Afghanistan: তালিবানি ফতোয়ায় গণবিবাহে আসেইনি কনেরা! বরের দল ছুটল বউ ধরতে

বিয়ে মানেই খরচের বহর। পৃথিবীর যেকোন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলভেদে বর কিংবা কনে পক্ষের বিয়েতে খরচ হয় কয়েক লাখ থেকে শুরু করে প্রায় কয়েক কোটি টাকা…

বিয়ে মানেই খরচের বহর। পৃথিবীর যেকোন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলভেদে বর কিংবা কনে পক্ষের বিয়েতে খরচ হয় কয়েক লাখ থেকে শুরু করে প্রায় কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত। বিয়েতে এমন দেদার খরচ নিয়ে রয়েছে বহু রকমের সমালোচনা। তবে বিশাল খরচের এই রেওয়াজ যে শুধু কোন একটি দেশের তা কিন্তু নয়। প্রায় সব দেশের চিত্র একই রকম। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রতিককালে বিয়ের হারও কমছে উল্ল্যেখযোগ্য হারে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় খরচের ভয়ে বিয়ে করছেন না অনেকে। ফলে কমছে জনসংখ্যা। তবে সামাজিক সমস্যা যেখানে সেখানেই সব থেকে সুন্দর সমাধান নিয়ে হাজির আফগানিস্তান। এবার দেশটিতে খরচ সামাল দিতে আয়োজন করা হয়েছে গণবিয়ের। একদিনের এই আয়োজনে বিয়ে সেরে নিয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক যুবক-যুবতী।

গত সোমবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে আয়োজন করা হয়েছে এরম অদ্ভুত বিয়ের। বছরখানেক আগে মার্কিন সেনা চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তান পুনর্দখল করেছে তালিবানরা। এরপর থেকেই দেশটির উপর দেওয়া হয়েছে নানা নিষেধাজ্ঞা। ফলে আগে থেকেই অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর রাষ্ট্রটির অর্থনীতি দিনে দিনে আরও খারাপ হয়েছে। জীবন মান কিছুটা বাড়লেও তা এখনও সন্তোষজনক জায়গায় পৌঁছায়নি। ফলে গত কয়েক বছর দেশটিতে অপেক্ষাকৃত ধনীরা বিয়ে করলেও কাবুলের দারিদ্র কবলিত অঞ্চলগুলোতে পারিবারিক বিয়ের হার কমেছে উল্ল্যেখযোগ্যহারে।

এর কারণ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে দেশটির অতিরিক্ত বিয়ের খরচ। একেবারেই সাধারণমানের বিয়ের অনুষ্ঠানে খরচ হচ্ছে প্রায় ২.৫ থেকে ৩ লাখ আফগানি টাকা। অথচ দেশটির মানুষের দৈনিক আয় ৩ থেকে ৭ শত আফগানি। ফলে সমাজের নিম্ন শ্রেণির মানুষদের জন্যে বিয়ে এক প্রকার অভিশাপে পরিণত হয়েছিল।

এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে সালেব ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থা। প্রায় ৩ বছর আগে তারা একটি গণবিয়ের আয়োজন করবে বলে ঘোষণা করে। সোশ্যাল মিডিয়াতে সেই ঘোষণায় বিয়েতে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রায় ১২০০ যুবক-যুবতী। যদিও সেবারে তারা ঘোষণা অনুযায়ী বিয়ের আয়োজন করতে পারেনি। এর ৩ বছর পর চলতি বছরে তারা আবারও খোঁজ নেয় আবেদন করা সেই আবেদন করা ৬০০ জুটির। দেখা যায় সেই তালিকার প্রায় ৫০ টি জুটির এখনও বিয়ের আয়োজন করতে পারেনি। তাদের নিয়েই সালেব ফাউন্ডেশন বিয়ের আয়োজনের ঘোষণা দেয়। সালেব ফাউন্ডেশন বিবাহিতদের পক্ষ থেকে খাবার দাবার এবং বরযাত্রীদের গাড়ির ব্যবস্থা করেছিল।

তবে শর্ত ছিল বিয়েতে ঠিক কতজনকে নেমতন্ন করা যাবে তাই নিয়ে। একেকটা জুটিকে সর্বোচ্চ ৩৫ জন করে অতিথিদের আমন্ত্রণ করার সুযোগ দিয়েছে সালেব ফাউন্ডেশন। ফলে মোট অতিথিদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১,৭৫০। যদিও সালেব ফাউন্ডেশন জানিয়েছে তারা প্রায় ২ হাজার অতিথিদের খাবার আয়োজন করেছে।

তবে তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে এখানেও নিষিদ্ধ ছিল মহিলাদের আগোমন। ফলে মহাসমারহে বিশাল এই বিয়ের আয়োজনে এই আমন্ত্রণ পাননি কোন মহিলা অতিথি। এমনকী আনা হয়নি কনেদেরও। বর এবং কনেপক্ষ উভয় তাদের অতিথিদের নেমন্তন্ন খাইয়ে এখান থেকে গাড়িতে করে নিয়ে চলে গিয়েছে নিজ নিজ এলাকার মসজিদে। পরে মসজিদে করানো হয় বিয়ে।

সালেব ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগে যারা বিয়ে করেছেন তাদের উপহার দেওয়া হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার আফগানি বা ২ হাজার ডলার। ফলে বিবাহিতদের কোন প্রকার খরচ হয়নি। তবে গণবিয়ের এই রীতি এবার এই প্রথম নয়। এর আগে করোনা কালে হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনে এমন আয়োজন করেছিল। যদিও সেবারে করোনার মধ্যে বিয়ে হওয়ায় নানা সমালোচনা হয়েছিল। এবারে সমালোচনা হচ্ছে মহিলাদের নেমন্তন্ন না করায়। তবে যারা বিয়ে করেছেন তারা সবাই দারুণ খুশি।