সোনা, হীরের চেয়েও দামি গন্ডারের শিং, কেন তা জানেন?

সোনা কিংবা হীরে তার চেয়েও দামি গন্ডারের শিং। এক গ্রাম গন্ডারের বাজার মূল্য এক গ্রাম হীরে বা সোনার চেয়েও বেশি। কিন্তু কি কারনে এটির এত…

সোনা কিংবা হীরে তার চেয়েও দামি গন্ডারের শিং। এক গ্রাম গন্ডারের বাজার মূল্য এক গ্রাম হীরে বা সোনার চেয়েও বেশি। কিন্তু কি কারনে এটির এত দাম? কি করা হয় এই গন্ডারের শিং দিয়ে? জানেন না? তাহলে এবার জেনে নিন। গন্ডারের শিং এত দামি হওয়ার পেছনের কারণ হল এশিয়ার বাজারে এর রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। যার পেছনে রয়েছে এই অঞ্চলের বহু মানুষের বিভিন্ন ধারণা। এশিয়ার কিছু অংশের মানুষ মনে করে এই গন্ডারের শিংয়ের গুঁড়ো জ্বর সারাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, বরং যৌবন ধরে রাখতে ও ক্যান্সার নিরাময় করতে এই গন্ডারের শিংয়ের গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়। মূলত এই সকল ধারণার কারণেই গন্ডারের শিংয়ের এত চাহিদা।

এক রিপোর্ট অনুসারে, এশিয়ার বাজারে গন্ডারের একটি শিং থেকে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব। এজন্যই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মুহূর্তে গন্ডারের শিং সবচেয়ে মূল্যবান। সোনা, হীরে, প্লাটিনামের থেকেও বেশি দামি। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক গন্ডার। এই প্রাণীর শিংয়ের সন্ধানে শিকারিরা মূলত প্রতিবেশী দেশ মোজাম্বিক থেকে আসে। প্রাণীটির প্রাণ কেড়ে নিয়ে তাদের শিং নিয়ে নেওয়া হয়। সেই সিং দিয়ে হয় বছরে ১ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের ব্যবসা।

তাই শিকারিরা কখনো প্রাণীটির প্রাণ কেড়ে নিয়ে তার শিং নিয়ে যায়। আবার কখনও শিং কেড়ে নিয়ে তাকে আহত অবস্থায় জঙ্গলে ফেলে দিয়ে যায়। মোজাম্বিক ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় এই শিকারিরা ছড়িয়ে আছেন। শিকারিরা দারিদ্র্যের কারণে এই কাজ করলেও তার পাশাপাশি লোভের বশত এই মর্মান্তিক পরিণতি দেয় গন্ডারদের। এই চক্র আইনের ধার ধারে না। তারা বারংবার একই অপরাধ করে চলে। এক সময় চিন ছিল এই শিংয়ের মূল ক্রেতা দেশ। কিন্তু গন্ডারের শিংয়ের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা মানতে শুরু করেছে চিন।

চিনে এখন ওষুধ তৈরিতে শিংয়ের উপস্থিতি পাওয়া যায় না। ১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পর থেকে দেশটিতে এই শিংয়ের ব্যবহার কমে গিয়েছে। তাহলে এই গন্ডারের শিং এখন বিক্রি হয় কোথায়? তা হল ভিয়েতনাম। ভিয়েতনামে এই প্রাণীর শিংয়ের গুড়ো ব্যবহার করা হয় জ্বরের ওষুধ হিসেবে। তবে গন্ডারের শিংয়ের এই ব্যবহার বিজ্ঞানসম্মত নয়। তবে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত এইসব ওষুধের চাহিদা এখনও কমছে না। তাই চলছে গন্ডারের শিংয়ের চাহিদা বাড়ছে শিকারিদের উৎপাত।

এভাবে চলতে থাকলে একসময় পৃথিবী থেকে গন্ডার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বিংশ শতকের শুরুতে পৃথিবীতে অন্তত ৫ লক্ষ গন্ডার ছিল। তবে পরিসংখ্যান বলছে এখন ৩০ হাজার গন্ডারও অবশিষ্ট নেই পৃথিবীতে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন শিংয়ের জন্য বহুদিন ধরেই গন্ডারের শিকার করছে মানুষ। ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশেও পার্বত্য এলাকায় একসময় এই গন্ডার পাওয়া যেত। এ কথা শুনলে অনেকেই হয়তো একে গল্প বলে উড়িয়ে দিতে পারে। তবে এটা গল্প নয় বরং সত্যি। বাংলাদেশ থেকেও নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে এই প্রজাতি।

এদিকে গত এক শতকে অনেকটাই ছোট হয়ে গিয়েছে গন্ডারের শিং। এমনই তথ্য উঠে এসেছে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের তথ্য অনুসারে। আর এই শিংয়ের দৈর্ঘ্য কমে যাওয়ার জন্য তারা দায়ী করছেন একমাত্র এই গন্ডার শিকারকে।