Afghan Women’s Team: তালিবান-ধর্মীয় মৌলবাদকে লাথি মেরে গোল করছেন আফগান নারীরা

কাবুলে দাঁত কিড়মিড় করছে তালিবান শাসকরা। তারা দেখছে হাত গলে পালিয়ে যাওয়া নারীরা এখন সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় ফুটবল (Afghan Women’s Team) নিয়ে দৌড়চ্ছে। ঘরের থাকলে নির্ঘাত…

কাবুলে দাঁত কিড়মিড় করছে তালিবান শাসকরা। তারা দেখছে হাত গলে পালিয়ে যাওয়া নারীরা এখন সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় ফুটবল (Afghan Women’s Team) নিয়ে দৌড়চ্ছে। ঘরের থাকলে নির্ঘাত মাথা কাটা যেত। আপাতত টিম ফাতিমা বেঁচেছে। সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদকে লাথি মেরে তারা অনুশীলনে ব্যস্ত। দরকার ফিফা অনুমতি।

মুহূর্তটা কোনওদিনও ভোলার নয়। কাবুল বিমান বন্দর থেকে কাতারে কাতারে আফগানি দেশ ছেড়ে বিমানে ঝুলতে ঝুলতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আমেরিকা নিয়ন্ত্রণ উঠিয়ে নিতেই তালিবান জঙ্গিদের সরকার দ্বিতীয়বার তৈরি হয়েছিল আফগানিস্তানে। প্রখমবার তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় রুশ ফৌজ হটতেই এসেছিল তালিবান। তারা মাথা কাটত। সেই দৃশ্য কল্পনা করে হাজার হাজার আফগানির মতো ফাতিমা ও অন্যান্য আফগান নারী ফুটবলাররা অস্ট্রেলিয়ায় শরণার্থী হয়ে চলে আসেন। এখন তারা টিভিতে দেখেন নিজ দেশের তালিবান শাসনে মেয়েদের করুণ পরিণতি।

দ্বিতীয় পরিবার এখানে থেকেই গড়ব, অস্ট্রেলিয়ায় থেকে হুঙ্কার দিচ্ছেন আফগান নারী ফুটবলাররা। ২০২১ সালে তালিবান জঙ্গিরা ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ছাড়তে বাধ্য হন নারী ফুটবলাররা ৷ আশ্রয় নেন অস্ট্রেলিয়ায়। কেমন আছেন তারা?

২১-বছরের ফাতিমা ইউসুফি এখন যিনি গোলকিপার এবং আফগানিস্তান দলের ক্যাপ্টেন। তালিবান (Taliban) ক্ষমতায় আসার পর ফাতিমা ও তার দল দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। তিনি জানান, “আমরা খবর পাচ্ছিলাম যে আজ এই খেলোয়াড় খুন হয়েছেন, এই সাংবাদিক আজ মারা গেছেন। আমি নিজেকে বাঁচানোর কথা ভাবতাম। ভাবতাম যে বেঁচে না থাকলে কীভাবে কিছু করতে পারবো?” এখন অস্ট্রেলিয়ায় নিরাপদ ইউসুফি ও তার দল। নিরাপদ হলেও এই দেশ যে তাদের কাছে একেবারে নতুন ‘বিদেশ।

এক সংবাদমাধ্যমকে ইউসুফি আরও জানান,”ফাইন্ডিং নিমো ছবি দেখে আমি শুধু সিডনির অপেরা হাউসের কথাই জানতাম। কিন্তু আমাদের জন্য এসব গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমাদের জীবন বাঁচানো।“ দেশের সঙ্গে সঙ্গে নিজের পরিবারের সবাইকে ছেড়ে আসতে হয় তাদের। এই বিষয়ে ইউসুফি বলেন, “আমরা যখন বিমানবন্দরে যাই, তখন তালিবান আমাদের পরিবার থেকে আলাদা করে দেয়। পরিবারের কয়েকজনকে তালিবান মারধর করে বলে তারা আলাদা হয়ে যান। বিমানবন্দরে খুব কঠিন পরিস্থিতি ছিল।“

আফগানিস্তান দলের ক্যাপ্টেন ফাতিমা ইউসুফি বলেন, “আমরা আফগানিস্তানে পরিবার ফেলে এসেছি। এখানে যখন এলাম, ভাবতাম যে হ্যাঁ, এখন আমরা শরণার্থী, তাই এখনই একসাথে খেলতে পারব না। তবে সময় বদলাবে, আমরা সবাই নতুন জীবন গড়ব, আলাদা হব, কিন্তু শেষে দ্বিতীয় পরিবার এখানে থেকেই গড়ব। অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে ও আমরা এখন একসাথে দল হিসাবে খেলছি। আমাদের যে এই দ্বিতীয় পরিবার আছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।“

আগে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করতেন এই আফগান মহিলারা। কিন্তু নির্বাসনের ফলে ফিফার অনুমোদন এখন পাচ্ছেন না। একদিন তাও সম্ভব হবে তাদের আশা। ফাতিমা বলেন, “নারী হিসাবে এটা আমাদের অধিকার। আমরা দ্বিতীয় সুযোগ পেয়েছি, বেঁচে আছি, এটা দারুণ। নিজের দেশকে, দেশের মেয়েদের, মায়েদের, বোনেদের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই যারা আফগানিস্তানে আছেন ও কষ্ট করছেন। তাদের খেলার অধিকার নেই, পড়ার, বাইরে যাবার, নিজের মতো থাকার অধিকার নেই।“ প্র্যাক্টিসে নামছেন ফাতিমা ও তার দল।

২০২১ সালে ৫০ জন আফগান নারী ফুটবলার অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশেষ জরুরি উড়োজাহাজে অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় নেন। গ্লোবাল ফুটবলার অ্যাসোসিয়েশন ‘ফিফপ্রো’ আফগানিস্তানের নারী ফুটবলারসহ ফুটবলে জড়িত ব্যক্তি ও সম্ভব হলে তাদের পরিবারকেও দেশটি থেকে সরিয়ে নিতে অস্ট্রেলিয়া সরকারকে অনুরোধ করেছিল। তালিবান আবার ক্ষমতা দখলের পর কেউ আর বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক পরিবেশে নিরাপদ বোধ করছিলেন না।

২০২১ সালের ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল তালিবানের নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর পালানো তিন হাজার আফগানকে আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া সরকার। ক্ষমতায় আসার পর তালিবান নারী ফুটবলারদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেদের দেওয়া পোস্টসহ ছবি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু, সাহসী নারীরা তা না করে ফুটবল সংস্থাগুলোর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন।

বিশ্ব সংস্থা ফিফা ও ফিফপ্রো’র আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়া সরকার আফগানিস্তান থেকে ৫০ জনেরও বেশি নারী ফুটবলার, ক্রীড়াবিদ ও তাদের নির্ভরশীলদের সরিয়ে নেয়। তালিবানের ক্ষমতা দখলের এক বছর পর প্রথমবার কোনও ম্যাচে খেলেন আফগানিস্তানের জাতীয় নারী ফুটবল টিমের সদস্যরা। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে স্থানীয় লীগের একটি ম্যাচ খেলেন তারা।