ফাঁসির দড়িকে চুম্বন করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন এই বিপ্লবী

Special Correspondent: নির্মলজীবন ঘোষ (Nirmaljivan Ghosh) স্বাধীনতা সংগ্রামের আরও একজন শহীদ, যিনি ফাঁসির দড়িতে চুম্বন করে আলিঙ্গন করেন। নির্মলজীবন ঘোষের এক ভাই ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের…

Nirmaljivan Ghosh i

Special Correspondent: নির্মলজীবন ঘোষ (Nirmaljivan Ghosh) স্বাধীনতা সংগ্রামের আরও একজন শহীদ, যিনি ফাঁসির দড়িতে চুম্বন করে আলিঙ্গন করেন। নির্মলজীবন ঘোষের এক ভাই ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদ নবজীবন ঘোষ। নবজীবন পুলিসের অত্যাচারে জেলেই প্রাণ ত্যাগ করেন।

এদের আরো একজন ভাই ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান বিপ্লবী। বলতে গেলে এনাদের পরিবার ও মহারাষ্ট্রের এক পরিবারের তিন ভাই ‘চাপেকর বন্ধু’ নানে পরিচিত। এই মহারাষ্ট্রের পরিবার ও বাংলার নির্মলজীবন ঘোষের পরিবার, এই দুই পরিবারের ঘটনা অনেকটা একই বলতে গেলে।

নির্মলজীবন ঘোষ হুগলির ধামসিন এর বাসিন্দা ছিলেন। তার জন্ম হয়েছিল ৫ ই জানয়ারি ১৯১৬ সালে। তার পিতার নাম ছিল যামিনীজীবন ঘোষ। মেদিনীপুর কলেজে পড়াশোনা করছেন। কলেজের আই.এ. ক্লাসের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি গোপন বিপ্লবী বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলে যোগ দান করেন। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার অত্যাচারী জেলাশাসক বার্জকে গুলি করার ব্যাপারে জড়িত ছিলেন। এই ষড়যন্ত্র ও হত্যার অভিযোগে বিচারে তার প্রাণদণ্ড হয়। মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে তিনি ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন। একটা সময়, যখন বিপ্লবীদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ সাহেব। এবার বার্জ সাহেব কে পৃথিবী থেকে সরাতে না পারলে সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

নির্মলজীবন ঘোষ ছাড়াও এই ষড়যন্ত্রের দায়িত্বে ছিলেন আরো কয়েকজন বিপ্লবী। দিনটি ছিল ১৯৩৩ সালের ২ রা সেপ্টেম্বর। বিপ্লবীরা বেরিয়ে পড়লেন তাদের পথের কাটাকে সরিয়ে দিতে। শ্বেতাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ সাহেব মেদিনীপুর কলেজ মাঠে মোহামেডান স্পোর্টিং-এর বিরুদ্ধে মেদিনীপুর ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলতে নামেন। বিপ্লবীদের মধ্যে দুজন খেলার ছলে বল নিয়ে মাঠে নামেন বিপ্লবী অনাথবন্ধু পাঁজা ও বিপ্লবী মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত। মাঠেই দুই বন্ধু বার্জ সাহেবকে আক্রমণ করলে তিনি মারা যান। জোন্স নামে একজন ইংরেজ আহত হন। পুলিস প্রহরী দুজনের উপর পাল্টা গুলি চালায়। এতে তারা দুজন নিহত হন এবং অপর সঙ্গীরা পলায়ন করতে সক্ষম হন।

এর পর বাকি বিপ্লবীরা ধরা পড়েন, তাদের মধ্যে হলেন নির্মলজীবন ঘোষ, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়, নন্দদুলাল সিং, কামাখ্যা ঘোষ, সুকুমার সেন, সনাতন রায়। এবার বিচারের পালা, ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলো তিন বিপ্লবীকে। ২৫ শে অক্টোবর ১৯৩৪ সালে ফাঁসি কার্যকর করা হয় ব্রজকিশোর চক্রবর্তী ও রামকৃষ্ণ রায় এর, ২৬ শে অক্টোবর নির্মলজীবন ঘোষ ফাঁসির মঞ্চে শহীদ হন। নন্দদুলাল সিং, কামাখ্যা ঘোষ, সুকুমার সেন এবং সনাতন রায়-এর যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ড দেওয়া হয়।