জানেন কী? শুধুমাত্র রাস্তা পরিষ্কার করতে কলকাতায় চলত বিশেষ ট্রেন

Kolkata: রাজপথ দিয়েই ছুটত রেলগাড়ি! না ট্রাম নয়। আস্ত একটা রেল। কয়েক মাস নয়, দীর্ঘ সময় ধরে চলত এই রেল। জানেন কী? জেনে নিন। এর…

dhapa rail-kolkata

Kolkata: রাজপথ দিয়েই ছুটত রেলগাড়ি! না ট্রাম নয়। আস্ত একটা রেল। কয়েক মাস নয়, দীর্ঘ সময় ধরে চলত এই রেল। জানেন কী? জেনে নিন। এর নাম ছিল ধাপা রেল।

রাস্তায় ময়লা পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা হয় ময়লা ফেলার গাড়ি, ট্রাক অথবা ওই অলিগলিতে চলা গাড়ি অথবা এখনকার ছোট ছোট ব্যাটারি চালিত গাড়ি, কিন্তু একটা সময় এই শহর রাস্তা পরিষ্কার করতে রেল গাড়ি ব্যবহার করত।

রাস্তার উপর ছিল পাতা রেললাইন। তার উপর দিয়ে এগিয়ে যেত রেল। আরও মজার বিষয় হল গাড়ির সামনে থাকত সাইকেল। চালক দেখাত পথ। আসলে তাঁর কাজ ছিল রাস্তায় পথচারী দেখলেই সতর্ক করা। পিছনে রেলগাড়ি আসছে। এই ছিল কলকাতার উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের শুরুর দৃশ্য।

কলকাতা শহরের প্রথম পাকা রাস্তা সার্কুলার রোড। আর এই রাস্তার উপর দিয়েই ছুটে চলত ওই রেলগাড়ি। হেলতে দুলতে এগিয়ে চলত ওই রেল। নাম ছিল কলকাতা মিউনিসিপ্যাল রেলওয়ে। দায়িত্বে কলকাতা পুরসভা। থিয়েটার রোডের মোড় থেকে বাগবাজার পর্যন্ত চলত এই রেল।

যাত্রী থাকত না এই এই ট্রেনে। থাকবেই কা কী করে। কাজ ছিল শহরের যত ময়লা সংগ্রহ করা। আর তারপর রেলগাড়ি এগিয়ে চলত তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে। ধাপার মাঠের দিকে। উনিশ শতক থেকেই শহরের সমস্ত ময়লা ধাপা মাঠে জমা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল।

১৮৬৩ সালে প্রথম কলকাতা মিউনিসিপ্যাল রেলওয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ১৮৬৮ সালের মধ্যে প্রথম দফার রেললাইন পাতার কাজ শেষ হয়ে যায়। প্রথমে এই রেলপথ ছিল মাত্র ৮ মাইল লম্বা। পরে ১৮৭৭ সালে রেলপথের দৈর্ঘ্য বাড়ানোর কথা ভাবা হয়। পরের বছর তার দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১২ মাইল। ১৯১০-১১ সালে আরও ৩ মাইল বাড়ানো হয় দৈর্ঘ্য। দেখতে দেখতে রেলপথ বাড়তে থাকে। কিন্তু তার গতি বাড়ে না। শহরবাসীর কাছেও এই ধীরগতির রেল ছিল বেশ কৌতুকের জিনিস। তাঁরা এর নাম দিয়েছিলেন ‘ধাপা রেল’।

তবে ধাপা রেল কিন্তু শুধুই আবর্জনা বয়ে বেড়াত না। তার আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। সেই সময় শহরের নানা প্রান্তে চলছে রাস্তা তৈরির প্রক্রিয়া। রাস্তা তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম কারখানা থেকে শহরে আসত নদী এবং খালপথে। নদীপথ এবং খালপথের সঙ্গে শহরের যোগাযোগ বজায় রাখত এই ধাপা রেলই। রেলবোঝাই হয়ে যাবতীয় ইট, পাথর, লোহার পাইপ এসে পৌঁছত শহরের কেন্দ্রে। সেখানে ক্যাম্পবেল হাসপাতাল, অর্থাৎ আজকের নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের সামনের ফুটপাতে স্তূপাকারে জমা হত সমস্ত সরঞ্জাম।

এর বোর্ডে ছিলেন বেশ কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার। ট্রেনের গতি বাড়ানো সহ নানা বিষয়ে আলোচনা চলত বোর্ডের মধ্যে। তবে, ধাপা মেল আজ আর নেই। নেই রেলপথও। আছে শুধু ধাপার মাঠ।