প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ‘বক্সিং ডে’ টেস্টে বড় রানের ব্যবধানে জয় পেল ভারত

Sports desk: তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে, সেঞ্চুরিয়নে প্রথম টেস্টে ১১৩ রানে জয় পেল ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। টসে জিতে অধিনায়ক বিরাট কোহলি ব্যাটিং’র সিদ্ধান্ত নেয়,…

India won against South Africa

short-samachar

Sports desk: তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে, সেঞ্চুরিয়নে প্রথম টেস্টে ১১৩ রানে জয় পেল ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। টসে জিতে অধিনায়ক বিরাট কোহলি ব্যাটিং’র সিদ্ধান্ত নেয়, সুপারস্পোর্টস পার্কের পিচে ঘাস এবং ভেজা অর্থাৎ স্পঞ্জি ভাব থাকায়। প্রথম দিন খেলা হলেও দ্বিতীয় দিন বৃষ্টির জন্য খেলা ভেস্তে যায়।

   

ভারতের প্রথম ইনিংসে কেএল রাহুল দুরন্ত শতরান করে সকলের নজর কেড়ে নেয়, ‘মিস্টার সেঞ্চুরিয়ন’ নামে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব রাহুলকে এই নামে ডাকতে শুরু করে ১২৩ রানের নান্দনিক ইনিংসের সুবাদে। মায়াঙ্ক অগ্রবালের ৬০ রান এবং অধিনায়ক কোহলি ৯৪ বল ফেস করে ৩৫ রানে আউট হওয়া ঘিরে চর্চ্চা কম হয়নি। প্রথম ইনিংসে অজিঙ্কা রাহানে মাত্র দুই রানের জন্য নিজের অর্ধশতরান মিস করে ৪৮ রানে আউট হয়ে। ভারতের প্রথম ইনিংসে লুঙ্গি এনগিদি বল হাতে ঝলসে ওঠে এবং ৭১ রানে ৬ উইকেট তুলে নেয়।রাবাদা তিন এবং জ্যানসন এক উইকেট পায়। ভারত ৩২৭ রানে অল আউট হয়ে যায়।

জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় পেস বোলার মহম্মদ সামির অভিঞ্জতার মুখে পড়ে বেসামাল হয়ে পড়ে। সামি বল হাতে ৫ উইকেট তুলে নেয় প্রোটিয়াদের ৪৪ রান দিয়ে।

India won against South Africa

অনভিজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেই ‘অশনিসংকেত’ দিয়ে রেখেছিলেন প্রাক্তন জোরে বোলার মাখায়া এনতিনি এবং কিংবদন্তী প্রাক্তন পেস বোলার অ্যালান ডোনাল্ড। দুই প্রাক্তনী দক্ষিণ আফ্রিকান পেস বোলারের মোট কথা ছিল, ভারতীয় বোলিং লাইন আপ অভিঞ্জতায় ঠাসা এবং ফলে ব্যাট বলের লড়াই দেখতে মুখিয়ে রয়েছেন তারা। হলও তাইই। সামি তুললেন ৫ উইকেট এবং বুমরাহ এবং শার্দূল ঠাকুর ২, সিরাজ এক উইকেট। প্রোটিয়ারা ১৯৭ রানে অল আউট প্রথম ইনিংসে।

প্রথম ইনিংসে বাভুমা ৫২,ডি কক ৩৪, রাবাদা ২৫ বলার মতো রান করে।দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম সাড়ির ব্যাটসম্যানরা সামি,বুমরাহ,সিরাজদের বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে এটে উঠতে পারেনি।

দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ১৭৪ রানে অল আউট হয়। দ্রাবিড়ীয় ‘মন্ত্র’ মুখ থুবড়ে পড়ে শার্দূল ঠাকুরকে ফাস্ট ডাউনে ‘সারপ্রাইজ অ্যাটাকা’র হিসেবে প্রোটিয়া বোলিং লাইন আপের বিরুদ্ধে। কেননা ভারতের প্রথম ইনিংসে চেতেশ্বর পূজারা লুঙ্গি এনগিদির বলে রানের খাতা না খুলেই প্যাভিলিয়ন ফিরে আসেন।তাই অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে হেডকোচ রাহুল দ্রাবিড় এবং অধিনায়ক বিরাট কোহলি শার্দূলকে ব্যাটিং অর্ডারে ওপরে তুলে আনতে স্ট্র‍্যাটেজি নিলেও তা কাজে আসেনি।

