Pulin Behari Sarkar: ভারতে অজৈব রসায়নের প্রাণপুরুষ এই বাঙালি বিজ্ঞানী

বিশেষ প্রতিবেদন, কলকাতা: তিনি নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ল্যাবরেটরি তৈরি করে গবেষক ছাত্রদের নিয়ে বর্ণালি বিশ্লেষণভিত্তিক রসায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই বিষয়ে অসামান্য…

Pulin Behari Sarkar

বিশেষ প্রতিবেদন, কলকাতা: তিনি নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ল্যাবরেটরি তৈরি করে গবেষক ছাত্রদের নিয়ে বর্ণালি বিশ্লেষণভিত্তিক রসায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই বিষয়ে অসামান্য অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় স্বর্ণ পদক পান। তিনিই প্রথম ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে বিহারের গয়া থেকে ‘কলামবাইট নামের এক আকরিক আবিষ্কার করেন । এই আকরিক থেকেই তিনি ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে রেনিয়াম নিষ্কাশন করেছিলেন। ভারতে খনিজ দ্রব্য থেকে তাঁর রেনিয়াম নিষ্কাশন এই প্রথম। তিনি পুলিনবিহারী সরকার।(Pulin Behari Sarkar)

১৯২৫ সাল, তিনি তখন কলিকাতা বিশ্বদ্যিালয়ের এক অধ্যাপক।’ঘোষ ট্রাভেলিং ফেলোশিপ’ নিয়ে পাড়ি দিলেন প্যারিসে। সর্বনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক জর্জেস আর্বেন এর গবেষণাগারে গবেষণা করতে । সেখানে স্ক্যাডিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম এবং ইউরেনিয়াম নিয়ে অভূতপূর্ব কাজের উপর তাঁর ফরাসি ভাষায় লেখা গবেষণাপত্রের জন্য সেখানকার জ্ঞান-বিজ্ঞান জগতের বিশেষ সম্মান ” স্টেট ডক্টরেট অব ফ্রান্স ডিগ্রি ” অর্জন করেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন ।

পান্নাজাতীয় ভারতীয় পাথরগুলি তিনি পর্যালোচনা করে তাদের বিচিত্র রঙের ব্যাখ্যা করেছেন। খনিজ পদার্থে দ্রুত ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ নির্ণয়ের সহজ পন্থা তিনি আবিষ্কার করেন। এমনকি সাধারণ জিনিস যেমন চাল মুসুর ডাল, উচ্ছে, করলা, পান ইত্যাদির মধ্যে কী কী ধাতু কত পরিমানে আছে তা নিয়ে গবেষণা করেন । চোখের জল, মাতৃদুগ্ধ নিয়েও তিনি বিশ্লেষণ করেছেন।

পুলিনবিহারী সরকার ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ শে নভেম্বর কলকাতার ঝামাপুকুরে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন বিখ্যাত আইনজীবী বসন্তকুমার সরকার। তৎকালীন যাদবপুর ও সোনারপুর অঞ্চলের বিশাল জমিদার যাদবনারায়ণ সরকার ছিলেন তাঁর প্রপিতামহ (এঁরই নামে কলকাতায় নামাঙ্কিত বর্তমানের যাদবপুর)। জমিদারির আবহ থেকে দূরে রাখতে চাইতেন তাঁর মাতা সরোজিনী দেবী।

বাবার কর্মক্ষেত্র ছিল মেদিনীপুরের তমলুকে। তাই তাঁর মা স্বামীসহ তমলুকেই স্থায়ীভাবে বাস শুরু করেন। সুতরাং পুলিনবিহারীর বাল্য ও কৈশোর কাটে তমলুকে। সেখানকার হ্যামিলটন স্কুল থেকে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বৃত্তি-সহ এন্ট্রান্স পাশ করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে আই এস সি ক্লাসে ভর্তি হন। এখানে তাঁর সহপাঠী ছিলেন জ্ঞানেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মানিকলাল দে, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ।১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে বি.এসসি ও ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে রসায়নে এম.এসসি পাশ করেন।এর পরের বছর ১৯১৬ সালে পুলিনবিহারী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে লেকচারার নিযুক্ত হন।

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের রসায়ন শাখার সভাপতি, ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব কাল্টিভেশন অব সায়েন্সের আজীবন সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের ফেলো ছিলেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে বিশুদ্ধ রসায়ন বিভাগের ‘স্যার রাসবিহারী ঘোষ অধ্যাপক’ ও ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে রসায়ন বিভাগের প্রধান হন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অবসর নিলেও সি.এস.আই.আর. এর আর্থিক সহায়তায় ছাত্রদের নিয়ে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত গবেষণায় লিপ্ত থেকেছেন। ১৯৭১ সালে ১৪ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয় ।