গাঁজাখুড়ি নয়, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘর দেবে গাঁজা গাছ

বাড়ি, যা কিনা তৈরি গাঁজা গাছ দিয়ে। অবাক শোনালেও গাঁজাকে এতদিন সাইকো অ্যাকটিভ মাদক হিসেবে ও স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা শাস্ত্রে নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকলেও…

house made of cannabis plants

short-samachar

বাড়ি, যা কিনা তৈরি গাঁজা গাছ দিয়ে। অবাক শোনালেও গাঁজাকে এতদিন সাইকো অ্যাকটিভ মাদক হিসেবে ও স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা শাস্ত্রে নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকলেও এখন ইংল্যান্ডে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই বাড়িঘর তৈরির নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গাঁজা গাছ দিয়ে বানানো বাড়িতে আলো বাতাস চলাচল করে, যা বেশ আরামদায়ক। বাড়িটির দেওয়ালগুলো যে কাউকেই‌ পাটখড়ি দিয়ে ঘর বানানোর কথা মনে করিয়ে দেবে।

   

বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, গত শীতে গাঁজার গাছ দিয়ে নির্মিত ঘরগুলিতে ২৪ ঘন্টাই ঘর গরম ছিল। ফলে ঠান্ডার দেশ হলেও হিটিং মেশিন চালু করার প্রয়োজন পড়েনি। এমন টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব ক্ষেত্রে আশার আলো দেখাচ্ছে গাঁজা গাছ। এমনিতে দ্রুত বর্ধনশীল। গাঁজার গাছের কার্বন শোষণ ক্ষমতাও বেশি।

গাঁজা গাছ যখন বাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এটাকে সাধারণত হেমক্রিট বা লাইম হেম ক্রংকিটে পরিণত করা হয়। এটি তৈরি করা হয় গাঁজা গাছের কান্ড, শিকড়, জল ও চুনের মিশ্রণে। হেমক্রিট শক্তিশালী এবং গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমণ হ্রাস করে। এটি অক্ষত থাকা অবস্থায় কার্বণ শোষণ করতে। গাঁজা গাছকে কাজে লাগিয়ে নির্মাণ শিল্পে আরও উন্নত মাত্রায় কার্বণ মুক্ত গড়ে তোলা যাবে।

গবেষণা অনুসারে, ১ হেক্টর গাঁজার বাগান ৯-১৫ টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে থাকে। গাঁজার গাছ বাড়তেও সময় লাগে মাত্র পাঁচ মাস। মাটি উর্বর করতে ও মাটি থেকে ভারী ধাতু অপসারণ করতে গাঁজা গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ কার্বণ নিঃসরণ হয়। এক্ষেত্রে হেমক্রিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। হেমক্রিট কংক্রিটের মতো স্তরে স্তরে সজ্জিত করা যায়না। কাঠ বা পাথরের মতো ভার বহনকারী উপকরণের সাথে ব্যবহার করতে হয়। কিন্ত এটি পেট্রো ক্যামিকাল ভিত্তিক উপকরণ যা গ্লাস ও ফোম বোর্ডের থেকে কম কার্বন নিঃসরণ করে থাকে।

হেমক্রিটের উচ্চ তাপধারণ ক্ষমতার জন্য এটি উত্তপ্ত হয় এবং ধীরে ধীরে তাপ ছাড়ে। পাশাপাশি দিনের বেলা ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি হাইড্রোস্পফিক হওয়ায় আদ্রতা শোষণ করে ও ছাড়ে। বিশ্বের নির্মাণ শিল্প এখন কার্বন মুক্ত বাড়ি বানানোয় ঝুঁকছে। ফলে টেকসই উপকরণের চাহিদা বাড়ছে। এই ক্ষেত্রে গাঁজা গাছ টেকসই ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এর ব্যবহার ব্যাপক ভাবে শুরুর আগে এর কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে‌।

এর মধ্যে রয়েছে সরকারের আইন প্রযুক্তিগত সনদ, গাঁজার চাষ বৃদ্ধি, সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় তহবিল, অবকাঠামোর পরিবর্তন। হেমক্রিট দিয়ে বর্তমানে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাতে স্বল্প বাজেটে বাড়ি তৈরি করছেন পরিবেশ নিয়ে সচেতন স্থপতিরা। এসব অঞ্চলে গাঁজার ওপর নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ওনারা এটি করতে পারছেন।