আল নাসর ও পর্তুগালের ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo ) আবারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে এবার তার মাঠের পারফরম্যান্স নয়, বরং তার এক হালকা মন্তব্যই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি ঘটেছে জুভেন্টাসের সাবেক সতীর্থ উয়েচ সেজনির সঙ্গে তার এক মুহূর্তের কথোপকথনের সময়। সেজনি বর্তমানে বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছেন এবং তাদের মধ্যে হওয়া এই কথোপকথনই রোনাল্ডোকে বিতর্কের মুখে ফেলে দিয়েছে।
রোনাল্ডো ও সেজনির মজার কথোপকথন
পর্তুগালের জাতীয় দলের ইউরোপীয় নেশনস লিগে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে এই ঘটনা ঘটে। ম্যাচটি ওয়ারশের কাজিমিয়ের্জ গর্সকি জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। রোনাল্ডো সেই ম্যাচে তার ১৩৩তম আন্তর্জাতিক গোলটি করে পর্তুগালকে ৩-১ ব্যবধানে জয় এনে দেন। কিন্তু ম্যাচের চেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে তার ও সেজনির মধ্যে হওয়া হালকা কথোপকথন।
উয়েচ সেজনি, যিনি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন, পোল্যান্ড দলের শেষ ম্যাচে তার সতীর্থদের বিদায় জানাতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ইতিমধ্যেই আগস্ট মাসে জুভেন্টাস ছেড়ে ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা করেছিলেন, তবে পরবর্তীতে বার্সেলোনার গোলকিপার মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেনের ইনজুরির কারণে তিনি এক স্বল্প মেয়াদী চুক্তিতে বার্সেলোনায় যোগ দেন।
রোনাল্ডোর বিতর্কিত মন্তব্য
মাঠের টানেলে এই দুই সাবেক জুভেন্টাস সতীর্থের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ ঘটে। সেজনি যখন রোনাল্ডোর সঙ্গে আলাপ করেন, তখন তিনি রোনাল্ডোকে জানান যে তিনি এখন বার্সেলোনায় খেলছেন। সেজনির কথা শুনে রোনাল্ডো হেসে বলেন, “আমি জানি!” এরপর সেজনি, বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কেন্দ্র করে রোনাল্ডোর উদ্দেশ্যে বলেন, “চিন্তা করো না, আমি কাউকে বলবো না।”
তবে বিতর্কের সূচনা ঘটে রোনাল্ডোর পরবর্তী মন্তব্যে। রোনাল্ডো তখন সেজনির দিকে মজার ছলে বলেন, “অবিশ্বাস্য, অবসর নিতে হলো বড় ক্লাবে যেতে!” যদিও রোনাল্ডোর এই মন্তব্য মজার ছলে করা হয়েছিল, তা কিছু জুভেন্টাস সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
জুভেন্টাস সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া
রোনাল্ডোর এই মন্তব্য জুভেন্টাস সমর্থকদের অনেকের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, রোনাল্ডো জুভেন্টাসকে ছোট করার জন্য এই মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে, রোনাল্ডোর জুভেন্টাস ছেড়ে যাওয়ার সময়ের কিছু বিতর্কিত বিষয় এখনও সমর্থকদের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করে রেখেছে। ২০২১ সালে রোনাল্ডো জুভেন্টাস থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে চলে যান, তবে ক্লাবের সাথে তার সম্পর্ক তখন তিক্ত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে, বেতন নিয়ে এক আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছিল, যা এখনও সমর্থকদের মনে আছে।
রোনাল্ডোর সাম্প্রতিক মন্তব্য সেই পুরনো ক্ষতকে নতুন করে উসকে দিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। বিশেষ করে, রোনাল্ডো জুভেন্টাসের হয়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারে অনেক শিরোপা জিতলেও, তার ক্লাব ছাড়ার প্রক্রিয়াটি মসৃণ ছিল না। সেই বিতর্কিত প্রস্থানের প্রেক্ষিতে রোনাল্ডোর এই নতুন মন্তব্য জুভেন্টাস সমর্থকদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।
সেজনির বার্সেলোনা যোগদানের প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, সেজনি বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার পর থেকেই তাকে নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। জুভেন্টাসের সাবেক এই গোলকিপার বার্সেলোনায় তার নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। টের স্টেগেনের চোটের কারণে বার্সেলোনার গোলপোস্ট সামলানোর দায়িত্ব পড়েছে সেজনির ওপর। রোনাল্ডোও সেজনির এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন, তবে মজার ছলে করা তার মন্তব্যই বিতর্কের কেন্দ্রে এসে পড়েছে।
রোনাল্ডোর ব্যক্তিত্ব ও হাস্যরস
রোনাল্ডো বরাবরই তার মজার মন্তব্যের জন্য পরিচিত, এবং এই ঘটনাটিও তার ব্যক্তিত্বের এক উদাহরণ। তিনি তার সতীর্থদের সঙ্গে প্রায়ই মজার ছলে কথা বলেন এবং সেটিই হয়তো এই ক্ষেত্রে ঘটেছে। তবে, জুভেন্টাসের সঙ্গে তার অতীত সম্পর্কের কারণে সমর্থকদের কিছু অংশ রোনাল্ডোর এই মন্তব্যকে নেতিবাচকভাবে নিয়েছেন। বিশেষ করে, তার ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসার পরবর্তী জটিলতা এবং বেতন বিতর্কের কারণে সমর্থকদের মনে ক্ষোভ রয়ে গেছে।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মন্তব্য হয়তো সম্পূর্ণরূপে মজার ছলে করা হয়েছে, তবে তা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। জুভেন্টাসের প্রতি রোনাল্ডোর কোনো বিরূপ মন্তব্য করার অভিপ্রায় ছিল না। তবে, তার এই মন্তব্য সাময়িকভাবে জুভেন্টাস সমর্থকদের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
অবশ্য, সেজনির সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং রোনাল্ডোর হাস্যরসাত্মক মনোভাবই হয়তো এই কথোপকথনের প্রেক্ষিতে আসল সত্যি। কিন্তু জুভেন্টাস সমর্থকদের মনে যে এই মন্তব্যের কারণে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তা রোনাল্ডোকে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।