মৃত অর্জুনকে নিয়ে বিজেপি-তৃণমূলে টানাটানি, ময়নাতদন্ত বন্ধের আর্জি হাইকোর্টে

কাশীপুরে রহস্যজনকভাবে মৃত অর্জুন চৌরাসিয়ার দেহ নিয়ে তীব্র জটিলতা। অর্জুনের দেহের ময়াতদন্ত বন্ধ রাখা হোক। হাইকোর্টে আর্জি জানল পরিবার। শুক্রবার সকালে অর্জুনের ঝুলন্ত দেহ ঘিরে…

কাশীপুরে রহস্যজনকভাবে মৃত অর্জুন চৌরাসিয়ার দেহ নিয়ে তীব্র জটিলতা। অর্জুনের দেহের ময়াতদন্ত বন্ধ রাখা হোক। হাইকোর্টে আর্জি জানল পরিবার। শুক্রবার সকালে অর্জুনের ঝুলন্ত দেহ ঘিরে কাশীপুরে ধুন্ধুমার কান্ড।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শহরে পৌঁছানোর আগে দেহ উদ্ধারের জন্য ক্রমাগত বাধা দিচ্ছিল অর্জুন চৌরাসিয়ার পরিবার সহ বিজেপি কর্মীরা। সাড়ে পাঁচ ঘন্টা পর ময়নাতদন্তের জন্য দেহ নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু ময়না তদন্তের জন্য রাজি নয় অর্জুনের পরিবার।অর্জুনের দেহের ময়াতদন্ত বন্ধ রাখা হোক, সেই আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ পরিবার। মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব।

মৃত অর্জুন কে বিজেপি তাদের কর্মী বলে দাবি করেছে। বিতর্ক উস্কে দিয়ে কাশীপুর বেলগাছিয়ার তৃ়ণমূল কংগ্রেস বিধায়ক অতীন ঘোষ বলেছেন, মৃত যুবক তৃণমূলের হয়ে কলকাতা পুরভোটে কাজ করেছিল। এবার আরও বিতর্ক উস্কে দেন তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর কর্মীকে বলি দিয়ে ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে কি না তা তদন্ত করে দেখা হোক।

অর্জুন চৌরাসিয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তৃণমূল বনাম বিজেপির দ্বন্দ্ব। বিজেপি জানিয়েছে রাজ্য সফরকারী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘটনাস্থলে আসবেন। অভিযোগ, তাঁর উপস্থিতিতে এই ঘটনার পারদ চড়াতে চাইছে রাজ্য বিজেপি।

তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন যার মৃত্যুর খবর এসেছে তাঁকে বিজেপির এক বিদ্রোহী নেতার সঙ্গে দেখা গেছে।

ইতিমধ্যেই অর্জুনের মৃত্যুকে ঘিরে রাজনৈতিক জল্পনা বাড়তে শুরু করেছে। তিনি তৃণমূলের সদস্য নাকি বিজেপির এই নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যেই। কারণ, বিজেপির দাবি অমিত শাহের মিছিলের বাইক বাহিনীর দায়িত্ব ছিল অর্জুনের ওপরেই। আবার তৃণমূলের দাবি, পুরভোটে তাঁদের সঙ্গে ছিল অর্জুন।

অর্জুনের পরিবারের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের নজরে ছিল সে। এমনকি নির্বাচনের পর ঘরছাড়া থাকতে হয়েছিল তাঁকে। প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন আইনজীবী সুবীর সান্যাল। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ মামলা গ্রহণ করেছে। 

এদিন আদালতের কাছে আইনজীবী জানান, অর্জুনের মায়ের দাবি মৃত্যুর পর ছেলের দেহ মাটিতে ঝুলে ছিল। এটা আত্মহত্যা হতে পারে না। পুলিশ কেন দ্রুত ময়নাতদন্ত করতে চাইছে? দিল্লির এইমসের চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

তৃণমূল রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, ওই এলাকায় নির্বাচনের পর থেকেই শান্তি বজায় ছিল। সেখানে একটি মৃত্যু হল। এটা আত্মহত্যা? নাকি ব্যক্তিগত হত্যা? তদন্তের আগে কীভাবে বলে দেওয়া সম্ভব হয়? তিনি যে দলেরই হোন, মৃত্যু হলেই রাজনৈতিক মৃত্যু, এই কথাটা আসছে কোথা থেকে?

অর্জুন চৌরাসিয়ার মৃতদেহ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ প্রবল। শুক্রবার সকাল থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির একাধিক কর্মীরা অভিযোগ তোলেন, ঘটনাস্থল থেকে তথ্য লোপাটের। কুণাল ঘোষ বলেছেন, যারা তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলছেন তাঁদের দিকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিজেপির এই নেতৃত্ব ব্যর্থ এবং অপদার্থ। তাঁদের বড় নেতা পশ্চিমবঙ্গে পা রেখেছেন। সেই নেতাকে সামনে রেখে ইস্যু তৈরি করার জন্য বিক্ষুব্ধ শিবিরের কোনও কর্মীকে বলি দিয়ে সেই মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে কি না সেটাও তদন্ত হওয়া দরকার।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা রয়েছে। যদি যান তাহলে একটা জিনিস স্পষ্ট হবে যে বাংলায় কোনও ইস্যু নেই বিজেপি ইস্যু তৈরি করার জন্য বিজেপি কর্মীকে বলি দিয়ে নেতার নাটকের মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে কি না তার তদন্ত হওয়া দরকার।