কাতারের (Qatar) প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি বুধবার বলেছেন যে দোহায় হামাসের ওপর ইসরায়েলি হামলা গাজায় জিম্মিদের মুক্তির জন্য সব আশা ধ্বংস করেছে। তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে “বিচারের আওতায় আনার” জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। এই হামলার ফলে গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনায় গুরুতর প্রভাব পড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রী আল থানি সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমি মনে করি নেতানিয়াহু গতকাল যা করেছেন, তিনি সেই জিম্মিদের জন্য সব আশা ধ্বংস করেছেন,”। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে এই হামলা কেবল জিম্মিদের পরিবারের আশাই কেড়ে নেয়নি, বরং কাতারের (Qatar ) মধ্যস্থতার প্রচেষ্টাকেও জটিল করে তুলেছে।
কাতারের (Qatar) ভূমিকা ও হামাসের উপস্থিতি
প্রায় দুই বছর ধরে চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে কাতার (Qatar) একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে আসছে। মিশরের সঙ্গে মিলে কাতার (Qatar) গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির জন্য আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী আল থানি দোহায় হামাসের উপস্থিতিকে “উন্মুক্ত” বলে বর্ণনা করেছেন, উল্লেখ করে যে হামাসের রাজনৈতিক নেতারা কাতারে (Qatar) অবস্থান করে আলোচনায় অংশ নিয়ে থাকেন। তবে, তিনি স্পষ্ট করেছেন যে এই হামলা কাতারের (Qatar) মধ্যস্থতার ভূমিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
“এই ধরনের হামলা কেবল আলোচনার প্রক্রিয়াকেই ব্যাহত করে না, বরং পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে,” তিনি বলেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার সকালে, যখন ইসরায়েল দোহায় হামাস কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায়, তখন তিনি গাজায় আটক জিম্মিদের এক পরিবারের সদস্যের সাথে সাক্ষাৎ করছিলেন।
জিম্মি পরিবারের হতাশা
প্রধানমন্ত্রী আল থানি জানান, জিম্মি পরিবারগুলো কাতারের (Qatar) মধ্যস্থতার মাধ্যমে তাদের প্রিয়জনদের মুক্তির আশা করছিল। কিন্তু এই হামলার পর তাদের “আর কোনো আশা নেই।” তিনি বলেন, “এই পরিবারগুলো ইতিমধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই হামলা তাদের শেষ আশার আলোটুকুও কেড়ে নিয়েছে।”
গাজায় বর্তমানে শতাধিক জিম্মি আটক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যাদের মধ্যে ইসরায়েলি নাগরিক ছাড়াও অন্যান্য দেশের নাগরিকও রয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার পর এই জিম্মিরা আটক হয়েছিলেন। কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় এর আগে কিছু জিম্মি মুক্তি পেলেও, সাম্প্রতিক এই হামলা আলোচনার পথে নতুন বাধা সৃষ্টি করেছে।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিচারের দাবি
প্রধানমন্ত্রী আল থানি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) কর্তৃক নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অভিযোগের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। আইসিসি ইতিমধ্যে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের সময় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু ও অন্যান্য ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। আল থানি বলেন, “নেতানিয়াহুকে তার কর্মকাণ্ডের জন্য বিচারের আওতায় আনা দরকার। এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য অপরিহার্য।”
তিনি আরও জানান যে এই হামলা কেবল জিম্মি ইস্যুতেই প্রভাব ফেলেনি, বরং কাতারের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ককেও জটিল করে তুলেছে। কাতার বরাবরই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে চেয়েছে, কিন্তু এই হামলা তাদের এই প্রচেষ্টাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের এই হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজায় সহিংসতা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যিনি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র, এখনও এই হামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই হামলাকে “অনুপাতহীন” বলে সমালোচনা করেছে এবং জিম্মি মুক্তির জন্য কূটনৈতিক আলোচনার ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে ইসরায়েলের এই হামলা গাজায় শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, এই সংঘাতের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং জিম্মিদের মুক্তির জন্য কূটনৈতিক পথে ফিরে আসতে পদক্ষেপ নেওয়া হোক। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে, এবং আগামী দিনগুলোতে এর প্রভাব আরও স্পষ্ট হবে।