Exclusive: স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি করে প্রেমিক-প্রেমিকার ব্রেক আপ

News Desk, Jalpaiguri: ২০১৯ সালের ৩ জুন দিনটায় ধূপগুড়ির এক যুবক অনন্ত বর্মন উঠে এসেছিল সংবাদ শিরোনামে। দীর্ঘদিনের দিনের প্রেমিকা লিপিকাকে ফিরে পেতে তার বাড়ির…

breakup

News Desk, Jalpaiguri: ২০১৯ সালের ৩ জুন দিনটায় ধূপগুড়ির এক যুবক অনন্ত বর্মন উঠে এসেছিল সংবাদ শিরোনামে। দীর্ঘদিনের দিনের প্রেমিকা লিপিকাকে ফিরে পেতে তার বাড়ির সামনে তিরিশ ঘন্টা ধর্ণায় বসেছিল অনন্ত৷ শেষাবধি চারহাত এক হয়ে মধুরেণ সমাপয়েত হয়েছিল অনন্ত লিপিকার প্রেম কাহিনীর৷ নেট দুনিয়ায় ঝড় তুলেছিল এই ধর্ণা বিবাহের সাতকাহন৷ সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে রাজ্য তথা দেশে ভাইরাল হয়েছিল ধূপগুড়ির নাম৷ 

তবে, সব গল্পের নটেগাছ যে মুড়োবেই তার তো মানে নেই। অনেক গল্প মাঝপথেই খেই হারিয়ে ফেলে। তবে গল্পের জগতে অন্তে মিল হলে যেমন কমেডি হয় তেমনি বিয়োগান্তক গল্প অর্থাৎ ট্রাজেডিরও কিন্তু প্রশংসক প্রচুর। তবে সব ট্র‍্যাজেডিই যে কষ্টের হবে এমনটা নাও হতে পারে। এমনই এক কমিক রিলিফ দেওয়া রিয়েল লাইফ ট্র‍্যাজেডিও ফের সংবাদ শিরোনামে। তাও আবার খোদ ধূপগুড়ির বুকেই।

জলপাইগুড়ি জেলার এই আপাত নিরীহ পুর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কামাতপাড়া এলাকায় ঘটে গিয়েছে এমনই এক কমিক ট্র‍্যাজেডি। সত্যিকারের ট্র‍্যাজেডিই বটে। দীর্ঘদিনের প্রেম ভেঙে যাওয়ার ট্র‍্যাজেডি৷ তবে দুঃখের এই আবহেও কমিক রিলিফ রয়েছে পরতে পরতে ঠাসা। এলাকারই এক যুবক ও যুবতীর প্রেম দীর্ঘদিনের। ফেসবুক থেকে হোয়াটস অ্যাপ, তারপর টেলিকলের মাধ্যমে প্রেম গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে অনেক আগেই। মুখোমুখি বসা, খুনসুটি, গল্পগাছা, আড্ডা সবই হয়েছে চুটিয়ে। সেই প্রেমকে পরিণতির মোহনায় নিয়ে যেতেই এরপর প্রেমিক পাড়ি দেয় কাজের খোঁজে অন্য শহরে। জুটে যায় চাকরি আর বেড়ে যায় ব্যস্ততা। কথায় বলে প্রকৃতি ও প্রেম শূন্যতাকে মান্যতা দেয় না। সেই সুত্রেই প্রেমিকের ব্যস্ততার ফাঁকে প্রেমিকার ফোনে ভাইরাসের মতো তৃতীয় পক্ষের প্রবেশ। মোবাইল থেকে জীবনেও। এদিকে পুরোনো প্রেমিক ধীরে ধীরে টের পায় পুরোটা। বাড়ি ফিরে নজরদারি চালিয়ে হাতেনাতে ধরে ফেলে প্রেমিকার দ্বিতীয় প্রেম। বাস যা হওয়ার তাই হলো। নেটিজেনদের ভাষায় বলল ব্রেক আপ আরকি৷

breakup-afidefit

তবে এখানেই গল্পের টুইস্ট। প্রেম আর প্রেমিকা হারানোর জ্বালায় জ্বলে মরা প্রেমিক কিন্তু স্যুইসাইড বা অ্যাসিড হামলার সেকেলে ক্লিশে পথে হাটল না। ধর্ণার দিকে তো একদমই গেল না সে। বরং শিক্ষিত এবং ম্যাচিওর ভাবেই পুরোটা ট্যাকেল করতে গিয়ে আখেড়ে এক অমোঘ ট্র‍্যাজেডি রূপ নিল নিখাদ কমেডির। নাছোড় প্রেমিক বায়না জুড়ে বসে ব্রেক আপ যখন হবেই তখন তাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। কথা মতো সে কুড়ি টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপার নিয়ে হাজির হলো প্রেমিকার সামনে। চাইল ব্রেক আপের লিখিত হলফনামা।

উদ্দেশ্য একটাই, আর তা হল ভবিষ্যতে দ্বিতীয় প্রেমে ধোঁকা খেয়ে যেন আর ফিরে আসার সুযোগ না থাকে। প্রেমিক বলে, প্রেমিক আছে জেনেও যে ছেলে মেয়েটার ঘনিষ্ট হয়েছে সে আর যাই হোক ভালো ছেলে নয়৷ আমার প্রাক্তন প্রেমিকা হয়তো সেটা বোঝেনি৷ তবে আজ না হোক কাল ঐ প্রেমও ভাঙবেই। আমি কিন্তু আমার পেশায় প্রোমশন পেয়ে গেছি৷ ভয়টা হলো ঐ প্রেম ভাঙার পর আমার বাড়ির সামনে যদি ওই মেয়ে এসে ধর্ণায় বসে তাহলে আমার কি হবে৷ তাই কোন চান্স নেই নাই৷ স্ট্যাম্প পেপার ডিড করে নিয়েছি৷ ভবিষ্যতে ফেরার পথ চিরতরে বন্ধ ওর সামনে৷ প্রেমিকাও কিন্তু ছ্যাচকাদুনি গায়নি। সে বলে, সম্পর্কটাই যখন শেষ হয়ে গেল তখন একটা হলফনামা লিখে দিলে আর কি আসে যায়৷ তাই ওর দাবি মতো যা বলেছে লিখে দিয়েছি।

লেখা লিখি না হয় গেল। তবে প্রেম ভাঙার এই চুক্তি কিন্তু প্রেমের ইতিহাসে হয়ে রইল অমর। গল্পটা কিন্তু এখানেই শেষ হলো না। শেষটা জানতে অপেক্ষা আরো কিছুদিনের। প্রেমের নতুন মোড়কে। যেখানে আরও কোন নতুন পক্ষ জুড়ে যায় কিনা আর এই চুক্তিনামা ফের বেড়িয়ে আসে কিনা প্রামাণ্য দলিল হিসেবে।