ভারতীয় টেস্ট (Indian cricket) দলের জন্য আগামী কয়েক বছর গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভবত চ্যালেঞ্জিং সময় হতে চলেছে। সামনের বছর জুন মাসে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (ডব্লিউটিসি) ফাইনালে যোগ্যতা অর্জনের লড়াই চললেও, সামনের দুই বছরের টেস্ট সাইকেলে বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং অশ্বিনের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নিশ্চিত নয়। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের বোলিং বিভাগে একটি সম্ভাব্য সংকট (India bowling crisis) দেখা দিচ্ছে এবং এই সংকট সামলানো ভারতের ভবিষ্যত সাফল্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
সিনিয়র খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ভারতের সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে বেশ কয়েকজনের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফর্ম এবং ফিটনেসের ওপর প্রভাব পড়ছে। রোহিত শর্মা, অশ্বিন, জাদেজা এবং বিরাট কোহলির মতো খেলোয়াড়দের বয়স আগামী দুই বছরের মধ্যে ৩৯ থেকে ৪১-এর মধ্যে পৌঁছাবে। এর ফলে তাদের ফিটনেস এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়তে পারে, বিশেষত টেস্ট ক্রিকেটের মত কঠোর ফরম্যাটে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিজ্ঞ পেসার মোহাম্মদ শামি তার ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে আছেন এবং পরবর্তী বোলারদের মধ্যে এমন কেউ নেই যিনি তার এবং বুমরাহের মতো ধারাবাহিক পারফর্ম করতে পারেন। আকাশ দীপ এবং মোহাম্মদ সিরাজ পেস বোলিং বিভাগে একটি সমৃদ্ধ প্রতিভা হিসাবে উদয় হলেও শামির মত সেই ভীতিকর প্রভাব তাদের থেকে মেলেনি।
বোলিংয়ের ভবিষ্যৎ সংকট
ভারতীয় দলে তরুণ পেস বোলারদের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা তাদের স্থায়িত্ব এবং ধারাবাহিকতা। উদাহরণস্বরূপ, নবদীপ সাইনি এবং উমরান মালিকের গতি কমে গিয়েছে এবং তাদের সেরা সময় মনে হচ্ছে পেরিয়ে গেছে। খলিল আহমেদ এবং আবেশ খান তেমনই কয়েকজন দ্রুত বোলার যারা গতি এবং স্কিল সম্পন্ন হলেও তাদের ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। এদের মধ্যে কেউই শামি বা বুমরাহের মত ধারাবাহিক এবং আক্রমণাত্মক বোলিং করতে পারেন না।
এছাড়াও, বোলিং অলরাউন্ডার বিভাগে একটি বিশাল শূন্যতা দেখা যাচ্ছে, যা একসময়ে হার্দিক পান্ডিয়ার দ্বারা পূর্ণ হয়েছিল। পান্ডিয়া তার ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ফোকাস করা এবং চোট সমস্যার কারণে টেস্ট ক্রিকেটে কম সক্রিয় হয়ে গিয়েছেন, যা ভারতীয় দলের জন্য একটি বড় অসুবিধা।
ব্যাটিংয়ে নতুন প্রতিভার সম্ভাবনা
যশস্বী জয়সওয়াল সম্প্রতি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একটি ওপেনার হিসেবে এবং রোহিতের অবর্তমানে এই স্থান দখল করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে অভিমন্যু ঈশ্বরন এবং সাই সুদর্শনকে টেস্ট দলে আনা যেতে পারে। ঈশ্বরন তার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রায় ৫০-এর কাছাকাছি গড়ে স্কোর করে থাকেন, কিন্তু বড় ম্যাচগুলিতে তার কম পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সাই সুদর্শনও প্রায় সময় বড় রানের জন্য পরিচিত, যা তাকে একটি শক্তিশালী ওপেনিং ব্যাটসম্যান করে তুলতে পারে।
ভারতের জন্য কোহলির পরবর্তী স্থান পূরণ করা আরও চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। বর্তমান দলের কাছে যথেষ্ট ভালো বিকল্প থাকা সত্ত্বেও অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ একজন খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এবং সমাধান
ভারতের ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী বোলিং লাইনআপ প্রস্তুত করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণ প্রতিভা এবং নতুন বোলারদের আরও সময় এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। আইপিএল এবং অন্যান্য ঘরোয়া লীগগুলি তরুণদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হলেও, দীর্ঘমেয়াদী টেস্ট ফরম্যাটের জন্য এটি যথেষ্ট নয়। ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের উচিত বোলিং অলরাউন্ডার এবং অন্যান্য ফাস্ট বোলারদের মধ্যে ধারাবাহিকতা বাড়ানোর উপর নজর দেওয়া।
এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে দক্ষ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করার জন্য আরও প্রচেষ্টা করতে হবে।