Long Tailed Shrike: খুনের নেশায় ঘোরে কসাই পাখি, শিকারেই পায় আনন্দ

পাখির নাম কসাই। নাম শুনে অনেকেই হয়ত অবাক হবেন যে পাখির নাম আবার কসাই হয় নাকি। কিন্তু এদের আচরণ এতটাই নিষ্ঠুর যে কসাই পাখি নামেই…

Long Tailed Shrike

পাখির নাম কসাই। নাম শুনে অনেকেই হয়ত অবাক হবেন যে পাখির নাম আবার কসাই হয় নাকি। কিন্তু এদের আচরণ এতটাই নিষ্ঠুর যে কসাই পাখি নামেই পরিচিতি লাভ করেছে। অদ্ভুত শিকার ধরার ক্ষমতা আছে এদের। পেট ভরে গেলেও পাখিটির থামেনা নিষ্ঠুরতা। সুযোগ পেলে প্রয়োজনের বেশি শিকার করে। বাড়তি শিকার মেরে তা কাঁটা বা অন্য কোনও চোখা জিনিসে গেঁথে ফেলে। পরে সময় বুঝে তা খায়। অর্থাৎ শিকারের আচোরণ বা সভাব অনেকটাই কসাইয়ের মতো বলে এদের কসাই পাখি নামে ডাকা হয়ে থাকে।

জীবন্ত শিকার ছিঁড়ে, থেঁতলে, টুকরো-টুকরো করে খায় তারা। এই সময় প্রাণ নিয়ে কোনওরকমে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে শিকারটি। কিন্তু কসাই পাখির ঠোঁট ও দাঁত এমনভাবে গঠিত যে একবার ধরা পড়লে আর ছুটে যাওয়ার উপায় নেই। খাদ্য তালিকায় আছে পোকামাকড়, ইঁদুরের বাচ্চা, টিকটিকি, চিরু সাপ ও গেছো সাপে বাচ্চা, কেঁচো, ছোট পাখি, পাখির ছানা সহ নানারকমের ঘাস ফড়িং ও গঙ্গা ফড়িং। খোলামাঠের এই লম্বা লেজওয়ালা পাখিরা তুখোড় শিকারি। গাছের মাথায় বসে এরা চোখ ঘোরায় চারপাশে। শিকার নজরে পড়লে সেটি ধরে ফিরে আসে আগের জায়গায়।

দাঁতগুলোয় গভীর খাঁজ থাকার কারণে অনেকেই কসাই পাখিকে কুমীর পাখিও বলে থাকেন। এদের ঠোঁট খুবই শক্তিশালী। উপরের ঠোঁট বঁড়শির মতো বাঁকা থাকে অর্থাৎ ঠোঁটে কিছু আটকা পড়লে তার খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

কসাই পাখির শারীরিক শক্তিও অন্যান্য পাখির তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশ এই পাখিটির দেখা পাওয়া যায়। তবে অঞ্চল অনুযায়ী নামের ভিন্নতা থাকায় একটু অসুবিধা হয় সবারই। কসাই বাদেও এরা লেজ কসাই, বাঘাটিকি, অঞ্জনা, চামচ কসাই, ল্যাঞ্জা লাটোরা চিকচিকে নামেও পরিচিত। এদের ইংরাজি নাম Long Tailed Shrike।

নামে কসাই হলেও এরা দেখতে খুব সুন্দর। মাথার রঙ কালো, ডানা ও লেজের বেশির ভাগ অংশও কালো,গলা-বুক ও পেট সাদা। কালো ডানার উপর রয়েছে সাদা ছোপ। পেটের নিচের অংশ সাদাটে ও লালচে হলুদ। পিঠ হালকা লালচে ও খয়েরি হলদেটে। লেজ-ডানা প্রায় সমান এবং পাখির শরীররের তুলনায় যথেষ্ট বড়। যে কারণে একটু দূর থেকে দেখলেই লেজই আগে নজরে আসে।

স্ত্রী ও পুরুষ কসাই পাখি দেখতে একই রকম। এরা গ্রামাঞ্চলের ঝোপ-ঝাড়, খোলা মাঠ ও ফসলী জমির আশপাশে একাকী বিচরণ করে। বিচরণ এলাকাও থাকে নির্দিষ্ট। নিজের এলাকা ছেড়ে খুব দূরে সাধারণত যায়না। অন্য এলাকার পাখি তাদের এলাকায় আসবে এমনটিও সহ্য করতে চায়না। এই কারণে অনেকেই এই পাখিকে হিংসুটে পাখিও বলে।

শীতকালে এরা পরিযায়ী হয়। গ্রীষ্মকালে তাদের প্রজননের সময়। এই মরশুমে স্ত্রী ও পুরুষ পাখি জোড়া বাঁধে। দুজন মিলে কাঁটা, খরকুটো, উল, তুলো দিয়ে গাছের বেশ উপরে বড় বাটি আকৃতির বাসা বাঁধে। তারপর স্ত্রী পাখিটি ডিম পাড়ে ৩ থেকে ৫ টি। ডিম ফুটে ছানা হয় ১৪ থেকে ১৭ দিনে।