অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ভারতীয় দলের ধারাবাহিক পারফর্মার শেখ রসিদ

শনিবার অ্যান্টিগাতে যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত ,অনূর্ধ্ব-১৯ বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টে। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং’র সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। ৪৪.৫ ওভারে ১০ উইকেট হারিয়ে থ্রি লায়ন্সদের পুঁজি…

শনিবার অ্যান্টিগাতে যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত ,অনূর্ধ্ব-১৯ বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টে। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং’র সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। ৪৪.৫ ওভারে ১০ উইকেট হারিয়ে থ্রি লায়ন্সদের পুঁজি ১৮৯। ব্যাট হাতে ভারতীয় যুব দলের পারফরম্যান্স বিশেষত ডানহাতি ব্যাটসম্যান সেখ রসিদের ৮৪ বল ফেস করে অর্ধশতরান (৫০) ইনিংস শুধু কাবিলে তারিফ বললেও খাটো করা হবে,বরংঞ্চ স্বপ্নময় দৌড়। 

১৭ বছর ১৩৫ দিন বয়সী সেখ রসিদের এই স্বপ্নময় দৌড়োদৌড়ির মুখে পড়ে রিল লাইফের চিত্রনাট্য ‘ফ্লপ শো’র তকমা পেতে বাধ্য। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক তথা ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলিকে আদর্শ মেনে চলা গুন্টুরবাসী সেখ রসিদ শৈশবে পাড়ায় বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে তার শটের জোরে প্রতিবেশীর জানালার কাচ ভাঙতো। প্রতিবেশীরা প্রায় প্রতিদিনই ছেলেটার বাবার কাছে এসে নালিশ জানাতো। ছেলেটির বাবা প্রতিবেশীদের অভিযোগ শুনে ছেলের ওপর রাগ না করে বরং উৎফুল্ল হতেন। আর এই নালিশের বহরের জেরেই সেখ রসিদকে ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি করে দিলেন তার বাবা। 

রসিদ অন্ধ্রপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাকাডেমীতে যোগ দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হল। সেখ রসিদের পরিবার ছেলের ক্রিকেট কোচিং’র স্বার্থে তল্পিতল্পা গুটিয়ে হায়দরাবাদ চলে আসে। 

এরপর সেখ রসিদের যখন বছর আট বয়স তখন স্থানীয় এক টুর্নামেন্টে দারুন ব্যাটিং পারফরম্যান্সের জেরে তৎকালীন জাতীয় দলের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষণের 

হাত থেকে পুরস্কার তুলে নেয়। ওই শুরু সেখ রসিদের স্বপ্নময় দৌড়ের! ওই মূহুর্ত থেকে ছেলেটার মনে বড় হয়ে ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি পরার সুপ্ত বাসনার অঙ্কুরের জন্ম।

পারফর্ম করার একটা তীব্র তাড়না থেকেই একসময় কৈশোর সেখ রসিদের মনটাকে ঘিরে ধরেছিল একরাশ হতাশা। টানা অনূর্ধ্ব-১৪ এবং অনূর্ধ্ব-১৬ বয়স ভিত্তিক রাজ্য দলের জার্সিতে খারাপ পারফরম্যান্স মানসিক অবসাদের অতল সাগরে ডুবে গিয়ে একসময় ক্রিকেটের কিটস ব্যাগ তুলে রাখতে চেয়েছিল রসিদ। 

কিন্তু ছেলেকে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেখতে বদ্ধপরিকর সেখ রসিদের বাবা সেখ বালিসা ভালি ছেলের মনোবল জুগিয়ে হতাশার কানাগলি থেকে সাফল্যের আলোকিত সরণীতে ফেরালেন। এই সময়টা ছিল সেখ রসিদের পরিবারের কাছেও চ্যালেঞ্জিং, কেননা ছেলের প্র‍্যাকট্রিসের স্বার্থে বেসরকারি ব্যাঙ্ককর্মী সেখ রসিদের বাবা দু দুবার চাকরি ছাড়তেও বাধ্য হন। ওই চ্যালেঞ্জিং মুহুর্তে রসিদের বাবার বন্ধু হায়দরাবাদ নিবাসী চিকিৎসক ইন্দ্রসেন রেড্ডি পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, আর্থিক সহায়তা করে চাকরি হারানো বাবার ছেলেকে নিয়ে স্বপ্নপূরণের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। 

চলতি ICC অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে ছেলেটার নজরকাড়া পারফরম্যান্স ছেলেকে নিয়ে বাবার ক্রিকেটার বানানোর জন্য আত্মত্যাগ, অক্লান্ত পরিশ্রমকে সার্থকতা এনে দিয়েছে, ষোলো আনা।

ব্যক্তিগতভাবে ব্যাটিং টেকনিক, শট মেকিং, ব্যাটিং স্টান্স, ‘ ভি ‘ এর মধ্যে সোজা ব্যাটে খেলা … নিরিখে সেদিনের ওই তেলেগু কিশোর সহ অধিনায়ক সেখ রসিদের ব্যাটিং চলতি টুর্নামেন্টে সকল ভারতীয় ব্যাটাসম্যানদের মধ্যে থেকে সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিক।

ICC অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অর্ধশতরান (৫০) করে আউট। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৯৪,বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৬,প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে ৩১,অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অপরাজিত ৭২। আর ক্যারিবিয়ান বিরুদ্ধে ২৬,দুবাই’তে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩১ নট আউট,শারজাতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৯০ রানে অপরাজিত।ব্যাট হাতে ডানহাতি ব্যাটসম্যান সেখ রসিদ ভারতীয় ক্রিকেটের ‘সম্পদ’, বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ক্রিকেট আকাদেমির দায়িত্বতে থাকা কিংবদন্তি ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষণের ছোঁয়ায় আর রোহিত শর্মার রিহ্যাবিলিটেশন সেশনে কোচিং ক্লাস ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলের স্কোয়াডকে বুস্ট করেছে।