রামকৃষ্ণের সান্নিধ্য বদলে দিয়েছিল প্রীতিলতার জীবন

বিশেষ প্রতিবেদন: একটি নামের সান্নিধ্যে, বদলে দিয়েছিল কত মানুষের জীবন। সেই একই নামের সান্নিধ্যে বদলে গিয়েছিল প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবনও। তিনি রামকৃষ্ণ। তবে পরমহংস নন। ইনি…

Pritilata waddeadar

বিশেষ প্রতিবেদন: একটি নামের সান্নিধ্যে, বদলে দিয়েছিল কত মানুষের জীবন। সেই একই নামের সান্নিধ্যে বদলে গিয়েছিল প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবনও। তিনি রামকৃষ্ণ। তবে পরমহংস নন। ইনি বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাস। যাকে ফাঁসির আগের প্রতিটি দিন খুব কাছে থেকে দেখেছিলেন বিপ্লবী প্রীতিলতা। আর সেই সাক্ষাৎ বদলে দিয়েছিল তাঁর জীবন। ব্রতী করেছিল দেশের জন্য আত্মত্যাগে। প্রীতিলতার শবদেহের সঙ্গে একটি নিজের হাতের লেখা চিঠি পাওয়া গিয়েছিল। তা থেকেই সেই তথ্য মেলে।।

‘ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায়ের’ ‘ভারতে সশস্ত্র বিপ্লব’ বই থেকে মেলে সেই চিঠি। নিজের সম্বন্ধে লিখেছিলেন প্রীতিলতা। সেই কথা লিখতে গিয়েই চলে আসে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের কথাও। প্রীতিলতা লিখেছিলেন, ‘১৯৩০ সালে পড়বার উদ্দেশ্যে কলকাতা চলে এসেছিলাম। আমার কোনও এক বিপ্লবী ভাইয়ের নির্দেশে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দী রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করার জন্য তৈরি হলাম। মৃত্যুপথযাত্রী রামকৃষ্ণ। দেশকে ভালবাসার অপরাধে ব্রিটিশ কানুনের শৃঙ্খলে বন্দী রামকৃষ্ণ ফাঁসির আগ্রহে অপেক্ষমান।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

Pritilata waddeadar ramkrishna biswas

আমি ‘কাজিন সিস্টার’ সেজে কোন ক্রমে রামকৃষ্ণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি আদায় করলাম। প্রত্যেকদিন যেতাম হাসি-খুশি সপ্রতিভ ঐ বীরকে দেখার জন্যে। তাঁর ফাঁসি মঞ্চে আরোহণের পূর্বে আমি অন্ততঃ চল্লিশটি ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম। তাঁর সমাহিত রূপ, অপকট আলাপ-আলোচনা, মৃত্যুর তপস্যায় প্রশান্ত আত্মসমর্পণ, দ্বন্দহীন ভগবৎ ভক্তি, শিশু সুলভ সারল্য, প্রেমস্নিগ্ধ হৃদয়াবেগ, গভীর জ্ঞান, নিবিড় আত্মানুভূতি আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল; দুঃসাহসিকতার পথে চলবার সামর্থ্য আমার দশগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। রামকৃষ্ণদার ফাঁসির পরে সক্রিয়ভাবে বৈপ্লবিক কোন এ্যাকশনে যাবার আগ্রহ আমার প্রচণ্ড হয়ে ওঠে।’

কে এই রামকৃষ্ণ বিশ্বাস। কেন তাঁর ফাঁসি হয়েছিল? ঘটনা অনেকটা ক্ষুদিরাম বসুর মতো। এক অত্যাচারী ইংরেজ পুলিশকে হত্যা করতে গিয়ে অন্য একজনকে হত্যা করে ফেলেন। ১৯৩০ সাল। বাংলার ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ টিজে ক্রেগ। তিনি চট্টগ্রাম সফরে এসেছিলেন। অত্যাচারী ইংরেজ পুলিশকে হত্যা করার জন্য মাষ্টার’দা সূর্য দেন দায়িত্ব দিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ বিশ্বাস এবং কালীপদ চক্রবর্তীর উপর। ২র ডিসেম্বর চাঁদপুর রেলস্টেশনে ক্রেগকে লক্ষ্য করে গুলি চালালেও তা লাগে এসডিও তারিণী মুখার্জির শরীরে এবং মারা যান তিনি। বোমা, রিভলবারসহ গ্রেফতার।হন রামকৃষ্ণ বিশ্বাস এবং কালীপদ চক্রবর্তী।

রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের মৃত্যুদন্ড হয়। কালীপদ চক্রবর্তীকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম থেকে আলিপুর। বহু দূর। খরচ বেশি। রামকৃষ্ণের সঙ্গে কেউ দেখা করতে আসত না। বিল্লবী মনোরঞ্জন রায় প্রীতিলতাকে চিঠি লিখে সেই কথা জানিয়ে বিপ্লবীর সঙ্গে দেখা করতে বলেন।

রামকৃষ্ণের কাজিন পরিচয় দিয়ে আলিপুর জেলের কাছে দরখাস্ত করেন প্রীতিলতা। অমিত দাস ছদ্মনামে তিনি এই দরখাস্ত করেছিলেন। জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি দিয়েছিল। চল্লিশবার রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করেন প্রীতিলতা।১৯৩১, ৪ আগস্ট, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসী হয়ে যায়। বদলে যায় প্রীতিলতার জীবন।

তথ্যসূত্র : ‘ভারতে সশস্ত্র বিপ্লব’, ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায়।