Mermaid Mystery: সে কি আছে? টেরাকোটা শিল্পী থেকে কলম্বাসের লেখায় ‘জীবন্ত’ মৎস্যকন্যা

প্রাচীন বঙ্গ টেরাকোটায় যেমন অজানা শিল্পীর কল্পনায় যেমন আছে, তেমনই বিভিন্ন দেশের উপকথা, মূর্তি, নাবিকদের বয়ানে আছে এক রহস্যময়ী-মৎস্যকন্যা। আদৌ কি তার অস্তিত্ব আছে?  শরীরের…

প্রাচীন বঙ্গ টেরাকোটায় যেমন অজানা শিল্পীর কল্পনায় যেমন আছে, তেমনই বিভিন্ন দেশের উপকথা, মূর্তি, নাবিকদের বয়ানে আছে এক রহস্যময়ী-মৎস্যকন্যা। আদৌ কি তার অস্তিত্ব আছে?  শরীরের উপরিভাগ নারীর কিন্তু বাকি অংশ মাছের মতো, মৎসকন্যা তার নাম। এমন অসম্ভব সুন্দর জলপরীদের অস্তিত্ব আদতেই পৃথিবীতে আছে কিনা (Mermaid Mystery) তা হাজার হাজার বছর ধরে থেকে গেছে রহস্য হিসেবে‌।

মাছ ও মানুষের বৈশিষ্ট্য নিয়ে সৃষ্ট এই প্রাণীটি দেখতে নারীর মতো‌। যার রয়েছে কোমর পর্যন্ত সোনালী চুল, শরীরের উপরিভাগ নারীর মতো এবং নীচের দিকে মাছের মতো লেজযুক্ত। সমুদ্রের উপরিভাগে ভেসে বেড়ানো এবং বসবাসরত জলপরীরা মাছের মতো দীর্ঘসময়‌ জল ছাড়া থাকলে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ‌মৎসকন্যা আলোচনায় এসেছে মেরফুক বা মের পিপলের গল্প থেকে। মেরফুক নামে রহস্যময়ী জলজ প্রাণীদের পুরুষ অবয়বের নায় মেরম্যান ও নারীদের বলা হয় মারমেড। সমগ্র বিশ্বের সব লোক কাহিনী ও পৌরাণিক কাহিনীতেই কমবেশি এই মৎসকন্যা আলোচনায়।

   

মৎসকন্যা নিয়ে সিনেমা, কাব্য, গল্প, কথা কম হয়নি। নানা জন নানা রূপে উপস্থাপন করেছেন মারমেডকে।‌ ডিজনির বিখ্যাত সৃষ্টি লিটল মারমেড, অ্যরিয়াল ও রাজকুমার এরিকের অসাধারণ গল্পের কথা কে না জানে। স্কটিশ, আইরিশ লোককাহিনীর মৎসকন্যার নাম আবার সেলকাই। সেলকাইয়ের গল্পটা কিছুটা ব্যতিক্রমী। কিন্তু গল্পের কাহিনী বিন্যাস মৎসকন্যার মতোই। প্রচলিত এই লোককথা নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র। এই রহস্যময়ী অর্ধনারীর অবয়ব চিত্রই প্রথম নিদর্শন পাওয়া যায় প্রস্তর যুগের গুহাচিত্রে।

মৎসকন্যা নিয়ে সর্বপ্রথম জানা যায় সম্ভবত অ্যাসেরীয় সভ্যতায়। দেবী অ্যাটারগেটিস ভুলক্রমে তার প্রেমিকের প্রাণ নেন।  নিজের ভুল বুঝতে পেরে সমুদ্রে ঝাপ দিতে গেলে সমুদ্র দেবতা কোশাইটন রুপসী এই দেবীকে মৃত্যু না দিয়ে বরং অর্ধ মানবী ও অর্ধ মৎসের শরীরে মৎসকন্যার জীবন দেন। ব্যবিলনীয় কথায় এই কাহিনীটিই আছে দেবী ইয়াকে নিয়ে। গ্রিক সাহিত্যে অ্যাটারগেটিসের বর্ণনা আছে আফ্রুদিতি নামে‌। এছাড়াও গ্রিক সাহিত্যে অ্যাটারগেটিস দেবী ডার্কুটা নামে পরিচিত। তার অনুসারী সাইরেন নামে একদল সামুদ্রিক প্রাণীর পরিচয় পাওয়া যায়।

