পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার জেরে ক্রীড়াক্ষেত্রে বড় সিদ্ধান্ত মোদী সরকারের

কাশ্মীরের (Kashmir) পহেলগাঁওয়ে (Pahalgam attack) সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক জঙ্গি হানার রেশ কেবল নিরাপত্তা বা কূটনৈতিক পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকল না। কারণ এর তীব্র প্রতিক্রিয়া পড়ল…

Nadeem Instagram account blocked in India due to Kashmir Pahalgam attack

কাশ্মীরের (Kashmir) পহেলগাঁওয়ে (Pahalgam attack) সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক জঙ্গি হানার রেশ কেবল নিরাপত্তা বা কূটনৈতিক পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকল না। কারণ এর তীব্র প্রতিক্রিয়া পড়ল ক্রীড়াক্ষেত্র ও সমাজমাধ্যমেও। এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৬ জন নিরীহ ভারতীয় পর্যটক। গোটা দেশ যখন শোক ও ক্ষোভে উত্তাল, ঠিক সেই মুহূর্তে ভারত (India) সরকার কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।

এই ডিজিটাল কূটনীতির অংশ হিসেবে প্রথমে পাকিস্তানের একাধিক ইউটিউব চ্যানেল ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়। অভিযোগ ছিল, এই চ্যানেলগুলি ভারতের সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উস্কানিমূলক তথ্য প্রচার করছিল। এই তালিকায় শোয়েব আখতার, বাসিত আলি এবং শহিদ আফ্রিদির ইউটিউব চ্যানেলও পড়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত তাঁদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ভারতে দেখা যাচ্ছে।

   

বঙ্গকন্যার হাত ধরে পহেলগাঁওয়ে ‘জঙ্গি হামলার’ বদলা ভারতের!

তবে এবার সেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় জুড়ল এক আন্তর্জাতিক ক্রীড়াবিদের নাম—পাকিস্তানের (Pakistan) জ্যাভলিন থ্রোয়ার এবং অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী আর্শাদ নাদিম (Arshad Nadeem)। তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট (Instagram Account) ভারতে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। ভারত থেকে কেউ চেষ্টা করলেই দেখতে পাচ্ছেন বার্তা—“এই অ্যাকাউন্ট ভারতে উপলব্ধ নয়। এটি একটি আইনি অনুরোধের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, নাদিম শুধুমাত্র ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারতীয়দের পরিচিত নন, তিনি ভারতের জ্যাভলিন তারকা নীরজ চোপড়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং প্রতিদ্বন্দ্বীও বটে। টোকিও অলিম্পিক্সে যেখানে নীরজ সোনা জয় করেন, সেখানে প্যারিস অলিম্পিক্সে সেই পদক ছিনিয়ে নেন নাদিম। তবু তাঁদের সম্পর্ক বরাবরই বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। নীরজ নিজে একটি প্রতিযোগিতা—‘এনসি ক্লাসিক’—আয়োজন করেন এবং নাদিমকে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পরে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে।

এই আমন্ত্রণ নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। অনেকেই নীরজের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এমনকি তাঁর পরিবারকেও হেনস্থা করা হয়। এই ঘটনার জবাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় নীরজ একটি আবেগঘন পোস্ট করে লেখেন, “আমি একজন ক্রীড়াবিদ হিসাবে বিশ্বের সেরাদের ভারতে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। পহেলগাঁও কাণ্ডের আগেই আমন্ত্রণ গিয়েছিল। এরপর পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, আরশাদের অংশগ্রহণের প্রশ্নই ওঠে না।”

নীরজ আরও বলেন, “আমি কম কথা বলি, তাই বলে ভুল দেখলে নিশ্চুপ থাকব না। দেশের স্বার্থ এবং পরিবারের সম্মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আমি অবশ্যই মুখ খুলব।”

Advertisements

রাজস্থান ম্যাচের পূর্বে বড় ধাক্কা মুম্বই শিবিরে! মাঠের বাইরে ‘চায়নাম্যান স্পিনার’

এই ঘটনার পরেই কেন্দ্র সরকার আরও কড়া অবস্থান নেয়। পাকিস্তানি সেলিব্রিটি মাহিরা খান ও আলি জাফরের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বর্তমান তারকা খেলোয়াড়, যেমন বাবর আজম, মহম্মদ রিজওয়ান এবং শাহিন আফ্রিদির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট এখনও চালু রয়েছে।

এই সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বার্তা স্পষ্ট—জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের প্রতিটি দিকেই পুনর্মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। সমাজমাধ্যমের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মেও সেই প্রভাব পড়ছে। ক্রীড়াবিদ হোক বা সেলিব্রিটি, কেউই থাকছেন না এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে।

এই ঘটনাগুলি একদিকে যেমন জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে সরকারের কড়া পদক্ষেপ তুলে ধরছে, অন্যদিকে একটি বড় প্রশ্নও তুলে দিচ্ছে—ক্রীড়াক্ষেত্র কি আদৌ রাজনীতি থেকে আলাদা রাখা যায়? যখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত, তখন ক্রীড়াবিদদের উপরও চাপ এসে পড়ে।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে পরিষ্কার, পহেলগাঁও হামলার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে চলেছে। খেলাধুলা এবং সংস্কৃতির মঞ্চেও ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন এখন স্পষ্ট। ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক কোন পথে এগোয়, তা সময়ই বলবে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News