দেশের অন্যতম বড় মিউজিয়াম এইটি, জেনে নিন এর ইতিহাস

১৯৫১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম জাদুঘর (museum ) ‘সালারজং’ উদ্বোধন করেন পন্ডিত জওহরলাল নেহরু ৷ ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরে অবস্থিত সালারজং মিউজিয়ামটি আজও জীবন্ত। এখানে…

India's one of the largest museum

১৯৫১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম জাদুঘর (museum ) ‘সালারজং’ উদ্বোধন করেন পন্ডিত জওহরলাল নেহরু ৷ ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরে অবস্থিত সালারজং মিউজিয়ামটি আজও জীবন্ত। এখানে রয়েছে নানান দুষ্প্রাপ্য আর অমূল্য জিনিসের বিশাল সংগ্রহ৷ হায়দরাবাদ -আধুনিকতা আর ইতিহাসের মেলবন্ধনের নিজস্ব স্বকীয়তায় অনন্য ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম শহর। এই শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক প্রাসাদ আর বাড়িঘর। যেগুলোতে রয়েছে মুসলিম স্থাপত্যের নান্দনিক ছোঁওয়া। মুসি নদীর দক্ষিণ তীরে পুরোনো হায়দ্রাবাদ পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্র। এখানে রয়েছে বিখ্যাত সালার জং মিউজিয়াম (Salar jung Museum), চার মিনার, হাইকোর্ট, কুতুব শাহ গার্ডেনের মতো ঐতিহাসিক অনেক নিদর্শন।

সালারজং মিউজিয়ামটি আজও জীবন্ত। মিউজিয়ামটি গড়ে তোলেন নবাব মীর ইউসুফ আলী খান নামের এক শৌখিন মানুষ। তিনি সালার জং তৃতীয় নামে বিখ্যাত। বিয়ে থা করেননি ৷ নানান দুষ্প্রাপ্য আর অমূল্য জিনিস সংগ্রহ করা ছিল তাঁর শখ। সারা জীবন তিনি যা সংগ্রহ করেছেন তার সব কিছুই আছে এখানে। নিজাম থ্রি ইউসুফ আলি খান বেঁচেছিলেন মাত্র ষাট বছর (১৮৮৯ -১৯৪৯) ৷ তাঁর অমূল্য সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে সালারজং মিউজিয়ামটি ৷

১৯৫১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহর লাল নেহরু এই মিউজিয়ামটি উদ্বোধন করেন ৷ ১৯৫৮ সালে ভারত সরকার মিউজিয়ামটি অধিগ্রহণ করে। বর্তমানে মিউজিয়ামটিতে ৩৮টি গ্যালারি আছে । একদিনে দেখে শেষ করা যায় না এই মিউজিয়াম। দেশ-বিদেশের ঐতিহাসিক নানা অমূল্য সম্ভারের ভান্ডার এটি। এখানে ৪৩ হাজারের বেশি জিনিস আর ৫০ হাজারেরও বেশি বই রয়েছে। এটা ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম জাদুঘর। এই ঐতিহাসিক জাদুঘরে নতুনভাবে সংযুক্ত হচ্ছে ইসলামিক আর্ট গ্যালারি। এই গ্যালারিতে কোরআন শরিফের বেশ কিছু দুর্লভ ও প্রাচীন পাণ্ডুলিপি প্রদর্শিত হবে। কোনো জাদুঘরের ইসলামি গ্যালারি হিসেবে ভারতে এটি প্রথম এবং বিশ্বে তৃতীয়।

চিনা , জাপানি , প্রাচ্য , পাশ্চাত্য শিল্পকলা থেকে অসংখ্য দামি দামি মণিমুক্তো , পর্সেলিনের পাতপাত্র , হাতির দাঁতের কাজ , মোঘল সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের ফল কাটার ছুরি , ঔরংজেবের মণিমুক্তো শোভিত ছোরা , হাতির দাঁতের চেয়ার , পান্নার সুরা পাত্র , ডবল স্ট্যাচু , প্যারেড ঘড়ি , সিক্তবসনা ভেইলড রেবেকা মূর্তি – একটি মাত্র মার্বেল পাথরে খোদাই করে বসানো ভাস্কর্যটি চোখ চেয়ে দেখার মতো ৷ মিউজিয়ামে তিনটি বিভাগ আছে -সেন্ট্রাল ব্লক , ইস্টার্ন ব্লক এবং ওয়েস্টার্ন ব্লক ৷ শুক্রবার বন্ধ থাকে সালারজং মিউজিয়াম।

হায়দারাবাদের বিখ্যাত জাদুঘর সালার জং মিউজিয়াম। বহু হাজার বছরের পুরনো সংগ্রহের জন্য এটি বিখ্যাত। ৪৩ হাজারের বেশি জিনিস আর ৫০ হাজারেরও বেশি বই এই মিউজিয়ামে আছে। ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম জাদুঘর এটা। জাদুঘরের জিনিসগুলোর মধ্যে বেশ বৈচিত্র আছে ইওরোপিয়ান বহু দেশের আর্ট সামগ্রী ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য, জাপান, চীন, মিসর ইত্যাদি সব দেশের বহু সুন্দর সুন্দর দুর্লভ নিদর্শন আছে।

মিউজিয়ামে আছে টিপু সুলতানের পাগড়ি ও সিংহাসন, আওরঙ্গজেবের তলোয়ার , পান্না দিয়ে তৈরি জাহাঙ্গীরের পানপাত্র ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে পছন্দ হলো ইতালিয়ান ভাস্কর গিওভানি মারিয়া বেনজোনির তৈরি বিখ্যাত ভাস্কর্য ভেইল্ড রেবেকা। শিল্পী বাইবেলের চরিত্র রেবেকাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। ধবধবে সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি এক নারীমূর্তি। অত্যন্ত নিখুঁত আর অপূর্ব সুন্দর ভাস্কর্য। কোনো ভাস্কর্য যে এতো নিখুঁত আর জীবন্ত হতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এ যেন পাথরের বুকে একটি কবিতা , যা দর্শকদের একইসাথে মুগ্ধ ও বিস্মিত করে ৷ শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নয় হয়ে যায় ৷ এটা তৈরি করতে শিল্পীর সময় লেগেছে ৩৫ বছর।