ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য প্রাক্তন ফুটবলার স্বপন সেনগুপ্তর

স্পোর্টস ডেস্ক: সাফ কাপে ভারত সাত বারের চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু চলতি এই টুর্নামেন্টে ভারত কোনও মতে নিজের আশা জিইয়ে রেখেছে। ১০ জনের বাংলাদেশকে হাতের নাগালে পেয়েও…

sunil chhetri and swapan dasgupta

স্পোর্টস ডেস্ক: সাফ কাপে ভারত সাত বারের চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু চলতি এই টুর্নামেন্টে ভারত কোনও মতে নিজের আশা জিইয়ে রেখেছে। ১০ জনের বাংলাদেশকে হাতের নাগালে পেয়েও ১-১ গোলে ড্র। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র। এরপর নেপালের বিরুদ্ধে ৮১ মিনিট পর্যন্ত মেন ইন ব্লু’রা আটকে ছিল।

৮২ মিনিটে ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী’র (Sunil Chhetri) করা একমাত্র গোলে ভারত জিতে সাফ কাপে বুদবুদ করে অক্সিজেন পেয়ে চলেছে। ভারতীয় ফুটবল দলের হেড কোচ ইগর স্তিমাচের ট্র‍্যাকট্রিক্স নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। এই নিয়ে সোজা সাপ্টা কথা প্রাক্তন ফুটবলার স্বপন সেনগুপ্ত’র।

   

ভারতীয় ফুটবল দলের হেড কোচ ইগর স্তিমাচের ট্র‍্যাকট্রিক্স প্রসঙ্গে ১৯৭০ সালের ইস্টবেঙ্গলের আইএফএ শিল্ড জয়ী প্রাক্তন ফুটবলার স্বপন সেনগুপ্ত বলেন,”প্রথমত মিলোভানের পর কোনও ভাল বিদেশি কোচ আসেনি। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের(AIFF) কর্মকর্তারা অযোগ্য। একটা ম্যাচ জিততে পারেনি।” এরই সঙ্গে বর্তমান ভারতীয় ফুটবল দলের হেড কোচের সমালোচনা করে তিনি বলেন,”টিমকে মোটিভেট করতে পারছে না কোচ। Attack (এই শব্দের বাংলা টাইপ আসছে না দাদা) ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স, বল পায়ে আক্রমণ। এই শ্রীলঙ্কা একটা ফুটবল দল। ফুটবলে পাকিস্তান ভাল শক্তি।কিন্তু সাফ কাপে পাকিস্তান টিম নেই,চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতো ভারত।” এরই সঙ্গে ১৯৭৩ ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক বলেন, “আমাদের সময়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আমরা ৪-৫ গোলের বড় ব্যবধানে জিততাম।”

ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী ফুটবল সম্রাট পেলের ৭৭ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন। সুনীল ছেত্রীকে নিয়ে প্রাক্তন ফুটবলার স্বপন সেনগুপ্ত’র অকপট স্বীকারোক্তি,”সুনীল ছেত্রী’র এখন ৩৯ বছর বয়স। এই বয়সে সুনীল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলছে, লড়ে চলেছে, হেড কোচ ইগর স্তিমাচের ভুল পরিকল্পনা। জাতীয় দলে বিকল্প স্ট্রাইকার নেই।” ফুটবলার সুনীল ছেত্রী নিয়ে বলতে গিয়ে এও বলেন,”একটা সময়ে রিটারমেন্ট দরকার। কিছু থাকে না। সুনীল ছেত্রী’র উচ্চতা একটা ফ্যাক্টর।” “চিন্তাভাবনায় ভুল আছে,সেন্টিমেন্ট দিয়ে খেলা চলছে। ভারতের ফিফা র‍্যাঙ্কিং ১০৭, আর ২০০ ওপর র‍্যাঙ্কিং’এ থাকা দলকেও ভারত হারাতে পারছে না।AIFF কর্মকর্তারা ঠিকভাবে চলছে না, অত্যন্ত আক্ষেপের সুর শোনা গেল প্রাক্তন ফুটবলার স্বপন সেনগুপ্ত’র গলায়।

