সুজানা ইব্রাহিম মোহনা, দোহা: রোজই দেখি পারস্য উপসাগরের সূর্যাস্ত। এ দৃশ্য চোখ সওয়া। তবে আজ অদ্ভুত লাগল। লুসাইল স্টেডিয়ামের কোনায় সাগর ও দিগন্ত যেখানে মিশে গেছে বলে ভ্রম হয় সেখানে সূর্য অস্তাচলে। এশিয়ায় সূর্য অস্তাচলে। আর দক্ষিণ আমেরিকায় সূর্য উদয়ের সময়। এটি প্রকৃতির নিয়ম। সবার সময় এবার আলবিদা কাতার বলার।
অগনিত মানুষ বিভিন্ন দেশ থেকে কাতারে এসেছিলেন তারা রবিবার (Qatar WC) বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ দেখে ফিরতে শুরু করবেন নিজ নিজ দেশে। শেষ হবে বিশ্বজনীন মানব জমায়েত।
কত বিতর্ক। কত রঙিন মুহূর্ত। সব নিয়ে আরব দুনিয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপের আসর অনেক সামাজিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। পুরো আরব রক্ষণশীল সমাজে এসেছে আলোড়ন। কাতার সরকার হয়ত এটাই চেয়েছিল। বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রবল উন্মাদনায় পারস্য উপসাগরীয় অন্যান্য দেশগুলিও আলোড়িত। এমনকি গৃহযুদ্ধ কবলিত ইয়েমেন থেকে বিশ্বকাপের জন্য বার্তা এসেছিল।
ধর্মীয় রক্ষণশীল সমাজ বনাম খোলামেলা সমাজের দ্বন্দ্ব নিয়ে চলেছে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠান। কাতার বিশ্বকাপ এই দিক থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে সমাজ বিজ্ঞান গবেষকদের কাছে।
![](https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2022/11/20221109_141932-300x157.jpg)
একটা প্রশ্ন বিশ্বকাপ শুরু থেকেই উঠছিল কাতার সরকার তার ধর্মীয় রীতি নীতি কতটা শিথিল করতে পারে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে কাতারের তরফে মদ্যপানে কড়াকড়ি ও সমকামী বার্তার বিরোধিতা করে কড়া বার্তা দেওয়া হয়। পরে বিশ্বজোড়া প্রবল চাপের মুখে মদ্যপানে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু ইসলামি রীতির কারণে সমকামী প্রচারে ছিল নিষেধাজ্ঞা।
বিশ্বকাপ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়ানুষ্ঠানে সমকামী প্রচার চলে। কাতারে সেটি ধাক্কা খেতেই একাধিক দেশের ফুটবল দল প্রতিবাদ জানায়। মাঠেই হয় প্রতিবাদ। তবে কাতার সরকার এক্ষেত্রে ছিল অনড়।
ইরানের হিজাব বিদ্রোহের রেশ এসে পড়েছিল কাতার বিশ্বকাপের আসরে। ইসলামি দুনিয়ার শিয়া-সুন্নি মতাবলম্বী দ্বন্দ্বের কারণে শিয়াপন্থী ইরান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে কূটনৈতিকভাবে প্রশ্রয় দিয়েছিল সুন্নিপন্থী কাতার সরকার। পুরো আরব জোট দেখেছিল কূটনৈতিক খেলা।
রক্ষণশীল কাতারে আছে পোশাকের কিছু কিছু বিধি। সেই বিধি উড়িয়ে দিয়ে স্টেডিয়ামে ইউরোপিয়ান খোলামেলা পোশাকের ঝলক ছিল। মিমিষ্টি ক্রোয়েশিয়ান ইভানা ছিলেন তীব্র বিতর্কের কেন্দ্রে। আবার কাতারে আসা বিভিন্ন দেশের সমর্থকরা আরব রীতির পোশাকে নিজেদের মুড়েছিলেন এ দৃশ্য দেখা গেছিল।
এখন পুরো দোহা শহর জুড়ে আর্জেন্টিনার পতাকা ঝলসাচ্ছে। এই নীল সাদা পতাকায় সোনালি সূর্যের প্রতীকি ঝলক। ফরাসি পতাকা দেখছি না তেমন।
এই কাতার বিশ্বকাপ ঐতিহাসিক। আফ্রিকার অনবদ্য উত্থান। এশিয়ার দুর্দান্ত খেলা দেখা গেছে এই বিশ্বকাপে।এখানেই বিশ্বফুটবল থেকে অবসরে চলে যাবেন আর্জেন্টিনা তথা বিশ্ব ফুটবলের সমসাময়িক কিংবদন্তি মেসি।
সেমিফাইনাল থেকে ফাইনালে আর্জেন্টিনা ওঠার পর মেসি ঘোষণা করেছেন এই ম্যাচটিই হবে তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে তিনি আর নীল সাদা জার্সি পরে নামবেন না।
এই মেসি ঝলকের মাঝে আলোচিত প্রতিপক্ষ ফ্রান্সের এমবাপ্পে। তিন এই বিশ্বকাপে গোল করার নিরিখে সোনার বুটের দাবিদার। আজ ফাইনালে এমবাপ্পে ও মেসির মধ্যে সোনার বুট দখলের লড়াই।