DNA Analysis: প্রাচীন কঙ্কালের জীবাণু রহস্য! বিভিন্ন রোগ মুক্তির উপায় পেলেন গবেষকরা

প্রাচীন কঙ্কালের ডিএনএ বিশ্লেষণ (DNA Analysis) থেকে আধুনিক যুগের রোগ মুক্তির উপায় বের করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।হাজার হাজার বছর আগে যে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলো মানুষকে…

Secret of ancient skeleton DNA

প্রাচীন কঙ্কালের ডিএনএ বিশ্লেষণ (DNA Analysis) থেকে আধুনিক যুগের রোগ মুক্তির উপায় বের করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।হাজার হাজার বছর আগে যে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলো মানুষকে সংক্রমিত করেছিল সেগুলোর ডিএনএ এখনও তাদের কঙ্কালে আটকে আছে। আর তা থেকেই চলছে এই গবেষণা।

পুরনো কঙ্কাল থেকে ডিএনএর মাধ্যমে প্রাচীন যুগের রোগের কারণ অনুসন্ধান নিয়ে কাজের ক্ষেত্র প্যালিওমাইক্রোবায়োলজির জগতে এটি এক নতুন আবিষ্কার। এই ডিএনএ পুনর্গঠন করে বিজ্ঞানীরা ব্যক্তির মৃত্যুর শত শত বা হাজার বছর পরও একটি রোগ বা অবস্থা নির্ণয় করতে পারেন।

   

গুটিবসন্তের কথাই ধরা যাক। এই বিধ্বংসী রোগে কেবল ২০ শতকেই আনুমানিক ৩০ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।লিথুয়ানিয়ান একটি মমি থেকে প্রাপ্ত ডিএনএতে দেখা গেছে এতে আক্রান্ত হওয়া সবচেয়ে পুরনো ঘটনাটি ছিল ১৭ শতকের। তবে ২০২০ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বারবারা মুহলেমান নামের একজন পিএইচডি শিক্ষার্থী এবং তার সহকর্মীরা ৬০০ খ্রিস্টাব্দের ভাইকিং কঙ্কালের দাঁত থেকে ভেরিওলা ভাইরাস বের করার পর সময়টি আরও পিছিয়ে ধরা হয়।

আধুনিক প্লেগ সাধারণত সংক্রামিত মাছি বহনকারী ইঁদুরের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, গবেষণায় দেখা গেছে খ্রিস্টপূর্ব এক হাজার অব্দ পর্যন্ত প্লেগ ব্যাকটেরিয়া মাছিকে সংক্রমিত করার জন্য প্রয়োজনীয় মিউটেশন অর্জন করেনি।এর আগে এটি সম্ভবত মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে কম গুরুতর নিউমোনিক প্লেগ হয়।মাছিকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা একবার অর্জন করার পর এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, আর এর ফলে বুবোনিক প্লেগের (ব্ল্যাক ডেথ) প্রাদুর্ভাব ঘটে। ১৪ শটকের এই মহামারী ইউরোপের অর্ধেক মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।

আবার কলম্বাস তার প্রথম সমুদ্রযাত্রা থেকে ফিরে আসার আগেই সিফিলিস ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল।সিফিলিস ব্যাকটেরিয়ার মিউটেশন হারের উপর ভিত্তি করে করা গণনায়ও দেখা যায় এই রোগের উৎপত্তি কলম্বাস আসার আগে হয়েছে।

গবেষক শুয়েনম্যান বলেন, সিফিলিস, প্লেগ এবং কুষ্ঠ রোগের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই- যখনই মানুষ ভ্রমণ এবং বাণিজ্য বিনিময় শুরু করেছে, তারা জীবাণুদেরও ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আসলে রোগগুলো ছড়িয়ে পড়ার জন্য আপনার নির্দিষ্ট পরিমাণ মানুষের প্রয়োজন, তাই আমরা প্রথম শহরগুলোর দিকে এই রোগগুলো দেখতে পাই।যখন মানুষ বসতি স্থাপন শুরু করেছিল তখনই মহামারী আঘাত হানে।

দাঁতের ডিএনএ সিকুয়েন্সের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার সময় তার কী কী সংক্রামক রোগ হয়েছিল সেটা ছাড়াও আরও অনেক কিছু বলা সম্ভব।ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি একজন ব্যক্তির মুখের মাইক্রোবায়োম অর্থাৎ মুখের ভেতর ও চারপাশে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় ঝাঁক কেমন ছিল তা প্রকাশ করতে পারে।পেনসিলভানিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবিক নৃবিজ্ঞানী অ্যাবিগেল গ্যাঙ্কজ বলেন, “কয়েক দশক আগের গবেষণায় দেখা গেছে কীভাবে মৌখিক স্বাস্থ্য এবং মাইক্রোবায়োম এই অবস্থাগুলোর সাথে সম্পর্কিত”।

গ্যাঙ্কজ এনসিয়েন্ট সিস্টেম্যাটিক ডিজিজ প্রজেক্টের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যার লক্ষ্য প্রাচীন মানব মাইক্রোবায়োম এবং এনসিডির উপস্থিতির মধ্যে যোগসূত্র উন্মোচন করা।এ পর্যন্ত তিনি মধ্যযুগ থেকে শিল্পযুগের ১৯২ জন ব্রিটিশ ব্যক্তির কঙ্কাল পরীক্ষা করেছেন।এই প্রজেক্টে মানুষ মারা যাওয়ার সময় তার কোন ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস ছিল কি না তা খোঁজ করতে দাঁতের ফলকে পাওয়া মাইক্রোবিয়াল ডিএনএ ডিকোডিং করা হয়।তারপরে বর্তমানে মানুষের পরিচিত রোগগুলোর সঙ্গে কঙ্কালে চিহ্নিত করতে পারা রোগের তুলনা করা হয়।“কঙ্কালের বিভিন্ন ক্ষত থাকে যা রোগটিকে নির্দেশ করে,” বলেন গ্যাঙ্কজ।

গবেষকদের দাবি, গবেষণাটি মানব ইতিহাস রচনায় জীবাণুর ভূমিকার উপর জোর দেয়। কিন্তু এই ধরনের গবেষণা শুধুমাত্র ঐতিহাসিক আগ্রহের না।এটি আধুনিক মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।