ভারতীয় ফুটবল দলের (Indian Football Team) কোচ মানোলো মার্কুয়েজ (Manolo Marquez) ২০২৫ সালের মার্চ মাসের আন্তর্জাতিক বিরতিতে তাঁর দলের জন্য বেশ কিছু প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ খেলোয়াড়কে বেছে নিয়েছেন। আগামীকাল, ১৯ মার্চ বুধবার, শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচে মাঠে নামবে ব্লু টাইগার্স। এরপর ২৫ মার্চ তারা ২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপ যোগ্যতা অর্জনের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে। স্প্যানিশ কোচ মার্কুয়েজ ২০২৫ সালের শুরুতে দুটি জয় দিয়ে দলকে ইতিবাচক পথে নিয়ে যেতে মরিয়া। তবে, তিনি দলে নতুন মুখদের সুযোগ দিয়ে খেলার ধরনে বৈচিত্র্য ও অপ্রত্যাশিততা আনতে চান। এখানে চারজন তরুণ খেলোয়াড়ের কথা বলা হচ্ছে, যারা মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ভারতীয় ফুটবল দলে অভিষেক করতে পারেন।
Also Read | হতাশাজনক পারফরম্যান্সের জের, লোবেরার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে ওডিশা?
৪. বরিস সিং: ডানপ্রান্তের গতিশীল শক্তি
বরিস সিং-এর ভারতীয় ফুটবল দলে অন্তর্ভুক্তি কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়। ২০২৪-২৫ ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) মরশুমে এফসি গোয়ার হয়ে তিনি অসাধারণ নির্ভরযোগ্যতা দেখিয়েছেন। গোয়ার ২৩টি ম্যাচের মধ্যে ২২টিতে শুরু থেকে খেলেছেন বরিস, এবং তিনটি ভিন্ন পজিশনে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ডানপ্রান্তে যে কোনো জায়গায় খেলতে পারেন তিনি—রাইট-ব্যাক, রাইট-উইং বা মিডফিল্ডে। তাঁর রক্ষণাত্মক দৃঢ়তা এবং আক্রমণে গতি দলের জন্য একটি নিখুঁত ভারসাম্য এনে দেয়।
মার্কুয়েজের খেলার ধরন বরিস খুব ভালোভাবে বোঝেন। তিনি জানেন কখন ফরোয়ার্ড রান করে সুযোগ তৈরি করতে হবে বা কীভাবে প্রতিপক্ষের আক্রমণ নষ্ট করতে হবে। ভারতের অনূর্ধ্ব-২০ দলে খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও এখন সময় এসেছে তাঁর সিনিয়র দলে অভিষেকের। মালদ্বীপ বা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিনি রাইট-ব্যাক বা রাইট-উইং হিসেবে খেলতে পারেন, দলের আক্রমণে গতি যোগ করে।
৩. আয়ুষ ছেত্রী: মিডফিল্ডের নতুন নোঙ্গর
আয়ুষ ছেত্রী ২০২৪-২৫ আইএসএল মরশুমে এফসি গোয়ার হয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে সবার নজর কেড়েছেন। এই ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার মার্কুয়েজের সিস্টেমে নিজেকে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছেন। গভীর মিডফিল্ড থেকে খেলা নিয়ন্ত্রণ করে তিনি দলের জন্য একজন নির্ভরযোগ্য নোঙ্গর হয়ে উঠেছেন। আইএসএল-এ ২১টি ম্যাচে তিনি ৬২টি পজেশন রিকভারি, ৫৭টি ডুয়েল জয় এবং গড়ে ২৩টি পাস দিয়েছেন।
এছাড়া তিনি তিনটি গোলের অবদান রেখেছেন (একটি গোল ও দুটি অ্যাসিস্ট), যা তাঁর সৃজনশীলতা ও চতুর পাসিংয়ের প্রমাণ দেয়। আয়ুষ একজন কঠোর পরিশ্রমী খেলোয়াড়, যিনি প্রতিপক্ষের চাল নস্যাৎ করতে সর্বদা সতর্ক থাকেন। মালদ্বীপের বিরুদ্ধে তাঁর সিনিয়র দলে অভিষেক হলে তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের গুণ প্রমাণ করতে পারেন।
২. অভিষেক সিং: বাঁ-প্রান্তের উদীয়মান তারকা
পাঞ্জাব এফসি-র ২০২৪-২৫ আইএসএল মরশুম খুব একটা সফল না হলেও অভিষেক সিং-এর উত্থান দলের জন্য একটি বড় ইতিবাচক দিক। এই ২০ বছর বয়সী লেফট-ব্যাক শেরদের হয়ে বারবার উচ্চ গতির এবং নির্ভরযোগ্য রক্ষণাত্মক পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। ২২টি ম্যাচে মাত্র দুটি ক্লিন শিট পেলেও অভিষেক প্রায়ই দলের সবচেয়ে পরিশ্রমী ডিফেন্ডার ছিলেন।
