হবে৷ ভালো লোককে ভালো লোক বলতে হবে৷ এখানে যদি দেবাদিদেব মহাদেব, সন্ধ্যা রায়, মুনমুন সেন, সায়নী ঘোষ, নজরুল, মিমি… যারা লুটেপুটে খাচ্ছে, তাঁরা যদি সম্পদ হয়, আমাদের পার্টি করা যাবে না।

শালবনীর বিধায়কের কথায়, টাকা ডাকাতি করে যারা সম্পদ হয়, তাঁদের তো মন্ত্রীত্ব চলে গেলে ভালো হয়। ওই ক্যাবিনেটের মন্ত্রীরা সবাই চোর বলছে তো। চোর ডাকাতদের কথা শুনবে কে? দিল্লি বম্বের লোকেরা ডাকাতি করবে কেন? আমরা ওই ক্যাবিনেটে থাকব না৷ থাকাটার উচিত আছে কী? তাহলে আপনাকে পথ দেখাতে হবে৷ আর না হলে সামাজিক আন্দোলন করতে হবে৷ যতক্ষণ অবধি ন্যায় বিচার না পাবো আন্দোলন করে যাবো।

বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতোকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন জুন আপনার থেকে বয়সে ছোট, সেটা জানি।এমনভাবে ক্ষমা চাইবেন যেন জুন আমাকে ফোন করে বলেন।

এরপর আরও জেলার নেতা শৈবাল গিরির মন্তব্য ঘিরেও জোর জল্পনা। শ্রমিক সংগঠনের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর তিনি বলছেন, আমাদের কষ্ট হয়। আজ দিদি কী জানেন না মুখ্যমন্ত্রী হয়ে! আজ প্রতিদিন দলের মধ্যে যা হচ্ছে, তাতে মুখ দেখানো ভার হচ্ছে। আমি দিদিকে বলেছি৷ দিদি চোর ডাকাত নিয়ে আছেন৷ আমাদের কেন আর সময় দেবেন! এই মুহুর্তে এটা যদি অন্যায় হয় অন্যায় করছি৷ তিনি আরও বলেন, এটা ক্ষতি আমি মনে করি না৷ রাজনীতি করাটাই অন্যায় হয়েছিলন টাকা দিতে পারিনি বলে দল পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি৷

শ্রীকান্তর বক্তব্যে শীর্ষ নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়লেও, এধরনের মন্তব্যকে সমর্থন করছে তৃণমূলের নীচু তলার কর্মীরা৷ নীচু তলার কর্মীদের স্বাগত জানিয়ে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

এরই মধ্যে কেন্দ্র সরকারের বঞ্চনা ও রাজ্য সরকারের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে হালে পানি পাওয়ার চেষ্টা করছে বামফ্রন্ট৷ দাপুটে নেতা সুশান্ত ঘোষকে নেতৃত্ব দিয়েছে দল৷ একাধিক মিছিলে মানুষের সমর্থন এবং ভিড় একটা ইতিবাচক আভাস দিচ্ছে আলিমুদ্দিনকে৷