ISL: কোন বিষয়টা সব থেকে বেশি তাতাচ্ছে বাগান শিবিরকে

ভরা গ্যালারিতে আইএসএল (ISL) ফাইনাল৷ দীর্ঘদিন পর এই দৃশ্য দেখবে ভারতীয় ফুটবল। করোনা পরবর্তী যুগে ফের মাঠে ফিরতে চলেছে দর্শক। আর এই ঘোষণা শোনার পর…

ভরা গ্যালারিতে আইএসএল (ISL) ফাইনাল৷ দীর্ঘদিন পর এই দৃশ্য দেখবে ভারতীয় ফুটবল। করোনা পরবর্তী যুগে ফের মাঠে ফিরতে চলেছে দর্শক। আর এই ঘোষণা শোনার পর থেকেই যেন চার সেমিফাইনালিস্ট দলের ফুটবলাররা আরও বেশি চনমনে হয়ে উঠেছেন। আগামী রবিবার ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ভরা গ্যালারির সামনে খেলতে নামার আকর্ষণই যে তাঁদের কাছে অন্য রকমের। ফুটবল ফিরতে চলেছে তার পুরনো চেহারায়। ফুটবলপ্রেমীদের গর্জনে কেঁপে উঠবে আকাশ, বাতাস, এই দৃশ্য কল্পনা করে তাই আর কারও তর সইছে না যেন। ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করার তাগিদটা যেন আরও বেড়ে গিয়েছে ফুটবলারদের।

দুই সেমিফাইনালের প্রথম লেগে জিতে ফাইনালের দিকে এগিয়ে রয়েছে কেরালা ব্লাস্টার্স ও হায়দরাবাদ এফসি। কেরালা ব্লাস্টার্স ১-০-য় হারিয়েছে জামশেদপুর এফসি-কে। অন্য সেমিফাইনালে হায়দরাবাদ এফসি ৩-১-এ হারায় এটিকে মোহনবাগানকে। ফুটবলে সব কিছুই সম্ভব। বিশেষ করে আইএসএলে। তাই শেষ পর্যন্ত কারা ফাইনালে মুখোমুখি হবে, কেউ সে ভবিষ্যদ্বাণী করার ঝুঁকি নিচ্ছেন না।

ঘটনাচক্রে সেমিফাইনালে পিছিয়ে থাকা দুই দলে রয়েছেন এক গোয়ানিজ ফুটবলার লিস্টন কোলাসো ও এফসি গোয়া দলে খেলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ইশান পন্ডিতা। এই দুই ফুটবলার ফাইনালে মুখোমুখি হলে রবিবার গ্যালারিতে বাড়তি আকর্ষণ তৈরি হতে পারে। স্থানীয় তারকাদের খেলা স্বচক্ষে দেখতে গোয়ার ফুটবলপ্রেমীরা উদগ্রীব। দু’বছর আগে তাঁরা যখন গ্যালারিতে বসে খেলা দেখেছিলেন, তখন এই দুই তরুণ ফুটবলার তারকা হয়ে ওঠেননি। এ বার দু’জনকে নিয়েই যথেষ্ট হইচই চলছে। ফলে ফাইনালে এই দু’জনের দ্বৈরথ দেখতে যথেষ্ট আগ্রহী স্থানীয় ফুটবলপ্রেমীরা।

দুই তারকাও এই সুযোগ ছাড়তে চান না। তাঁরাও উদগ্রীব ফাইনালে খেলার জন্য। কিন্তু দুই তারকার দলই সেমিফাইনালের লড়াইয়ে পিছিয়ে। পন্ডিতার দলের কাছে ঘুরে দাঁড়ানোটা তাও অপেক্ষাকৃত সহজ হতে পারে। কিন্তু লিস্টনদের ঘুরে দাঁড়ানো মোটেই সোজা নয়। তাই শেষ পর্যন্ত ফাইনালে দুই তারকা মুখোমুখি হতে পারবেন কি না, সেটাই প্রশ্ন।

