Manohar Dakat Kali: শহরের বুকে নরবলির ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে ছানা কালী

তখন পলাশীর যুদ্ধ শেষ হয়েছে। এই কলকাতার অধিকাংশ অঞ্চলেই ছিল গভীর জংগল। বিশেষ করে আজ যা দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত পাড়া, সেই পূর্ণদাস রোড, রাসবিহারী এভেনুই…

history of manohar dakat kali

তখন পলাশীর যুদ্ধ শেষ হয়েছে। এই কলকাতার অধিকাংশ অঞ্চলেই ছিল গভীর জংগল। বিশেষ করে আজ যা দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত পাড়া, সেই পূর্ণদাস রোড, রাসবিহারী এভেনুই সব জায়গায় ছিল ঘন জঙ্গল। কালীঘাটের জঙ্গলের পাশ দিয়ে বয়ে যেত আদি গঙ্গা। অবশ্য তখন তার রূপ ছিল অন্য রকম। এই সমস্ত জঙ্গলে ছিল বাঘ আর সাপের ভয়। আর ভয় ছিল মনোহর ডাকাতের। তখন লোকে মনোহর ডাকাতের নামে ভয়ে কেঁপে উঠতো।

ডাকাতদের কালী পূজো নিয়ে মিথ হয়ে আছে প্রচুর কল্প কাহিনী। তাতে দেখা যায় ডাকাতেরা নরবলি বা ছাগবলি দিয়ে সেই রক্ত করালবদনী কালীর খাঁড়ায় ছুঁইয়ে, কপালে রক্ত তিলক কেটে রক্ত বস্ত্র পরে দলবল নিয়ে হা রে রে রে করে ডাকাতি করতে বেরোতো।

এই মনোহর ডাকাত সেই সময় জঙ্গলের মধ্যে একটি ছোট কালী মূর্তি প্রতিষ্টা করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে তখন এখানে প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় চালু ছিল নরবলি। কষ্টি পাথরের কালী মূর্তিটি ছোট। তাই অনেকে এই কালী বাড়িকে ছানা কালী অর্থাৎ ছোট কালী বাড়ি বলে উল্লেখ করেন। তবে ডাকাত কালী বাড়ি নামেই এটি সুপ্রসিদ্ধ। তখন কোন অলংকার ছিল না দেবীর গায়ে। দেবী ছিলেন আয়ুধভুষিতা, মুন্ডমালা বিভূষিতা। দেবীর হাতে ঝুলতো কোনও হতভাগ্যের করোটি। বিশেষ কয়েকটি দিন ছাড়া এই মন্দির ফাঁকাই থাকে। তাই অনেক সময় এই মন্দিরে গেলে গা ছমছম করে। দক্ষিণ কলকাতার ঘন জঙ্গলের মধ্যে ছিল কালিঘাটের কালী মন্দির। লোকে আদিগঙ্গা দিয়ে নৌকো করে ,বা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে মাকে দর্শন করতে আসতো। জঙ্গলে মোনহর ডাকাতের ভয় ছিল। মনোহর ছিল অকৃতদার।

history of manohar dakat kali

একবার ডাকাতি করে ফেরার সময় মনোহর দেখে যে এক মহিলা বাঘের হাতে মৃত হয়ে পড়ে আছেন। পাশেই একটু শিশু। শিশুটি তখনও জীবিত। কিন্তু তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া সম্ভব ছিল না। মনোহর তখন সন্তান স্নেহে এই শিশুটিকে মানুষ করতে থাকে। এই শিশুটির সংস্পর্শে এসে, মনোহর ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে। শিশুটির নাম রাখে হারাধন। আস্তে আস্তে তার ডাকাতির উৎসাহ কমতে শুরু করে। তার দল ভেঙ্গে যায়। ছেলে বড়ো হচ্ছে, সে যথেষ্ট বুদ্ধিমান। মনোহর ছেলের কাছে তার আসল পরিচয় গোপন করে।

শেষ জীবনে সে চাষকরে একজন চাষীর মত জীবন যাপন করতো। মৃত্যুর আগে গুপ্তধনের নাম করে, ছেলেকে বেশ কিছু মোহর আর সোনা রুপো দিয়ে যায় মনোহর। বলে তার মৃত্যুর পর হারাধন যেন ওই এলাকায় কয়েকটি পুকুর কাটিয়ে দেয়। কারণ সেই সময় ওদিকে খুব জলের কষ্ট ছিল। হারাধন সে কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। সে ওই মনোহর পুকুর সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি পুকুর কাটিয়ে দেয়। আজ সেগুলির প্রায় সব কটাই বুজে গেছে। সেখানে উঠেছে বহুতল বাড়ি। বেঁচে আছে কেবল একটি পুকুর। তার অবস্থা খুবই শোচনীয়।

আজ মনোহর ,হারাধন কেউই নেই। কিন্তু তাদের কীর্তি অমর করে আছে দক্ষিণ কলকাতার মনোহরপুকুর রোড।আর পূর্ণদাস রোডে অবস্থিত এই মনোহর ডাকাতের কালী মন্দির।