Sports Special: প্রত্যাঘাতের অপর নাম মহিন্দর

বিশেষ প্রতিবেদন: বাবার ‘অত‍্যাচার’, বোলারদের মার সমস্ত কিছুকে সহ্য করে নিজেকে ভারতের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার বানিয়েছিলেন মহিন্দর অমরনাথ। একেই বাবা পছন্দ করতেন না হেমলেটের ব্যবহার।…

Mohinder amarnath

বিশেষ প্রতিবেদন: বাবার ‘অত‍্যাচার’, বোলারদের মার সমস্ত কিছুকে সহ্য করে নিজেকে ভারতের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার বানিয়েছিলেন মহিন্দর অমরনাথ।
একেই বাবা পছন্দ করতেন না হেমলেটের ব্যবহার। কিন্তু তা বলে ক্রিকেট শেখাতে মিলিটারি ট্রেনিং! হ্যাঁ, এটাই করেছিলেন লালা। পাশাপাশি, নিজের বাগানের চারিদিকে টব ফাঁকা ফাঁকা করে সাজিয়ে তার মাঝখান দিয়ে শট খেলে প্লেসমেন্ট করতে শেখান তিনি। সোজা কথায় কীভাবে ফিল্ডারদের মাঝখান দিয়ে বল গলাতে হবে তার শিক্ষা পেয়েছিলেন তিন ভাই। বেশি কাজে লাগিয়েছিলেন মহিন্দর।  শর্ট বল, যাতে পুল এবং হুক করার জন্য আলাদা ব্যবস্থা ছিল। বাবার শাসন মেনেই বিশ্বজয়ী হয়েছিলেন মহিন্দর অমরনাথ।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয়। সঙ্গী ছিলেন ব্রিজেশ প‍্যাটেল, কারসন ঘাউড়ি, সৈয়দ কিরমানীর মতো ভবিষ্যতের ক্রিকেটাররা। ১৯৬৯, বিল লরির অস্ট্রেলিয়া ভারতে টেস্ট সিরিজ খেলতে। মিলল প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলার সুযোগ। তিনি হাফ সেঞ্চুরি সহ দুটি উইকেট নেন। দরজা খুলে যায় ভারতীয় ক্রিকেট দলে। অভিষেক ১৯ বছর বয়সে। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। বাদ গেলেন, ফিরলেন ৭ বছর পরে। এও এক আঘাত , যা সামলে উঠেছিলেন মহিন্দর। ফিরে আসেন অলরাউন্ডার হয়ে।

৮০ দশকের শুরু থেকে আন্তর্জাতিকে নিজের জাত চেনাতে শুরু করলেন মহিন্দর। ভয়ঙ্কর চোট পেলেন একাধিকবার। ইমরান খানের বাউন্সারে পাকিস্তানে অজ্ঞানই হয়ে গিয়েছিলেন, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মেরুদণ্ডে চোট পেলেন। সে দেশে কাউন্টি খেলতে গিয়ে রিচার্ড হ‍্যাডলির বলে হুক করতে গিয়ে মাথার পিছনে চোট পান। বহু দিন মাঠের বাইরে। ফিরে এলেন লড়াই করে।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

Mohinder amarnath kapil dev 1982 World Cup

১৯ বছরের টেস্ট ক‍্যারিয়ারে টেস্ট খেলেছেন ৬৯ টি, ১১ টি সেঞ্চুরি করেছেন। রয়েছে ৪২ গড়ে ৪৩৭৮ রান। ১৯৮২-৮৩ মরসুম তাঁর কেরিয়ারের সেরা। পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুটি সিরিজের ১১ টি ম‍্যাচে ১২০০ এর কাছাকাছি রান করেন । ৬ টেস্টের সিরিজ ভারত হারলেও তিনি প্রায় ৬০০ রান করেন। অন‍্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৫ টেস্টের সিরিজে ফের ৬০০ এর কাছাকাছি রান করেন।

এরপর ইংল্যান্ডে শুরু হয় তৃতীয় একদিনের বিশ্বকাপ। আগের দুবারে অসম্ভব খারাপ পারফরম্যান্স করা ভারতকে গুরুত্ব দেয়নি কোনও দলই, এমনকি প্রথম বার বিশ্বকাপ খেলতে আসা জিম্বাবোয়েও। ব্যাটে বলে বিশ্বকে চমকে দিন অমরনাথ।

অসাধারণ লড়াই করে যখন ভারত সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হলো তখন ইংল্যান্ডের পত্র পত্রিকায় ইংল্যান্ডকে প্রায় চাম্পিয়ন ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। আর ভারতের মতো একটি যে কোনো সুযোগই পাবেনা সেমিতে তাও ফলাও করে লেখা হলো। কিন্তু, পুরো ভারতীয় দলের সাথে এই অলরাউন্ডারও অন‍্য কথা ভেবেছিলেন।

প্রথমে ২১৩ রানে ইংল্যান্ডকে আটকে রাখতে ১২ ওভারে মাত্র ২৭ রান দিয়ে ডেভিড গাওয়ার ও মাইক গ‍্যাটিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট এবং পরে ব‍্যাট করতে নেমে দায়িত্বশীল ৪৬ রানের ইনিংস ভারতের স্বপ্ন ছোঁয়ার শেষ ধাপে এনে দাঁড় করিয়ে থিয়েছিল। ম‍্যাচের সেরা তাঁকে ছাড়া আর কাউকে ভাবার ছিল না, ভাবাও হয়নি।

কিন্তু, স্বপ্ন দেখা আর তাঁর বাস্তবায়নের মধ্যে জমিন-আশমান পার্থক্য থাকে। ফাইনালে সেই ক্লাইভ লয়েডের প্রায় অপরাজেয়,ভয়ঙ্কর ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাঁদের তৃতীয়বার বিশ্বজয় আটকাতে হলে অস্বাভাবিক কিছু করতে হবে। যদিও ভরসা বলতে গ্রুপ পর্বের ম‍্যাচে ওই দলের বিরুদ্ধেই জয় ছিল। টসে জিতে কিংবদন্তি লয়েড যখন ভারতকে প্রথমে ব‍্যাট করবার আমন্ত্রণ জানালো তখন বিশ্ব অস্বাভাবিকতা কিছুই দেখলো না বা আভাসও পেলো না।কয়েকটি ছোট ছোট ইনিংসে ভিত্তি করে ৫৫ ওভারের আগেই যখন ১৮৩ রানে আটকে গেলো ভারত, তখন বহু সমর্থকই আশা ছেড়ে দিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের উপর বুলডোজার চালালেন ওই অলরাউন্ডার। ভিভ রিচার্ডের অসাধারণ কিছু শট ছাড়া এমন মহান ব‍্যাটিং লাইন আপের কেউ দাঁড়াতেই পারলেন না। মাত্র ১৪০ রানে গুটিয়ে দিয়ে ভারত বিশ্বজয় করলো, যা পরবর্তীতে ভারতীয় ক্রিকেটের রূপরেখায় পাল্টে দিয়েছে।

আর সেই মহান অলরাউন্ডার প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনালে ম‍্যাচের সেরা হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। লর্ডসের ব‍্যালকনিতে অধিনায়ক কপিলের সঙ্গে তাঁর বিশ্বকাপ হাতে ছবি ভারতীয় ক্রিকেট ফ্যানদের মনের মনিকোঠায় থেকে গিয়েছে।