William Friedrich Denning: অজপাড়া গাঁয়ের শখের জ্যোতির্বিদ পৃথিবীকে জানিয়েছিলেন উল্কাবৃষ্টির কথা

বিশেষ প্রতিবেদন: মানুষ সর্বপ্রথম কবে আকাশে উল্কা ছুটতে দেখেছিল? এর কিন্তু পুরোপুরি সঠিক কোন উত্তর নেই। তবে মানুষ কবে সর্বপ্রথম আকাশে ছুটতে থাকা জ্বলন্ত উল্কার…

William Friedrich Denning

বিশেষ প্রতিবেদন: মানুষ সর্বপ্রথম কবে আকাশে উল্কা ছুটতে দেখেছিল? এর কিন্তু পুরোপুরি সঠিক কোন উত্তর নেই। তবে মানুষ কবে সর্বপ্রথম আকাশে ছুটতে থাকা জ্বলন্ত উল্কার ছবিটি তুলেছিল তা কিন্তু আমাদের জানা। সেই দিনটিই আজ।  

১৮৮৫ সালের এই দিনে একজন শখের জ্যোতির্বিদ, উইলিয়াম ফ্রিডরিখ ডেনিং (William Friedrich Denning) এক অজপাড়া গাঁয়ে বসে কালো আকাশে দ্বীপ্তমান জ্বলন্ত অগ্নিশিখা মুখে নিয়ে ছুটতে থাকা তথাকথিত এক স্বর্গীয় বস্তুর ছবি তুলেছিলেন। প্রথমে তিনি এক সন্ধায় হুট করে উল্কাটি দেখতে পান। ঠিক করেন, পরের দিন ঠিক একই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় ছবি তুলে ফেলা যাবে। কিন্তু পরের দিন শ’য়ে-শ’য়ে উল্কার বৃষ্টি দেখে হতভম্ভ হয়ে যান। “রাত বাড়ার সাথে সাথে উল্কাগুলি এত ঘন হয়ে পড়ছিল যে তাদের গণনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল” ২৭ নভেম্বর ডেনিং এ কথা জানিয়েছিলেন।

   

দেশটির নাম বললে অনেকেই হয়ত চিনবে না। জার্মান, পোল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার কোলে অবস্থিত চেকিয়া নামক একটি দেশ। সবার জানামতে মহাজাগতিক কাণ্ডগুলো ওই স্থানে বসে খুব ভাল দেখা যেত। তাই তো ডেনিং সাহেব সেই যুক্তরাজ্য থেকে চেকিয়ায় এসে করতেন শখের পর্যবেক্ষণ। ডেনিং সাহেব কি ক্যামেরা ব্যবহার করেছিলেন, সে সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

উল্কাবৃষ্টি কী? এটাও আকাশ থেকে পড়ে, বৃষ্টির মতোই, কিন্তু সেটা দেখা যায় শুধু রাতে। আকাশে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে। দেখলে মনে হয় আকাশ থেকে আতশবাজি নেমে আসছে। আকাশের তারা বুঝি খসে পড়ছে মাটিতে। ইংরেজিতে সে জন্যই এদের বলা হয় ‘শুটিং স্টার’। মাটির কাছাকাছি আসতেই নিভে যায়। তবে মাঝেমধ্যে দু–একটা জ্বলন্ত অবস্থাতেই মাটিতে পড়ে। সেটা আবার বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। সে কথায় পরে আসছি।

Advertisements

উল্কা হল আমাদের এই সৌরজগতেরই আকাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা কিছু বস্তুখণ্ড। এই বস্তুখণ্ডগুলো আসে ধূমকেতু থেকে। ধূমকেতু মাঝেমধ্যে আকাশে দেখা দেয়। সূর্যের চারপাশে এক চক্কর দিয়ে আবার দূরে চলে যায়। এদের চলার পথ অনেকটা ডিমের আকৃতির মতো (ইলিপটিক)। হ্যালির ধূমকেতুর কথা আমরা জানি। একবার সূর্য প্রদক্ষিণ করে আবার প্রায় ৭৬ বছর পর ফিরে আসে। এ ধরনের আরও কিছু ধূমকেতু সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এ সময় ধূমকেতুর মূল অংশের কিছু জমাট বাঁধা মহাজাগতিক ধূলিকণা ও অন্যান্য বস্তু আকাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থেকে যায়। পৃথিবী তার কক্ষপথে চলার সময় এসব বস্তুখণ্ডের কাছাকাছি এলে ওগুলো পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে মাটির দিকে পড়তে থাকে।

এই পড়ন্ত বস্তুগুলো পৃথিবীর কাছাকাছি এলে বাতাসের সঙ্গে ঘর্ষণে জ্বলে ওঠে। তখন আকাশে ওদের দেখে মনে হয় আলোকোজ্জ্বল তারা আকাশ থেকে পড়ছে। যেন আতশবাজির বৃষ্টি পড়ছে। এটাই উল্কাবৃষ্টি।

উল্কাপিণ্ডগুলো ঘণ্টায় প্রায় ২৫ হাজার থেকে দেড় লাখ মাইল বেগে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। ফলে বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে এরা জ্বলে ওঠে। সাধারণত মাটিতে পড়ার আগেই জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু উল্কা খণ্ড খুব বড় হলে সবটা জ্বলে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আগেই মাটিতে পড়তে পারে। এ রকম উল্কার আঘাতে মাঝেমধ্যে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে এ ধরনের বিশাল এক উল্কাখণ্ড বা গ্রহাণুর (অ্যাস্টেরয়েড) আঘাতে পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছিল বলে বিজ্ঞানীরা বলেন। তবে ভিন্নমতও রয়েছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো গবেষণা করছেন।