Offbeat News: বাংলা তার নিজের মেয়েকে ভুলে যায়

বিশেষ প্রতিবেদন: বাংলা যদি তাঁর নিজের মেয়েকেই চায়, তাদের অনেককে ভুলেও যায় কেন? প্রশ্ন উঠবে কোন সে বাংলার মেয়ে? কী কারণে তাঁর গুণগান করবে বাঙালি?…

Arati Gupta (Saha) Bengali long-distance swimmer

বিশেষ প্রতিবেদন: বাংলা যদি তাঁর নিজের মেয়েকেই চায়, তাদের অনেককে ভুলেও যায় কেন? প্রশ্ন উঠবে কোন সে বাংলার মেয়ে? কী কারণে তাঁর গুণগান করবে বাঙালি? মনে পড়ল ? মনে নেই তো? এভাবেই হারিয়ে যায় বাংলার মেয়েরা। যেমন বাঙালির স্মৃতি থেকে একেবারেই উবে গিয়েছেন আরতি সাহা। গুগলে লিখে দেখুন, বলে দেবে তিনি ‘জলপরী’।

কীভাবে আরতি সাহা ‘জলপরী’ হয়ে গিয়েছিলেন জানতে গেলে ফিরতে হবে ৬১ বছর আগে। ইংলিশ চ্যানেল পাড় হবে এক ভারতীয় মহিলা সাঁতারু, এটা ভাবাই যেত না।

ছ’বার ইংলিশ চ্যানেল পার করা সাঁতারু ব্রজেন দাস অবশ্য ভাবতে পেরে আঠেরো বছরের আরতির নাম সুপারিশ করে দেন। কীর্তি স্থাপন করতে ১৯৫৮ সালে ২০হাজার টাকা প্রয়োজন। তৎকালীন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের পরিবারের সে সামর্থ্য কোথায়?

কে দেবে এত টাকা? মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন গিয়েছিল। শুনে তিনি বলেছিলেন, “ইংলিশ চ্যানেল চোখে দেখেছ! পার হবে বলছ?” পরে অবশ্য স্নেহের পরশে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “সকালে টাকা পৌঁছে যাবে। হাসি মুখে ফিরতে পারবে তো মা?” প্রশিক্ষক শচীন নাগের তত্ত্বাবধানে ১৮ বছর বয়সে ইংলিশ চ্যানেল পার করতে নামেন। কিন্তু প্রথমবার পারেননি।

তবে জেদটাও ছাড়েননি। আবারও শুরু হয়েছিল কঠোর অনুশীলন। সাফল্য আসে পরের বছরেই, অর্থাৎ ১৯৫৯ সালে। ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম এশিয়ান মহিলা সাঁতারু হিসাবে ইংলিশ চ্যানেল জয় করেন আরতি । ৬৭.৫ কিলোমিটার কঠিন জলপথ মাত্র ১৬ ঘণ্টা ২০ মিনিটে পার করেছিলেন তিনি। ১৯৬০ সালে মেলে প্রথম ভারতীয় মহিলা ক্রীড়াবিদ হিসাবে পদ্মশ্রী।

Arati Gupta (Saha) Bengali long-distance swimmer

শুধু ইংলিশ চ্যানেল পার করেই কী জলপরী বনে যাওয়া? না। ব্রজেন দাস যার উপর বিশ্বাস রাখছেন তার নিশ্চয় আরও কৃতিত্ব আছে। তবেই না……। ১৯৪৫ থেকে ১৯৫১ সালের মধ্যে ২২টি রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় তিনি জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে তিনি মুম্বইতে অনুষ্ঠিত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় দুটি ইভেন্টে রূপো ও ব্রোঞ্জ জেতেন।

১৯৫১ সালে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় ১ মিনিট ৩৭.৬ সেকেন্ডে ১০০ মিটার অতিক্রম করে ডলি নাজিরের রেকর্ড ভেঙে দেন। ১৯৫২ সালে, হেলসিঙ্কিতে সামার অলিম্পিকে আসরে ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন কলকাতার এই মেয়ে। মাত্র ১২ বছর বয়সে মেয়েটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে, যা আজও রেকর্ড।

চার বছর বয়সে চাঁপাতলা ঘাটে স্নান করতে গিয়ে সাঁতার শেখা শুরু। আগ্রহ দেখে বাবা ভরতি করে দেন শোভাবাজারের হাটখোলা সুইমিং ক্লাবে। প্রথমবার নজর কাড়েন ১৯৪৬ সালে, বয়স তখন সবে পাঁচ পেরিয়েছে। শৈলেন্দ্র স্মৃতি সাঁতার প্রতিযোগিতায় ১১০ গজ দূরত্বের ফ্রি স্টাইল সাঁতারে স্বর্ণপদক জেতেন। তারপর যা হয়েছে তা ইতিহাস।

১৯৯৪ সালের ২৩ আগস্ট কলকাতার একটি নার্সিং হোমে দীর্ঘ ১৯ দিন ধরে জণ্ডিস ও এনকেফালাইটিসে ভোগার পর আরতি সাহার মৃত্যু হয়, মাত্র ৫৪ বছর বয়সে।

১৯৯৯ সালে তার ইংলিশ চ্যানেল জয়ের ৪০তম বর্ষপূর্তিতে তার সম্মানে একটি ৩ডি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিল ভারত সরকারের পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট। গত সাতাশ বছরে আর তাঁকে কেউ মনে রাখেন নি। গত বছর গুগল ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিনকে স্মরণে রেখে ডুডল বানায়। নাম ছবি দেখেও অনেকে বুঝতে পারেনি। গুগল তো, সব জানিয়েই দেয়। তারপরেও, না তেমন কোনও আলোচনা হয় না…এই তো অলিম্পক হয়ে গেল। কেউ ভারত থেকে সাঁতারে কিছু করছেন বলে শুনলেন? বাংলার কোনও মেয়ে তো অনেক দূরের কথা। তবু বাঙালি ভুলে যায়……।