অলিম্পিক আয়োজনের লক্ষ্যে ২০৩০ কমনওয়েলথ গেমসের দরপত্র জমা ভারতের

ভারত ২০৩৬ সালে অলিম্পিক গেমস (Olympics 2036) আয়োজনের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ সূত্র পিটিআই-কে…

2030 Commonwealth Games

ভারত ২০৩৬ সালে অলিম্পিক গেমস (Olympics 2036) আয়োজনের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ সূত্র পিটিআই-কে জানিয়েছে, ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ২০৩০ সালের কমনওয়েলথ গেমস (Commonwealth Games) আহমেদাবাদে আয়োজনের জন্য দরপত্র জমা দিয়েছে। এই পদক্ষেপটি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা প্রস্তুতির ফলাফল।

কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনের জন্য ‘এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট’ (ইওআই) জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩১ মার্চ। ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থা (আইওএ) কয়েক দিন আগে এই দরপত্রটি পাঠিয়েছে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, “হ্যাঁ, এটি সত্য যে ভারত ২০৩০ কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনের জন্য দরপত্র জমা দিয়েছে। এই প্রস্তাবটি আইওএ এবং গুজরাত রাজ্যের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া হয়েছে।” এই পদক্ষেপ ভারতের ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশ্বমঞ্চে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টার একটি বড় অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

   

আহমেদাবাদে ২০৩০ সিডব্লিউজি: ভারতের পরিকল্পনা
ভারত যদি ২০৩০ কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনের দায়িত্ব পায়, তবে গুজরাতের আহমেদাবাদ শহর এই আসরের কেন্দ্র হবে। আহমেদাবাদকে ২০৩৬ সালের অলিম্পিক গেমস আয়োজনের জন্যও শীর্ষ দাবিদার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর আগে ভারত ২০১০ সালে নতুন দিল্লিতে কমনওয়েলথ গেমস সফলভাবে আয়োজন করেছিল। এবার আহমেদাবাদে এই গেমস আয়োজনের মাধ্যমে ভারত তার ক্রীড়া অবকাঠামোর উন্নতি এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের সক্ষমতা প্রমাণের আরেকটি সুযোগ পেতে চায়।

কমনওয়েলথ গেমস ফেডারেশন (সিজিএফ), যারা এখন নিজেদের ‘কমনওয়েলথ স্পোর্ট’ হিসেবে নতুনভাবে পরিচিত করেছে, এই দরপত্রগুলোর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে। সিজিএফ-এর জেনারেল অ্যাসেম্বলি চূড়ান্তভাবে আয়োজক দেশ নির্বাচন করবে। ভারতের এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে, এটি দেশের ক্রীড়া ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক হয়ে উঠবে।

গুজরাতের অবকাঠামো প্রস্তুতি
গুজরাত সরকার আহমেদাবাদকে একটি বিশ্বমানের ক্রীড়া কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক পরিকল্পনা করেছে। নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম, যা বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত, এই গেমসের জন্য একটি প্রধান ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এছাড়াও, নারানপুরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স এই মার্চের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এসভিপি স্পোর্টস এনক্লেভ এবং কারাইয়ের সুবিধাগুলো ২০২৮ সালের মধ্যে প্রস্তুত হবে। এই অবকাঠামোগুলো কমনওয়েলথ গেমসের পাশাপাশি অলিম্পিকের মতো বড় আসর আয়োজনের জন্য উপযুক্ত।

সিজিএফ প্রেসিডেন্ট ক্রিস জেনকিন্স এবং প্রধান নির্বাহী কেটি স্যাডলিয়ার সম্প্রতি ভারত সফরে এসে আহমেদাবাদের সম্ভাব্য ভেন্যুগুলো পরিদর্শন করেছেন। একজন কর্মকর্তা জানান, “তারা এখানকার প্রস্তুতি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। এই প্রস্তুতি অলিম্পিক স্কেলে করা হচ্ছে, তাই ভেন্যু নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই।” গুজরাতের লক্ষ্য হলো আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে এই শহরে একাধিক ভেন্যু প্রস্তুত করা, যা ক্রীড়া সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

ভারতের ক্রীড়া উচ্চাকাঙ্ক্ষা
২০৩০ কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনের জন্য ভারতের এই দরপত্র ২০৩৬ অলিম্পিকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০১০ সালে দিল্লিতে কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনের অভিজ্ঞতা ভারতের রয়েছে। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভারত এখন বৃহত্তর আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্টের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মান্ডবিয়া সম্প্রতি বলেছেন, “ভারত কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনে আগ্রহী। আমরা বিশ্ব ক্রীড়া মঞ্চে আমাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাই।”

সিজিএফ-এর জন্য ভারতের এই আগ্রহ একটি বড় সুযোগ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনের জন্য আগ্রহী দেশের সংখ্যা কমে গেছে। ২০২৬ সালের গেমসের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্য প্রথমে আগ্রহ দেখালেও খরচের কারণে সরে দাঁড়ায়। পরে গ্লাসগো এই দায়িত্ব নেয়, তবে সেখানে মাত্র ১০টি খেলার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা রাখা হয়েছে। ভারতের মতো একটি বড় দেশের আগ্রহ এই ইভেন্টের গুরুত্ব ও আকর্ষণ বাড়াতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
আহমেদাবাদ ছাড়াও ভুবনেশ্বরকে বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। তবে আহমেদাবাদের অবকাঠামো এবং গুজরাত সরকারের প্রস্তুতি এটিকে প্রধান দাবিদার করে তুলেছে। এই গেমস আয়োজিত হলে ভারত ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নতির পাশাপাশি পর্যটন ও অর্থনীতির ক্ষেত্রেও লাভবান হবে।
ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আশাবাদী যে আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে। এটি ভারতের ক্রীড়া ভবিষ্যৎ গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।” আইওএ এবং গুজরাত সরকার এখন সিজিএফ-এর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

ভারতের ২০৩০ কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনের দরপত্র দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। আহমেদাবাদে এই গেমস আয়োজিত হলে, এটি ২০৩৬ অলিম্পিকের জন্য ভারতের প্রস্তুতির একটি বড় পরীক্ষা হবে। ভারতের ক্রীড়া অবকাঠামো, সংগঠন ক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা এই দরপত্রের মাধ্যমে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।