HomeMythologyকোজাগরি উৎসবেই হয় সরস্বতী আরাধনা, ইউএসপি বিশাল জিলিপি

কোজাগরি উৎসবেই হয় সরস্বতী আরাধনা, ইউএসপি বিশাল জিলিপি

- Advertisement -

বিশেষ প্রতিবেদন: বিনপুর থানার হাড়দা গ্রামে এটাই ট্র‍্যাডিশন! চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীর পুজোর মতোই কোজাগরি উৎসব পাঁচদিন ধরে। কয়েক কুইন্টাল জিলিপি কেনাবেচা হয় এখানে।

দুর্গাপুজো শেষ। একবোনের বিসর্জন, আর অন্য বোনের আবাহন এমনটা হয় নাকি! এক বোনকে ছেড়ে অন্য বোনের পুজোটা কি ঠিক? অন্য কোথাও হলেও বিনপুর থানার হাড়দা গ্রামে হয় না। দুই বোন একই সঙ্গে মর্তে এসেছেন, সুতরাং পুজোটাও হবে একই সঙ্গে। কোজাগরীর রাতে দুই বোনকে পাশাপাশি বসিয়ে পুজো করাটাই দস্তুর বিনপুরে। আর সেটাই প্রায় দেড়শো বছর ধরে করে আসছেন গ্রামবাসীরা।

   

হাড়দা গ্রামে কয়েক ঘর বর্ধিষ্ণু চাষীদের বাস। পুজোর মূল উদ্যোক্তা তাঁরাই। গ্রামবাসীরা বলেন, এই পুজো নাকি স্বপ্নে পাওয়া। জনশ্রুতি, কয়েকশো বছর আগে হাড়দার শুঁড়ি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা গ্রামের সম্পন্ন ‘মোড়ল’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ওই পরিবারগুলিকে ‘মণ্ডল-বাকুল’ বলা হত।

special laxmi puja of binpur

শোনা যায়, গ্রামের অক্রূর মোড়ল স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে মণ্ডল-বাকুলের পারিবারিক কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো শুরু করেন। পুজোর বয়সও কিছু কম নয়। ১৫৭ বছরে পা দিল বিনপুরের কোজাগরী লক্মী আরাধনা। সম্পদের দেবীর পাশে একই সঙ্গে আলো করে থাকেন বিদ্যার দেবী সরস্বতী। দু’জনকে নিয়েই পুজো। দু’জনের একই সঙ্গে আবাহন ও পুজো শেষে বিসর্জন। এটাই পরম্পরা। এটাই রীতি। দেড়শো বছরেও তার অন্যথা হয়নি।

এক চালের প্রতিমা। পাশাপাশি লক্ষ্মী-সরস্বতী। চালচিত্রের মাথায় চৈতন্য বেশে নারায়ণ। দুই দেবীর দু’পাশে তাঁদের চার সখী। পুরাণ মতে এই সখীদের বলা হয় লুক ও লুকানি। পুজোটা করেন সম্পন্ন চাষী পরিবারের মোয়ো, বৌয়েরা। তাই উদ্য়োগ-আয়োজনেও কমতি থাকে না। নাড়ু, মুড়ি, মুড়কি, নারকোলের চিঁড়ে দিয়ে এলাহি আয়োজন। কৃষি থেকেই এসেছে স্বাচ্ছন্দ্য। তাকে লক্ষ্মীর আশিস হিসেবেই দেখেন হাড়দা গ্রামের বাসিন্দারা। বুধবার তাই ব্য়স্ততার অন্ত নেই গ্রামে। খেত ভরা ফসলের আনন্দে হাড়দা গ্রামে লক্ষ্মীর বসতি। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস “মা লক্ষ্মীর আর্শীবাদেই ফসলে ভরে উঠেছে তাদের উঠোন।’’

লোকসংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী বিষ্ণুর স্ত্রী জ্ঞান ও সম্পদ স্বরূপা। সেই ভাবনা থেকেই গ্রামে দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে দেবী সরস্বতীও পূজিতা হন। কৃষি থেকেই আর্থিক স্বচ্ছলতা। সেখান থেকেই বেড়েছে শিক্ষার হার। আর এ সবই দুই দেবীর কৃপায় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন গ্রামবাসীরা। তাই একই সঙ্গে একই চালায় দুই দেবীই পূজিতা হন।

শতবর্ষ প্রাচীন কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোকে ঘিরে উৎসবমুখর গোটা বিনপুর। গ্রামের প্রায় চারশো মণ্ডল পরিবার এই পুজোয় সামিল হন। পুজোকে ঘিরে বসে মেলা। পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা রাজেশ মণ্ডল বলেছেন, এ বার পুজোর বাজেট পাঁচ-ছয় লাখ টাকার মধ্যে। মণ্ডল পরিবারের সবাই সাধ্যমত টাকা দিয়ে তহবিল গড়েন। যাঁরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন, তাঁরা পুজোয় গ্রামে ফেরেন। লক্ষ্মী পুজোকে ঘিরে হাড়দা গ্রামে শারদীয়া উৎসবের আমেজ তৈরি হয়।

এই পুজোর আরও একটি বৈশিষ্ট্য আছে, সেটা হল পুজোর মেলায় বিখ্যাত জিলিপি। গ্রামবাসীদের কথায়, লক্ষ্মীপুজোয় বিনপুরের হাড়দা গ্রামের জিলিপির কথা শোনেননি এমন মানুষ নাকি নেই। প্রকাণ্ড মাপের রসে ভরা সেই জিলিপির চলও নাকি প্রাচীন কাল থেকেই। হাড়দাবাসীর বিশ্বাস, জিলিপির রসে মিশে থাকে লক্ষ্মীর আশীর্বাদ। দেবীর নৈবেদ্যে অবশ্য জিলিপির ঠাঁই নেই।

কিন্তু কে জিলিপি বানাবেন? সে জন্য আগাম নিলাম ডাকে পুজো কমিটি। যিনি সর্বোচ্চ দর দেন, কেবলমাত্র তিনিই মেলায় প্রসাদী জিলিপির দোকান খোলেন। মেলার পাঁচ দিন একমাত্র ওই দোকানেই জিলিপি বিক্রি হয়। বিউলি ডালের গুঁড়োর সঙ্গে আতপ চালের গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি হয় বিশেষ ধরনের এই জিলিপি। বছরে মাত্র এক বার। নিয়ম অনুযায়ী কোজাগরীর পরে প্রতিপদ থেকে এই জিলিপি তৈরির কথা। তবে এখন লক্ষ্মীপুজোর দিনেই জিলিপি তৈরি শুরু হয়ে যায়।

বিনপুরের জিলিপিকে ‘ট্যুর প্যাকেজ’-এ সামিল করে ফেলেছে একাধিক বেসরকারি পর্যটন সংস্থা। ঝাড়গ্রামের পর্যটনেও যুক্ত হয়েছে এই পুজোর মেলা।

- Advertisement -
online desk
online desk
Get Bengali news updates, Bengali News Headlines , Latest Bangla Khabar, Bengali News from Kolkata
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular