বাংলাদেশ সদ্য স্বাধীন হয়েছে। ১৯৭১ সালের রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের পর প্রতিবেশি দেশে হুড়মুড়িয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন নেতাজীর (netaji) ভ্রাতুষ্পুত্র শিশির বসু। কলকাতা থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য ফের এক দীর্ঘ ড্রাইভ করেন। এমনই দীর্ঘ ড্রাইভিং তিনি করেছিলেন তাঁর রাঙাকাকুকে গোপনে কলকাতা থেকে গোমো পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। দুই যাত্রায় তাঁর লক্ষ্য দুরকম।
ঢাকার সংবাদ মাধ্যম ‘বাংলা ট্রিবিউন’ জানাচ্ছে, সেই ঐতিহাসিক নিমন্ত্রণ পর্বের কথা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথমবার শিশির বসু গোপনে সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর তাঁর দ্বিতীয় যাত্রা ছিল বাঙালির আরও এক বিশ্বনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিমন্ত্রণ করা। নেতাজী পকিববারের ইচ্ছে কলকাতায় নেতাজী ব্যুরোর তরফে সুভাষচন্দ্র বসুর ৭৫তম জন্মদিবসে যাতে বঙ্গবন্ধু আসেন।
পঞ্চাশ বছর আগের কথা। বাংলাদেশে ঢুকতে তখন ভারতীয়দের ভিসা লাগত না। শিশির বসু কলকাতা থেকে ঢাকা চলে আসেন গাড়ি চালিয়ে। ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি তাঁর গাড়ি গিয়ে ব্রেক কষল ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বিখ্যাত বাড়ির সামনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশির বসু সরাসরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হাজির। তাঁকে স্বাগত জানান বঙ্গবন্ধু। এরপর শিশির বসু আবদার করেন, বিশ্বের একমাত্র বাঙালি রাষ্ট্রনায়ককে কলকাতা নেতাজীর জন্মজয়ন্তীতে আসতেই হবে। আবেগমথিত হয়ে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ছাত্রাবস্থায় কলকাতায় রাজনীতি শুরু করেন। রাজনৈতিকভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে না থাকলেও মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিতে তৎকালীন সুভাষচন্দ্র বসু একজন নায়ক। ফলে আমন্ত্রণ নিতে দ্বিধা করেননি বাংলাদেশের জাতির পিতা। এদিকে সদ্য গঠিত বাংলাদেশ জুড়ে প্রশাসনিক ক্ষেত্র টালমাটাল। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে যাওয়াটাই কঠিন হয়ে পড়ল। তিনি দু:খের সঙ্গে অপরাগতা জানালেন। তখনই শিশির বসু নিলেন বিশেষ উদ্যোগ। তাঁর রাঙাকাকু নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বার্তা রেকর্ড করানোর উদ্যোগ নিলেন। ঐতিহাসিক সেই বার্তার আশ্বাস নিয়ে ফের ঢাকা থেকে ট্যাক্সি চালিয়ে কলকাতায় ফিরে এলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর সেই বার্তার কিছু অংশ, ❝ নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের ত্যাগ ও তিতিক্ষার আদর্শ সারা বিশ্বে মুক্তিসংগ্রামে নিবেদিত স্বাধীনতার যোদ্ধাদের চিরকাল পথ আলোকিত করে রাখবে।❞
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু দ্রুত উদ্যোগ নেন। বাংলাদেশ বেতারের কর্মীদের সাহায্যে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব নিলীমা ইব্রাহিম কলকাতায় আসেন সেই বক্তব্য রেকর্ড নিয়ে। এই বিখ্যাত বার্তা দীর্ঘদিন অব্যবহৃত ছিল। নতুন করে সেটি গবেষকদের শোনার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে কলকাতায়।
ঢাকায় শিশির বসুর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ ফ্রেমবন্দি করা হয়। নেতাজীর একটি ছবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উপহার দেন শিশিরবাবু।