ভারতীয় ফুটবলের বর্তমান হাল হকিকৎ নিয়ে যখন আলোচনা স্বাভাবিক নিয়মে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) প্রসঙ্গ উঠে আসতে বাধ্য। আইএসএল নিয়ে প্রাক্তন ফুটবলার স্বপন সেনগুপ্ত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে’র ( IPL) উদাহরণ টেনে বলেন,”আইপিএল খেলে ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দল সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। নতুন নতুন ক্রিকেটার উঠে আসছে। জাতীয় দলের ক্রিকেটের প্রথম একাদশে ঢোকার লড়াই চলছে, রিজার্ভ বেঞ্চে পর্যন্ত লড়াই চলছে। আর আইএসএল থেকে ভারতের জাতীয় ফুটবল দলের কোনও লাভ হচ্ছে না। শুধুমাত্র আইএসএল খেললেই অর্থ, এমনটা সঠিক নয়, দেশের জার্সি গায়ে খেললেও অর্থ পাওয়া যায়।” আইএসএলে ভারতীয় ফুটবলের কোনও লাভ হয়নি, সঙ্গে বাংলার ফুটবলের কোনও লাভ হয়নি। লাভ হয়েছে শুধুমাত্র স্পনসরের পরিষ্কার বক্তব্য প্রাক্তন লাল হলুদ ফুটবলার স্বপন সেনগুপ্ত’র।

এসসি ইস্টবেঙ্গলের পড়শি ক্লাব এটিকে মোহনবাগান ক্লাবে সমর্থকদের বিক্ষোভ কলকাতা প্রেস ক্লাবের বাইরে থেকে স্টেডিয়ামে ফুটে উঠছে।#ATKRemove, #Breakthemerger দাবি উঠেছে সবুজ মেরুন সমর্থকদের। ফুটবলে কর্পোরেট জগৎ এর মেলবন্ধন এই নিয়েও মুখ খুলেছেন প্রাক্তন ফুটবলার স্বপন সেনগুপ্ত। এই প্রসঙ্গে গত বছর এসসি ইস্টবেঙ্গলের প্রসঙ্গ টেনে স্বপন সেনগুপ্ত’ বলেন,”মোহনবাগান ক্লাবে স্বপন সাধন বসু (টুটু বাবু) পাশে আছেন। হরিমোহন বাঙ্গুর হরির লুট করতে আসেননি। আমরা তাকে কাজ করতে দিইনি।”

নিজের ফুটবল জীবন নিয়ে জানতে চাইলে বেশ নস্টালজিয়া প্রাক্তন ফুটবলার স্বপন সেনগুপ্ত। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক আইএফএ শিল্ড জয় ইরানের পাস ক্লাবের বিরুদ্ধে। এই ফাইনাল ম্যাচের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন,”৪ বছর ইস্টবেঙ্গলে খেলেছি।সেই সময়ে ইস্টবেঙ্গল দলে সিনিয়র ফুটবলার বেশি ছিল। জুনিয়র ফুটবলার কম ছিল,আমিও জুনিয়র ফুটবলার ছিলাম। শিল্ডের সেমিফাইনাল ম্যাচ আমি খেলিনি, হ্যামস্ট্রিং’র চোটের কারণে। ফাইনাল ম্যাচে প্রথম একাদশে সুযোগ পাই। প্রথম একাদশে নিজের নাম জানতে পেরে নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করে মাঠে নামি। কাজল মুখার্জী, কানন ঘোষদের আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম পাস ক্লাবের ফুটবলারেরা উচ্চতা বেশি, তাই বল উচুতে না বাড়িয়ে মাটিতে রেখে পাস বাড়াতে। ফাস্ট হাফ ড্র ছিল। সেকেন্ড হাফে নঈম ভাল একটা ডাক চিপ তোলে, বলের কাছে এসেও পিছনে বিপক্ষ দলের ফুটবলার ছিল।বল নিয়ে চকিতে ঘুরে গিয়ে বল পায়ে আমি আর পাস ক্লাবের গোলকিপার মুখোমুখি। কিন্তু আমি জানতাম পরিমল দে’র টাচ ভালো। বল বাড়িয়ে দিই পরিমল দে’কে লক্ষ্য করে।আর তাতেই গোল। ইডেন গার্ডেনে ওই ফাইনাল ম্যাচ হয়েছিল। চ্যাম্পিয়ন হতেই মশাল জ্বলে ওঠে। ১ লক্ষ দর্শক স্টেডিয়ামে সেদিন। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ঘাড়ে চেপে সেদিন ক্লাব তাঁবুতে এসেছিলাম। মানুষ আজও ভোলেনি। যেখানেই যাই ওই ম্যাচের প্রসঙ্গ উঠবেই। মানুষ ভুলে যায়নি।” ফুটবলার হিসেবে নিজের কেরিয়ারে আক্ষেপ প্রসঙ্গে লাল হলুদের ১৯৭৩ প্রাক্তন অধিনায়ক স্বপন সেনগুপ্ত বলেন,”ফুটবলের ঈশ্বর পেলের বিরুদ্ধে খেলতে পারিনি, এই আফশোস রয়েই যাবে। ১৯৭৫ হ্যামস্ট্রিং’র চোট, আক্ষেপটা থাকবে।”

