আজকের দিনেই বিশ্ব শান্তির স্বীকৃতি পেয়েছিলেন ‘মাদার’

বিশেষ প্রতিবেদন: তিনি সবার মাদার। আগনেস গোনাসকাস বোজাকসিন। এ নামটা বললে কেউ বুঝতেও পারবেন না। তিনি মাদার টেরেসা (Mother Teresa)। আজকের দিনেই পেয়েছিলেন নোবেল শান্তি…

Mother' Teresa

বিশেষ প্রতিবেদন: তিনি সবার মাদার। আগনেস গোনাসকাস বোজাকসিন। এ নামটা বললে কেউ বুঝতেও পারবেন না। তিনি মাদার টেরেসা (Mother Teresa)। আজকের দিনেই পেয়েছিলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার।।  

১৯৭৯ সালের ১৭ অক্টোবর মাদার টেরিজা সমাজসেবা এবং অনাথ ও আতুরজনের বন্ধু হিসেবে তাদের প্রতি তাঁর সেবাকার্যের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। ১৯৩০ সালে কোলকাতার সেন্ট মেরি ক্যাথলিক গার্লস স্কুলে পড়ানোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাদার টেরেসা। ১৯৪৬ সালে ট্রেনে করে দার্জিলিং যাওয়ার দীর্ঘ পথে গভীর এক চেতনা জেগে ওঠে তাঁর মনে, যেন ঈশ্বরের বাণী শুনতে পান তিনি। দরিদ্র থেকেও দরিদ্র মানুষদের সেবা করাই হল তাঁর মিশন। ১৯৪৮ সালে পোপের অনুমোদন নিয়ে কনভেন্ট ত্যাগ করে ‘অর্ডার অফ সিস্টার্স’ গড়ে তোলেন তিনি। নীল পাড়ের সাধারণ সুতির সাদা শাড়ি হয় এই সব সিস্টারের পোশাক। ১৯৫০ সালে আত্মপ্রকাশ করে ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’ সংস্থা, স্বীকৃতি পায় ভ্যাটিকানের।

কলকাতার রাস্তাঘাটে অনেক দরিদ্রকে মারা যেতে দেখেছেন টেরেসা। অজ্ঞান এক মহিলাকে দেখে আঁতকে ওঠেন তিনি, যার দেহের অর্ধেকটা ইঁদুর ও পিঁপড়ে খেতে শুরু করেছে। সিস্টার টেরেসা স্থির করলেন কাউকে আর একা মরতে দেয়া হবেনা। তিনি মরণাপন্ন মানুষদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন এবং নগর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় হিন্দু মন্দিরের পাশে পরিত্যক্ত এক বাড়িকে ‘হোম ফর দ্য ডাইং’এ পরিণত করেন। পরে যেটির নাম দেয়া হয় ‘নির্মল হৃদয়’। এই কেন্দ্রের আশ্রয়ে কিছুটা শান্তি ও সম্মান পেতেন মৃত্যু পথযাত্রী মানুষরা। পেতেন চিকিৎসা ও পেটভরে খাবার। আজ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ তাদের শেষ আশ্রয় পেয়েছেন এই কেন্দ্রে। এই প্রসঙ্গে মাদার টেরেসা বলেছেন, ‘‘মৃত্যু হল মানুষের জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি। কোনো মানুষ যদি ঈশ্বরের কাছ থেকে শান্তি নিয়ে মরতে পারে, তা হলে তার পক্ষে জীবনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোও সহজ হয়।”

দরিদ্রদের সাহায্য করার কাজটা প্রথম দিকে খুব সহজ ছিলনা মাদার টেরেসার পক্ষে। অর্থের জন্য ধনী ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে তাঁকে। হতাশাও পেয়ে বসেছে কখনও কখনও। তবে মিশনারিজ অফ চ্যারিটি অচিরেই দেশ বিদেশের দাতা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়িয়ে দেন অনেকে সাহায্যের হাত। মাদার টেরেসা নিজেকে কখনও সমাজকর্মী হিসাবে দেখেননি। তাঁর মতে ধর্মের বিশেষ করে ঈশ্বরের নির্দেশে তিনি দরিদ্রদের সেবায় ব্রতী হয়েছেন। ‘‘কাজটা তাঁর জন্য যেন উপাসনা”।

অচিরেই মিশনারিজ অফ চ্যারিটির শাখা প্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে পড়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে, এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার নানা দেশেও। বিভিন্ন স্থানে খোলা হয় আশ্রয় ও দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, এতিমখানা ইত্যাদি। মাদার এগিয়ে আসেন কুষ্ঠ রোগীদের সেবায়। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে বিশ্বের যে কোনো অঞ্চলের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মানবদরদী এই নারী। ছুটে গিয়েছেন ইথিওপিয়ার ক্ষুধার্থ মানুষদের কাছে, উদ্ধার করেছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে আহত বাচ্চাদের। মাদার টেরেসার মতে, ‘‘পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই কোন না কোন ভাবে কষ্ট পায়। এই কষ্টকে ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসায় রূপান্তরিত করতে হবে। বিশেষ করে আজ যেখানে পাপে ভরে গেছে চারিদিক।”

মিশনারিজ অফ চ্যারিটির আওতায় এখন বিশ্বব্যাপী ৪০০০ নান কাজ করছেন। ১৩০টি দেশে ৬০০’রও বেশি সাহায্য কেন্দ্র চালাচ্ছে তাদের কর্মকান্ড। জীবনে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন মহীয়সী এই নারী।