দক্ষিণ গোয়ার মারগাওয়ের কাছে দাভরলিমে জন্ম লিস্টন কোলাসোর। ফুটবল জীবনের সেরা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন ২৩ বছর বয়সি এই ফরোয়ার্ড। এই মরশুমে লিগের ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক তিনিই। এ পর্যন্ত আটটি গোল করেছেন তিনি। এ রকম একটা সময়ে হিরো আইএসএল ফইনালে নিজের এলাকার দর্শকদের সামনে মাঠে নামতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক।

এই নিয়ে লিস্টন বলেন, “ফাইনালে সমর্থকেরা তাঁদের প্রিয় দলের জন্য গলা ফাটাতে আসবেন, এটা দারুন খবর এবং এই খবর যথেষ্ট উজ্জীবিত করার মতোও। আমি গোয়ার ছেলে বলে শুধু নয়, প্রত্যেক খেলোয়াড়ই চাইবে চেনা পরিবেশে ফিরে গিয়ে খেলতে। খুব আশা করছি, ফাইনালে উঠে সমর্থখদের সামনে খেলার সুযোগ পাব”। সেটা করতে হলে অবশ্য বুধবার সেমিফাইনালে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে অন্তত তিন গোলের ব্যবধানে জিততেই হবে তাদের। হায়দরাবাদের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে যা করতে পারাটা বেশ কঠিন হবে।

ইশান পন্ডিতার দলের কাছে অবশ্য কাজটা অতটা কঠিন নয়। ফাইনালে উঠতে গেলে তাদের দ্বিতীয় লেগে জিততে হবে দু’গোলের ব্যবধানে। ম্যাচটাকে টাই ব্রেকারে জিততে গেলে ড্র চাই তাদের। আপাতত সেই দিকেই তাকিয়ে ২৩ বছরের সুপারসাব, যিনি রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নেমে তিন-তিনটি গোল করেছেন এবারের লিগে। ইশান বলেন, “বিশাল এক ফাইনাল হতে চলেছে রবিবার। অবশেষে আমরা মাঠে সমর্থকদের পাব। আমরাও জামশেদপুরের সমর্থখদের সামনে মাঠে নামতে মুখিয়ে রয়েছি”।

আগামী রবিবারের ফাইনালের টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে অনলাইনে। গোয়া সরকার গ্যালারির একশো শতাংশ ব্যবহারেরই অনুমতি দিয়েছে এফএসডিএল-কে। তবে সুরক্ষা বিধি মেনে স্টেডিয়ামে আসতে হবে দর্শকদের। প্রত্যেককে অন্তত ১৫ দিন আগে শেষ কোভিড টিকা নেওয়ার প্রমাণ দেখিয়ে গ্যালারিতে প্রবেশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথবা ২৪ ঘণ্টা আগে হওয়া আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট দেখালেও গ্যালারিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। আর গ্যালারিতে থাকাকালীন সব সময় মাস্ক ব্যবহার করাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

যাঁরা সে দিন গ্যালারিতে বসে খেলা দেখবেন, তাঁদের জন্য বরাদ্দ থাকবে একটি করে ম্যাচ বলের স্মারক প্রতিকৃতিও। এখানেই শেষ নয়। ফুটবলপ্রেমীদের জন্য থাকবে হিরো গ্ল্যামার মোটরসাইকেল জেতার সুযোগও। তিনজন ভাগ্যবান দর্শক এই পুরস্কার নিয়ে বাড়ি ফেরার সুযোগ পাবেন। এই সুযোগ পাবেন ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের ভারতীয় নাগরিকরা। ফলে আইএসএলের ফাইনালকে ঘিরে এখন উৎসবের মেজাজ ফতোরদায়। দোল পূর্ণিমার আগে সেখানে যেন নেমে এসেছে অকাল হোলি।