২০২১’র আগামী নভেম্বর মাস থেকে শুরু হতে চলেছে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL)। আইএসএ’লে এসসি ইস্টবেঙ্গলের সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শোনা গিয়েছে প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক স্বপন সেনগুপ্ত’র মুখে। আসন্ন আইএসএ’লে এসসি ইস্টবেঙ্গলের প্রথম ম্যাচ জামেশেদপুর এফসি’র বিরুদ্ধে, ২১ নভেম্বর। “আগামী তিন ম্যাচে ৫ পয়েন্ট না পেলে ইস্টবেঙ্গল সমস্যায় পড়তে পারে। প্রথম ম্যাচটা ভাইটাল। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে জিততেই হবে,” স্পষ্ট কথা প্রাক্তন এই লাল হলুদ অধিনায়কের। আইএসএলে এসসি ইস্টবেঙ্গলের দ্বিতীয় ম্যাচ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের বিরুদ্ধে, বলা ভালো এটিকে মোহনবাগানের বিপক্ষে,২৭ নভেম্বর। কেন আইএসএলে প্রথম ম্যাচ ভাইটাল এই বক্তব্যের ব্যাখা প্রসঙ্গে প্রাক্তন ফুটবলার স্বপন সেনগুপ্ত বলেন,”জামশেদপুরের বিরুদ্ধে জিতে গেলে, ডার্বি ম্যাচের আগে টিম আত্মবিশ্বাসে থাকবে, টিম এগোবে।”

এসসি ইস্টবেঙ্গলে এখন স্প্যানিশ কোচ ম্যানুয়েল মানোলো ডিয়াজ। বিদেশি কোচ প্রসঙ্গে স্বপন সেনগুপ্ত বলেন,”বিদেশি কোচ, বিদেশি ফুটবলার হচ্ছে মোহ।হাতের কাছে সফল কোচ রয়েছে। সফল কোচের তালিকায় জহর দাস, খালিদ জামিল রয়েছে। খালিদ জামিল আই লিগ চ্যাম্পিয়ন টিমের কোচ সঙ্গে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন টিমের কোচ। আমি নিজে খুব জোরের সঙ্গে কোচ জহর দাসকে নিয়ে সওয়াল করেছিলাম। কোচ যত বেশি বয়সের হবে,অভিঞ্জতায় পরিপক্কতা আসবে। বয়স কখনই ফ্যাক্টর নয় কোচিং কেরিয়ারে। ফুটবল কোচ জহর দাস সবদিক দিয়ে বেস্ট চয়েস হয়ে উঠতে পারেনি। জহর দাসকে নেয়নি।” সঙ্গে জুড়ে দিয়ে বলেন,”বড় বড় ম্যাচ খেলে এসেছেন। বিদেশে খেলা আর ভারতে খেলা এক নয়।”

আসন্ন আইএসএল গোয়ার মাটিতে খেলা হবে। অর্থাৎ সমুদ্রতীর মাটির তলায় বালি থাকবে। এসসি ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের চোট আঘাতের সম্ভাবনার দিকটিও প্রাক্তন লাল হলুদ অধিনায়ক স্বপন সেনগুপ্ত’কে ভাবাচ্ছে। বলেন,”গোয়ার মাটিতে খেলার অসুবিধা আছে। বল স্লো চলে,ঘাসের তলায় বালি আছে। হ্যামস্ট্রিং’র এবং কাফ মাসেলের চোট ফুটবলারদের ভোগাতে পারে।”