তিনি ৪৭টি ইন্টারসেপশন, ৫১টি ক্লিয়ারেন্স এবং ৮৬টি ডুয়েল জিতেছেন। বাঁ-প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে যোগ দিয়ে তিনি চমৎকার ডেলিভারির মাধ্যমে সুযোগও তৈরি করেছেন। যদি সুভাষিস বোস সর্বোচ্চ মানে খেলতে না পারেন, তবে মার্কুয়েজ অভিষেককে লেফট-ব্যাক হিসেবে বেছে নিতে পারেন। তবে, আইএসএল-এ তাঁর ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জন্য তিনি অভিষেকের জন্য প্রস্তুত—সম্ভবত বদলি হিসেবে হলেও।
১. ব্রিসন ফার্নান্ডেস: গতি ও গোলের খিদে
ব্রিসন ফার্নান্ডেসের ভারতীয় ফুটবল দলে ডাক পড়া কোনো বিস্ময়ের বিষয় নয়। ২০২৪-২৫ আইএসএল মরশুমে তিনি অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। এই দ্রুতগতির, অপ্রত্যাশিত উইঙ্গার এই মরশুমে ভারতের শীর্ষ বিভাগে সেরা ভারতীয় খেলোয়াড়দের একজন হয়ে উঠেছেন। তাঁর গোলের প্রতি অদম্য ক্ষুধা তাঁকে আলাদা করে তুলেছে।
আইএসএল-এ ২২টি ম্যাচে ব্রিসন ৭টি গোল করেছেন এবং ২টি অ্যাসিস্ট দিয়েছেন। মোহনবাগান, বেঙ্গালুরু এফসি এবং ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে গোল করেছেন তিনি। তাঁর অফ-দ্য-বল মুভমেন্ট এবং খালি জায়গায় ঢুকে পড়ার ক্ষমতা ডিফেন্ডারদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কুয়েজ নিশ্চিতভাবেই তাঁর দক্ষতা বিদেশি ডিফেন্ডারদের বিরুদ্ধে পরীক্ষা করতে চাইবেন। মালদ্বীপের বিরুদ্ধে তাঁর অভিষেক প্রায় নিশ্চিত। যদি তিনি ক্লিনিক্যাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারেন, তবে জাতীয় দলে তাঁর জায়গা দীর্ঘমেয়াদে নিশ্চিত হতে পারে।
ম্যাচের প্রেক্ষাপট
ভারতীয় ফুটবল দল ২০২৪ সালে একটিও জয় পায়নি, যা দলের জন্য একটি হতাশাজনক বছর ছিল। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তারা বর্তমানে ১২৬তম স্থানে রয়েছে। মালদ্বীপের বিরুদ্ধে এই প্রীতি ম্যাচটি ২০২৭ এশিয়ান কাপ যোগ্যতা অর্জনের প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মালদ্বীপ, যারা ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৬২তম স্থানে রয়েছে, তাদের জন্যও এটি একটি প্রস্তুতি ম্যাচ। দুই দলই আগামী সপ্তাহে যোগ্যতা অর্জনের লড়াই শুরু করবে—ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এবং মালদ্বীপ ফিলিপাইনের বিরুদ্ধে।
সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া
এই চার তরুণ খেলোয়াড়ের সম্ভাব্য অভিষেক নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। একজন সমর্থক সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “ব্রিসন এবং বরিস দলের জন্য নতুন শক্তি আনবে। তাদের অভিষেক দেখার জন্য মুখিয়ে আছি।” আরেকজন লিখেছেন, “আয়ুষ এবং অভিষেকের মতো তরুণরা ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ।” সমর্থকরা আশা করছেন, এই নতুন মুখরা দলের খেলায় বৈচিত্র্য এবং গতি যোগ করবে।
মার্কুয়েজের পরিকল্পনা
মার্কুয়েজ জানিয়েছেন, এশিয়ান কাপ যোগ্যতা অর্জন তাঁর দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নতুন খেলোয়াড়দের পরীক্ষা করে দলের গভীরতা বাড়াতে চান। ২০২৪ সালে মাত্র চারটি গোল করা ভারতের জন্য গোলস্কোরিং একটি বড় সমস্যা ছিল। তরুণদের পাশাপাশি সুনীল ছেত্রীকে দলে ফিরিয়ে তিনি আক্রমণে শক্তি বাড়াতে চাইছেন।
মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ১৯ মার্চের ম্যাচটি ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ তারকাদের জন্য একটি বড় মঞ্চ হতে চলেছে। বরিস সিং, আয়ুষ ছেত্রী, অভিষেক সিং এবং ব্রিসন ফার্নান্ডেস—এই চার তরুণ তাদের প্রতিভা প্রমাণ করার সুযোগ পেতে পারেন। ২০২৫ সালে এই সময়ে, যখন ভারতীয় ফুটবল একটি নতুন অধ্যায়ের দিকে এগোচ্ছে, এই অভিষেকগুলি দলের জন্য একটি নতুন শক্তি ও আশা নিয়ে আসতে পারে। সমর্থকরা অপেক্ষায় আছেন, এই তরুণরা কীভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করে।