26/11 Mumbai attack: জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা শরীর, নাগপাশে তুকারাম ধরলেন কাসভকে

26/11 Mumbai attacks বিশেষ প্রতিবেদন: সেদিন রাত্রের শিফটে ডিউটি ছিল তুকারাম ওম্বলের (Tukaram Omble)। হালকা মেজাজে ভাবছিলেন কদিন পরেই শীতের আমেজ আসবে,মুম্বাই সেজে উঠবে উৎসবের…

Tukaram Omble

26/11 Mumbai attacks
বিশেষ প্রতিবেদন: সেদিন রাত্রের শিফটে ডিউটি ছিল তুকারাম ওম্বলের (Tukaram Omble)। হালকা মেজাজে ভাবছিলেন কদিন পরেই শীতের আমেজ আসবে,মুম্বাই সেজে উঠবে উৎসবের মেজাজে। বান্দ্রা জুহু অন্ধেরি সব জায়গা উঠবে ঝলমলিয়ে। ছেলে মেয়েরা ধরেছে শীতের ছুটিতে কোথাও একটা যাবে। হাসি পেলো তুকারামের , পুলিশের আবার ছুটি। কোনো উৎসবেই তাদের ছুটি চাওয়া পাপ। গণপতি উৎসব,দেওয়ালি, হোলি কিছুতেই মেলেনা ছুটি। তবু পরিবারের মানুষেরা চায় তাকে।এবার একটা চেষ্টা করবে ছুটি নেবার।

ভাবতে ভাবতে মনটা পিছন ফিরে চলে গেলো। সেই কবে আর্মিতে যোগ দেবার পর থেকেই ছুটি বলে কিছু নেই জীবনে। তারপর কতদিন পেরিয়ে গেছে, খালি ডিউটি আর এদিক ওদিক ছুটে বেড়ানো। বাড়ি থেকে কতো দূরে থাকতে হতো সেই সৈনিক জীবনে। কিন্তু সেই জীবনে একটা রোমাঞ্চ ছিলো। দেশরক্ষার গর্ব গর্বিত করতো। ঝুঁকি নিতে বেশ লাগতো। দেশপ্রেমটা তার মধ্যে চিরকালই বেশি। আর্মি থেকে অবসরের পর যোগ দেন মুম্বাই পুলিশের সব ইনস্পেক্টর পদে। ঘর থেকে ডিউটি। নিরুপদ্রব জীবন, এতেই অভ্যস্ত হয়েছেন এখন। তাও মাঝে মাঝে আর্মির সেই দিন গুলো মনে পড়লে রক্ত গরম হয়, জীবন চায় আবার অভিযান করতে। আবার তারপর মনে হয় এই বেশ, পরিবারকে সময় দেওয়া যাচ্ছে।

ভাবনার ছেদ পড়ল ইনস্পেক্টর ইন চার্জের উত্তেজিত কন্ঠে। ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস এ জঙ্গী হানা হয়েছে। বহু মানুষ হতাহত। জঙ্গিরা গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে অ্যান্টি টেরোরিস্ট শাখার অফিসার হেমন্ত কারকারে, এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট বিজয় সালাসকার কে। তাদের কোয়ালিস গাড়ি নিয়ে জঙ্গীরা এদিকেই আসছে। অফিসার দ্রুত পজিশন নিতে বললেন সবাইকে। রক্ত গরম হয়ে উঠলো ওম্বলের। ফোর্সকে রেডি হতে বলে লাঠি হাতে বেরিয়ে পড়লেন রাস্তায়।

এদিকে ইসলামিক ফিদায়ে জঙ্গি গোষ্ঠীর দুই সদস্য আজমল কাসব ও ইসমাইল খান শিবাজি টার্মিনাস এ হামলা চালিয়ে প্রচুর মানুষকে হত্যা করে বাইরে বেরিয়ে এলো। চারদিকে আতঙ্কিত মানুষের ছোটাছুটি, চিৎকার। বেশ মজা লাগলো তাদের। ভারতীয় গুলোর রক্ত দেখা পবিত্র কর্তব্য। আবার কয়েক রাউন্ড গুলি করলো জনগনকে লক্ষ্য করে। চিৎকার আরো বাড়লো। দেখা গেলো একটা টয়োটা গাড়ি আসছে লাল বাতি লাগানো। পজিশন নিলো তারা। গাড়ি থেকে সালাস্কার,হেমন্ত কারকারে প্রমুখ নামতেই গুলিবর্ষণ শুরু করলো। ঝাঁঝরা হয়ে গেলো অফিসাররা। গাড়িটার দখল নিলো কাসব। গাড়ি ছুটলো তাজ হোটেল লক্ষ্য করে। ততক্ষণে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে পুলিশ। হঠাৎ গাড়ির চাকা বার্স্ট করলো। তারা একটা অন্য গাড়ি দখল করে ছুটলো। মুম্বাই পুলিশের অসহায় আত্মসমর্পণ আর বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এর বহর দেখে মজা করতে লাগল তারা।

সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে রাস্তায় নাকা চেকিং করছে পুলিশ।সমস্ত গাড়িতে তল্লাশি চলছে। চৌপট্টি এলাকায় ডবল ব্যারিকেড করেছে পুলিশ। দেখা গেলো তীর বেগে ছুটে আসছে একটি স্কোডা গাড়ি। আটকাতেই গাড়ি থেকে ছুটে এলো গুলির ঝাঁক। পুলিশও গুলি চালালো। এক জঙ্গি ঝাঁঝরা হয়ে গেল। অপরজনের কাঁধে গুলি লাগলো। সে চালাচ্ছিল গাড়ি। দ্রুত ইউ টার্ন নিলো গাড়ি। ঝাঁপিয়ে পড়লেন তুকারাম। একে জ্যান্ত ধরবো। শরীরে ফুটছে আর্মি রক্ত। দেশপ্রেমের আদর্শ উত্তাল সমুদ্রের মতো উথাল পাথাল করছে। কানে বাজছে সেই মিলিটারি কমান্ডারের আদেশ, “দেশকি শত্রুও কো হাম নেহি ছোড়েঙ্গে। দেশ হামারে মা হ্যায়। মিট্টিমে মিলা দুঙ্গা দেশ কি শত্রুও কো।”

তুকারাম হাতের লাঠি দিয়ে সজোরে ঘা দিলেন গাড়ির দরজায়। এক হ্যাঁচকা টানে খুলে ফেললেন গেট।টেনে ধরলেন তার বন্দুকের নল। ঝাঁপিয়ে পড়লেন জঙ্গির ওপর। জঙ্গি গুলি শুরু করলো। বুকে পরপর ঢুকে যাচ্ছে বুলেট।রক্তে ভিজছে তার ইউনিফর্ম। আর লৌহকঠিন দুই হাত পেঁচিয়ে ফেলেছে জঙ্গীর গলা। প্রাণপণে আঁকড়ে ধরেছেন তাকে। আঁকড়ে ধরলেন কাসবকে। অক্টোপাসের নাগপাশ ছাড়াতে পারলনা সে। অন্য পুলিশরা ধরে ফেলল কাসব কে। বন্ধন আলগা হোল তুকারামের। দু হাত প্রসারিত করে শুয়ে পড়লেন দেশের মাটির ওপর। ভলকে ভলকে রক্ত ভাসিয়ে দিলো তার জামা। আকাঙ্ক্ষিত ছুটি মিলল তাঁর। দিনটা সরি রাতটা ছিল এই ২৬/১১। সালটা ২০০৮। শহীদ হলেন তুকারাম ওম্বলে।

তাঁর অসম সাহসী এই লড়াই সেদিন ধরিয়ে দিয়েছিলো মুম্বই হামলার একমাত্র জীবিত জঙ্গি কাসব কে। তার থেকে জানা গিয়েছিলো তার পাকিস্তানি পরিচয়। আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের মুখোস খুলে দেবার অকাট্য প্রমান পেয়েছিল ভারত। সরকার সম্মান জানিয়েছিল এই বীর শহীদকে। প্রজান্তন্ত্র দিবসে তাঁকে মরণোত্তর অশোক চক্র সম্মান দেওয়া হয়েছিলো। তিনি প্রমান করেছিলেন দেশদ্রোহীদের থেকে দেশপ্রেমিকদের ক্ষমতা অনেক বেশী।