দৃষ্টিহীন হয়েও আশার আলো দেখাচ্ছেন ললিতা-অভিজিৎ

জন্ম থেকেই নেই চোখের আলো। তবুও অনেক ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে অধ্যাপক ও অধ্যাপিকা হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছেন ললিতা ও অভিজিৎ (Lalita-Abhijit)। ললিতা জানান, অসমের কোকরাঝাড়ের…

Lalita-Abhijit

জন্ম থেকেই নেই চোখের আলো। তবুও অনেক ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে অধ্যাপক ও অধ্যাপিকা হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছেন ললিতা ও অভিজিৎ (Lalita-Abhijit)। ললিতা জানান, অসমের কোকরাঝাড়ের শ্রীরামপুরে একটি ছোট গ্রাম। সেখানে উচ্চশিক্ষার হার বেশ কম। ছোটবেলাতেই ললিতার বাবা মারা যান। দু’দশক আগে দৃষ্টিহীন ললিতার পক্ষে পথচলা বেশ কঠিন ছিল।

অসমের বাসিন্দা হলেও আলিপুরদুয়ার-বীরপাড়া এলাকায় সুবোধ সেন স্মৃতি দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু। সেখানে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা চলে। তারপর হুগলির উত্তরপাড়ায় লুই ব্রেইল মেমোরিয়াল স্কুলে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন। সেখান থেকে ফের আলিপুরদুয়ারে চলে আসা। মা রান্নার কাজ করে মেয়ে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

এরপর আলিপুরদুয়ার গার্লস স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে আলিপুরদুয়ার কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। আলিপুরদুয়ার কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন। বিএড ডিগ্রির পর এখন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল করছেন ললিতা। ২০১৮ সালে সেট এবং ২০২০ সালে নেট উত্তীর্ণ হন বলে জানান তিনি।

জীবনের এই সাফল্যের পিছনে পরিবার ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা থাকলেও হরিশংকর দাস নামে হোস্টেল সুপারিন্টেন্ডেন্টের ভূমিকাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন ললিতা।

অপরদিকে কামাখ্যাগুড়ির বাসিন্দা অভিজিৎ সাহা আবার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিতে চাইছেন। তাঁর ইচ্ছাপূরণ করতে এগিয়ে এসেছেন শিক্ষক ও শিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিক। অভিজিৎও সুবোধ সেন স্মৃতি দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তবে কামাখ্যাগুড়ি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর শহিদ ক্ষুদিরাম কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর নেতাজি ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে এমএ পাশ করেন।

আবৃত্তি, গান, খেলাধুলাতেও পারদর্শী অভিজিৎ। কবিতাও লেখেন ভালো। ইতিমধ্যে ভিনরাজ্যে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। একাধিক বেসরকারি কোম্পানিতে কাজের পর এখন তিনি একটি জীবনবিমার এজেন্ট হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে সম্প্রতি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চাইছেন তিনি। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই চলছে।

শুধু নিজেদেরই নন, অন্যদেরও আশার আলো দেখাচ্ছেন দুজনে। উত্তরবঙ্গের দৃষ্টিহীনদের স্বনির্ভর করতে ডুয়ার্স ব্লাইন্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও তৈরি করেছেন অভিজিৎ ও ললিতারা। সেই সংস্থা পিছিয়ে পড়া দৃষ্টিহীনদের আর্থিক স্বনির্ভরতার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।