বহু অপেক্ষার অবসান ঘটল গত শুক্রবার। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) চলতি মরসুমে অবশেষে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল ইমামি ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) ফুটবল ক্লাব। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি মাত্র গোলে দলকে জয় এনে দিলেন গ্ৰীক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিওস ডায়মান্তাকস। মাদিহ তালালের নিখুঁত পাস থেকে গোল করে এই গুরুত্বপূর্ণ তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করেন তিনি। এই জয়ের ফলে ঘরের মাঠে উচ্ছ্বাসের জোয়ার দেখা দিয়েছে সমর্থকদের মধ্যে।
ম্যাচের পর লাল-হলুদ শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,
“ওরা যথেষ্ট ভালো খেলেছে। এই জয় মূলত কোচ এবং টিম স্ট্রাটেজির সফলতার ফল। আগেরবারের তুলনায় এবারের দল আরও শক্তিশালী হয়েছে সেটা সবাই জানে। যদিও কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল শুরুর দিকে, তবে আমি নিশ্চিত, আমাদের দল ধীরে ধীরে নিজের ছন্দে ফিরবে। ইস্টবেঙ্গল ইস্টবেঙ্গলের মতোই খেলবে। নন্দ-মহেশের মতো পারফর্মাররা দলে রয়েছে। তবে পারফর্মারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকাটাও স্বাভাবিক। আমার মনে হয় কোচ পুরো বিষয়টি ভালোভাবে সামলাবেন।”
দেবব্রত সরকারের এই মন্তব্যে ফুটে উঠেছে কোচ অস্কার ব্রুজন এবং দলের ফুটবলারদের প্রতি তাঁর গভীর আস্থা। তিনি আরও বলেন,
“আমাদের দল সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। তবে আমি নিশ্চিত, সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। সমর্থকরাও এটি উপভোগ করবেন।”
প্রথম জয়ের গুরুত্ব
চলতি আইএসএল মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি। টানা ছয়টি ম্যাচে পরাজয়ের পর আত্মবিশ্বাস কিছুটা হলেও নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল দলের। তবে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিরুদ্ধে ডার্বি ম্যাচে নয় জন ফুটবলার নিয়ে ড্র করার পর থেকে দলের লড়াইয়ের মেজাজে ফেরা শুরু হয়। এই ড্র দলের মধ্যে নতুন শক্তি ও উদ্যমের সঞ্চার করে।
এরপর নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ম্যাচে জয় নিশ্চিত করে সেই আত্মবিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করে তোলে ইস্টবেঙ্গল। যুবভারতীতে উপস্থিত সমর্থকদের জন্য এই জয় ছিল এক বড় উপহার। বিশেষ করে মাদিহ তালাল এবং ডিমিত্রিওস ডায়মান্তাকসের যুগলবন্দি আক্রমণ প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেদ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কোচের ভূমিকা
ইস্টবেঙ্গলের বর্তমান কোচ অস্কার ব্রুজনের পরিকল্পনা ও কৌশলই এই জয়ের মূল চাবিকাঠি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ডার্বি ম্যাচের পর থেকে তিনি ফুটবলারদের মনোবল বাড়াতে এবং তাদের খেলার কৌশল আরও উন্নত করতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন। তার পরিচালনায় দলের আক্রমণাত্মক ফুটবল ধীরে ধীরে নিজের পূর্ণতা পাচ্ছে।
দলের রক্ষণভাগেও কিছুটা উন্নতি হয়েছে, যা প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখতে সহায়ক হয়েছে। বিশেষ করে গোলরক্ষক এবং রক্ষণভাগের ফুটবলারদের দৃঢ়তা নর্থইস্ট ইউনাইটেডের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে জয় এনে দিতে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
দলের জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এখন প্রধান লক্ষ্য। পরবর্তী ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়িন এফসির। এই ম্যাচেও জয় ধরে রাখার জন্য ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাঠে নামতে হবে। কোচ ব্রুজনের পরিকল্পনার পাশাপাশি ফুটবলারদের একাগ্রতা ও পারফরম্যান্সই আগামী ম্যাচগুলিতে দলের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
দেবব্রত সরকার ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, দলের পারফরম্যান্স আরও উন্নত হবে এবং সমর্থকরা এটি উপভোগ করবেন। নন্দকুমার সেকার এবং মহেশ সিং-এর মতো পারফর্মারদের নিয়েও তিনি যথেষ্ট আশাবাদী। তাদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দলের আক্রমণকে আরও ধারালো করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সমর্থকদের আশা
সমর্থকদের প্রত্যাশা, ইস্টবেঙ্গল যেন এই জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আইএসএলে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করতে পারে। প্রথম জয় দল এবং সমর্থকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা এনেছে। বিশেষ করে ঘরের মাঠে জয় সমর্থকদের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে।
ইস্টবেঙ্গলের প্রথম জয় শুধু একটি ম্যাচ জয় নয়, এটি আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার একটি বড় পদক্ষেপ। কোচ ব্রুজনের নেতৃত্বে দল নতুন উদ্যমে আইএসএলে নিজেদের প্রমাণ করার জন্য প্রস্তুত। পরবর্তী ম্যাচগুলি যে আরও কঠিন হতে চলেছে, তা সত্ত্বেও দলের বর্তমান পারফরম্যান্স সমর্থকদের আশান্বিত করেছে। এখন দেখার বিষয়, এই ছন্দ ধরে রেখে ইস্টবেঙ্গল কতদূর যেতে পারে।