২০২৫ সালের আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের আগে এক ঐতিহাসিক উদযাপনে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC) সাতজন কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে আইসিসি হল অফ ফেমে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ৯ জুন এই ঘোষণার মাধ্যমে পাঁচজন পুরুষ এবং দুজন মহিলা ক্রিকেটারকে সম্মানিত করা হয়েছে, যাঁরা ক্রিকেটের ইতিহাসে অমর কীর্তি রেখেছেন। এই তালিকায় রয়েছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)। যিনি ভারতকে তিনটি আইসিসি শিরোপা জিতিয়েছেন। ধোনি ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু হেইডেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলার মতো তারকারা এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
আইসিসি হল অফ ফেম কী?
আইসিসি হল অফ ফেম ক্রিকেট জগতের সর্বোচ্চ সম্মানগুলির একটি, যা ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রভাবশালী খেলোয়াড়দের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়। ২০০৯ সালের ২ জানুয়ারি ফেডারেশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন (FICA)-এর সহযোগিতায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি এমন ক্রিকেটারদের উদযাপন করে যাঁরা বিভিন্ন প্রজন্ম ধরে খেলাটিকে গড়ে তুলেছেন।
যোগ্যতার মানদণ্ড
হল অফ ফেমে অন্তর্ভুক্তির জন্য খেলোয়াড়দের নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। ব্যাটারদের জন্য সাধারণত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কমপক্ষে ৮,০০০ রান, ২০টি সেঞ্চুরি বা ৫০-এর বেশি গড় থাকতে হয়। বোলারদের জন্য টেস্ট বা ওডিআই ফরম্যাটে ন্যূনতম ২০০ উইকেট প্রয়োজন। এছাড়া, খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পাঁচ বছর পরই তারা এই সম্মানের জন্য বিবেচিত হন।
ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে হল অফ ফেমে
ভারতের বেশ কয়েকজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইতিমধ্যে এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলে, সুনীল গাভাসকর, কপিল দেব, বীরেন্দ্র সেহওয়াগ, বিনু মানকদ, ডায়ানা এডুলজি এবং বিষাণ সিং বেদী। উল্লেখযোগ্যভাবে, সচিন তেন্ডুলকর ২০১৩ সালের নভেম্বরে অবসর নিয়েছিলেন এবং ২০১৯ সালের জুলাইয়ে তাঁকে হল অফ ফেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা পাঁচ বছরের নিয়মের প্রয়োগ দেখায়। ধোনি হলেন ১১তম ভারতীয় ক্রিকেটার যিনি এই সম্মান পেয়েছেন।
ধোনির ক্রিকেট যাত্রা
মহেন্দ্র সিং ধোনি ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক করেন। তাঁর প্রথম ওডিআই ম্যাচে তিনি শূন্য রানে আউট হন, কিন্তু এটি তাঁর উত্থানকে থামাতে পারেনি। ২০০৫ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশাখাপত্তনমে ওডিআই ম্যাচে তিনি ১২৩ বলে ১৪৮ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন।
২০০৭ সালে তাঁকে তরুণ ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক করা হয়, যেখানে সচিন, সৌরভ গাঙ্গুলি বা রাহুল দ্রাবিড়ের মতো তারকারা ছিলেন না। তবুও ধোনি অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়ে ভারতকে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় এনে দেন।
টেস্ট ক্রিকেটেও ধোনির অবদান কম নয়। তাঁর নেতৃত্বে ভারত ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান অর্জন করে। ব্যাটার হিসেবে তিনি টেস্ট ক্রিকেটে নিজের শৈলী প্রতিষ্ঠা করেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফয়সালাবাদে তাঁর পঞ্চম টেস্টে ১৪৮ রান এবং ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ে ক্যারিয়ার-সেরা ২২৪ রানের ইনিংস এর প্রমাণ।
ওডিআই ফরম্যাটে ধোনির প্রভাব ছিল অতুলনীয়। ২০১১ সালে তিনি ভারতকে ২৮ বছর পর ওডিআই বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ এনে দেন। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ফাইনালে মুম্বাইয়ের ওয়াঙ্খেড়ে স্টেডিয়ামে তাঁর বিখ্যাত ছক্কা দিয়ে ম্যাচ শেষ করার মুহূর্ত ক্রিকেট ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। ২০১৩ সালে তিনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে তিনটি প্রধান আইসিসি শিরোপা জয়ের বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেন।
ধোনি ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। এক বছর পর তিনি ইনস্টাগ্রামে অবসরের ঘোষণা দেন। তবে তিনি এখনও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (IPL 2025) চেন্নাই সুপার কিংসের খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন।