হাওড়ার গ্রাম রাজ করছেন ‘পুতুল’ রূপে রানি ভিক্টোরিয়া

বিশেষ প্রতিবেদন: রাণী ভিক্টোরিয়ার (Queen victoria) এক কাছের বন্ধু ছিল। নাম ছিল আবদুল। তাঁর রানীর সঙ্গে দহরম- মহরম দেখে রাজকর্মীদের ব্যাপক বিরক্ত হত। আবদুলকে সরানোর…

queen victoria

বিশেষ প্রতিবেদন: রাণী ভিক্টোরিয়ার (Queen victoria) এক কাছের বন্ধু ছিল। নাম ছিল আবদুল। তাঁর রানীর সঙ্গে দহরম- মহরম দেখে রাজকর্মীদের ব্যাপক বিরক্ত হত। আবদুলকে সরানোর নানা চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হন। রানীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। 

কলকাতা শহরে তাঁর পা’ও পড়েছিল বেশ কয়েকবার। কিন্তু হাওড়া? না সেখানে কোনও কারনে কি গিয়েছিলেন ব্রিটিশ রাজেশ্বরী? তাহলে কি করে গ্রামীন হাওড়ার পুতুল শিল্পে আজও দেখা মেলে রানী ভিক্টোরিয়ার অবয়বের। আছে আছে। যোগ আছে।

queen victoria

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

পোড়ামাটির এই বিশেষ পুতুলটিকে গোলাপি রঙ করে তাতে অভ্র মেশানো হয়। মাথাজুড়ে কোঁকড়ানো চুল। তবে থাকে না কোনও পা। কোমর থেকে দেহের বাকি অংশ ঘাঘরা ঢাকা। কখনও কখনও দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে মুকুটও পরানো হয়। গুটিকয়েক মানুষের হাত ধরে বেঁচে আছে হাওড়া জেলার এই লোকশিল্প। নাম , রানী পুতুল।

গ্রামীণ হাওড়ার জগৎবল্লভপুর,পাতিহাল,নরেন্দ্রপুর সহ বিভিন্ন গ্রামে এককালে প্রচুর তৈরি হতো এই বিশেষ পুতুল। ম্লান হয়েছে শিল্প। তবুও শিল্পকে ভালোবেসে,পুতুল সংস্কৃতিকে ভালোবেসে দিবাকর পালের মতো শিল্পীরা বানিয়ে চলেছেন হাওড়া জেলার নিজস্ব ‘রানি পুতুল’। বিষ্ণুপুরের পোড়ামাটি বা টেরাকোটার মতো মনে হলেও আদতে এটি একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘরানার পুতুল।

queen victoria

কিন্তু রানীর সঙ্গে ‘নাড়ির’ যোগ কোথায়? ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যাচ্ছে, শিল্পী থেকে পুতুল-গবেষক প্রায় সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেন যে,মূলত কোনো রক্তমাংসের রানীই এই পুতুলের আদর্শ। আর সেই পথ ধরেই ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে এই পুতুলের নামকরণ বা প্রচলন সম্পর্কিত বিশেষ তথ্য উঠে আসে। ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার ভারতপ্রীতি তৎকালীন সমাজের বহু মানুষকেই মুগ্ধ করেছিল। রদ করেছিলেন ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’র শাসন।

রানির এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ভারতবর্ষের বহু মানুষ। যার প্রভাব ভারতের শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্যেও।লোকসংস্কৃতি গবেষকদের মতে,দক্ষিণ পাতিহাল ও জগৎবল্লভপুরের নরেন্দ্রপুর গ্রামের পুতুল শিল্পীরা যে পুতুল বানালেন তার মধ্যে নিয়ে এলেন রানী ভিক্টোরিয়ার দেহ-চুলের গঠন।আর এভাবেই হাওড়া জেলার সংস্কৃতিতে স্থান করে নিলেন কয়েক হাজার মাইল দূরে থাকা রানী ভিক্টোরিয়া।

বঙ্গ সমাজ,সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান পুতুল।বহু প্রাচীনকাল থেকেই পুতুলের প্রচলন। বাংলার বিভিন্ন স্থানে খনন কার্য চালিয়ে পোড়া মাটির পুতুল পাওয়া গিয়েছে। তার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় বাংলার জনসমাজকে পুতুলের মাধ্যমে চিত্রিত করার এক প্রবণতা সুপ্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে।

বাংলার বুকে বিভিন্ন রকমের পুতুলের প্রচলন আছে। যদিও কালের নিয়মে আজ বেশিরভাগেরই ঠাঁই হয়েছে ইতিহাসের পাতায়, মিউজিয়ামের টেবিলে। ফেসবুক,হোয়াটসঅ্যাপের যুগে গ্রাম বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে পুতুলখেলা শৈশবও। অন্যতম রানী পুতুল। শিল্পপাগল মানুষের হাতে ধরে হাওড়া জেলার শিল্প,সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারাকে যা বহন করে নিয়ে চলেছে।