অধিনায়ক কোহলির ব্যাট করতে নেমে মার্কো জ্যানসনের আউট সুইং বলকে শরীর থেকে দূরে থেকে, কোনও ফুটওয়ার্ক ছাড়া আউট অফ স্টাম্প থেকে খোঁচা মারা জ্যাকসনের ‘নিরীহ’ আউট সুইংকে উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসে বন্দী বোলার জ্যাকসনের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ‘ফিচকি হাসি’ আর গোটা প্রোটিয়া শিবিরের উল্লাস ব্যক্তিগত ১৮ রানে বিরাট আউটে সামাজিক মাধ্যমে একের পর এক ট্রোলিং’র শিকার ক্যাপ্টেন কোহলি।

ড্রেসিংরুমে চুপসে যাওয়া মুখে টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন কোহলি ‘বিরাট মুখ’ যন্ত্রণায় কাতরানো এবং অসহায়তার শরিরী ভাষা (বডি ল্যাঙ্গুয়েজ) ভারতের ক্রিকেট ভক্তদের আবেগকে ঘৃণা আর রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে টুইটারে ট্রোলিং’র পথে ‘বিরাট আউট কান্ডে’।

দ্বিতীয় ইনিংসে রাহানে ২০ আর ঋষভ পহ্নের ঝড়ো ৩৪ বলে ৩৪ রান এবং অশ্বিনের ব্যাট হাতে কামাল করে দেওয়া টাইমিং মহার্ঘ্য ১৪ রান ভারতকে লড়াইতে ফিরিয়ে আনে, বিরাট ‘বিভ্রাটে’র পরে। বল হাতে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে রাবাদা ও জ্যানসনের ৪ উইকেট এবং এনগিদির দুই উইকেট চতুর্থ দিনের টেস্টকে জমিয়ে তোলে, সেঞ্চুরিয়নে।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রোটিয়ারা দ্বিতীয় ইনিংসে বুমরাহ,সামি, সিরাজ এবং অশ্বিনের ঘূর্ণির বাঁকে পড়ে ল্যাজেগোবরে হয়ে ১৯১ রানে অল আউট হতেই ভারত প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়নে ১১৩ রানের বড় ব্যবধানে জয়লাভ করে।

প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে মহম্মদ সামির তিন উইকেট আর প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট মোট ৮ উইকেট দুরন্ত পারফরম্যান্স। ৫ উইকেট নিয়ে সামি ২০০ টেস্ট উইকেট শিকার লাল বলের ফর্ম্যাটে এমন কৃতিত্ব গড়ার নজিরে পরিবারের অবদানকে কুর্নিস জানাতে ভোলে নি ‘বাংলার সুলতান’ মহম্মদ সামি।

দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থ দিনের শেষ বলে জসপ্রীত বুমরাহের ইয়র্কার ডেলিভারিতে কেসব মহারাজের স্টাম্প ছিটকে পড়া আর পঞ্চম দিনে ভারতের জয়ের ‘পথের কাটা’ প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগার ৭৭ রানে এলবিডব্লু’র শিকার বুমরাহের ডেলিভারিতে টিম বিরাটকে স্বস্তি শুধু এনেই দেয়নি, সঙ্গে সুপারস্পোর্টস পার্কে চলতি সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ জয়ের দোড়গোড়ায় প্রায় পৌছে দেয়।

দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক এলগার ‘কাটা’ উপড়ে ফেলে(আউট করে) চতুর্থ দিনে চোট পাওয়া বুমরাহ বল হাতে ক্যারিশমা গোটা ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সকে চরম শিখরে নিয়ে যায়, যেখানে টিম ইন্ডিয়া শুধুই ক্ষুধার্ত আফ্রিকা রাজা সিংহের হুঙ্কার ছুঁড়ে দেয় প্রোটিয়া টেল এন্ডারদের বিরুদ্ধে।

টেম্বা বাভুমা শেষ পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকে অপরাজিত ৩৫ রান করে, ৮০ বল ফেস করে।ডি ককের ২১ এবং শেষ মুহুর্তে মার্কো জ্যানসন,কাগিসো রাবাদা এবং লুঙ্গি এনিগিদির যাওয়া আর আসা ভারতের জয়কে নিশ্চিত করে তোলে।

<

p style=”text-align: justify;”>পঞ্চম দিনে খেলার শেষ শেষ মুহুর্তে ৬৬.৫ ওভারে সামির বলে মার্কো জ্যানসনের ক্যাচ পহ্নের গ্লাভসে ধরা পড়ে, পরের ওভারে পঞ্চম ডেলিভারিতে রাবাদা অশ্বিনের বলে ক্যাচ তুলে সামির হাতে বন্দি আর ৬৭.৬ ওভারে অর্থাৎ পরের বলেই এনগিদি অশ্বিনের বলে পূজারার হাতে ক্যাচ দিতেই, সেঞ্চুরিয়নে প্রথম টেস্ট ভারত পকেটে পুড়ে ফেলে।