যারা সমুদ্রের নাবিকদের আকৃষ্ট করে তাদের দ্বীপে নিয়ে যেতে জলকন্যা সেজে ভেসে বেড়ান এবং মোহনীয় সুরে গান গায়। কানাডীয় রূপকথায় উল্লেখ রয়েছে, ম্যাগডার্লেন নামে‌ দ্বীপে। এই দ্বীপের উপকূলে সাইরেন মাছ বোঝাই জাহাজ ডুবে যায়। তারপর সেই মাছের একটি বক্স গুড়িয়ে পেয়ে মেয়েটি সেটি খোলার চেষ্টা করতে ঘুম ভেঙে যায় বিরাট এক চিংড়ির।সে‌ সেই মেয়েটাকে‌ নিয়ে সমুদ্রের নিচে নিয়ে গিয়ে মৎস কন্যায় পরিণত করে। তারপর থেকেই ওই দ্বীপের উপকূলে জেলে ও নাবিকরা শুনতে পায় মৎসকন্যার করুণ গান। এই গানের টানেই ডুবে যায় নৌকা আর জাহাজ।

পরিব্রাজক কলম্বাসের মৎস্যকন্যা: আমেরিকা আবিষ্কারের সময়ই ক্রিস্ট্রেফার কলম্বাসের ক্লকবুকে ১৪৯৩ সালে ৯ জানুয়ারির লেখা ঘটনায় মৎসকন্যার উল্লেখ পাওয়া যায়। কলম্বাস যখন ক্যারাবিয়ান দ্বীপ অতিক্রম করছেন তখন নাকি তিনি নারী অবয়বের একটি ‌মৎসকন্যাকে সমুদ্রের পাড়ে বসে থাকতে দেখেন। তিনি সেটি লোককাহিনীর মতো জাদুকর হিসেবে বর্ণনা না করে সাধারণ মানুষের মুখাবয়ব বিশিষ্ট মাছের উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন কলম্বাস ম্যানটিস বা এধরনের সামুদ্রিক প্রাণী দেখেছিলেন যাদের দূর থেকে দেখলে মানুষ বলে বিভ্রান্তি হয়।

পরিব্রাজক হেনরি হার্টসনের মৎস্যকন্যা: ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে হেনরি হার্টসনের নরওয়েতে ভ্রমণের কাহিনীতেও মৎসকন্যার উল্লেখ পাওয়া যায়। বেরিং সাগরে ঘটনাটি ঘটেছে। তবে ১৮৪৭ সালের কথা ৮০ বছর বয়স্ক একজন‌ জেলে বলেন, তিনি উপকূলে থেকে ২০ গজ দূরে মৎসকন্যা দেখেছিলেন। তার বণর্না অনুসারে মৎসকন্যা তখন গলদা চিংড়ির দাঁড়া দিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিল। খুব বেশিক্ষণ তাকানো যায়নি মৎসকন্যার দিকে। যখনই ওই মৎসকন্যা বুঝতে পারল কেউ তাকে দেখছে ওমনি টুপ করে জলের মধ্যে তলিয়ে যায়। ১৮৫৭ সালের জুন মাসের ৪ তারিখ ব্রিটিশ গেজেটে উল্লেখ আছে এক স্কটিশ নাবিক সাগরের মধ্যে ঢেউয়ের ওপরে এপ কিশোরীকে‌ বসে থাকতে দেখেছেন।

আধুনিক মৎস্যকন্যা: তবে মৎসকন্যার দেখা যাওয়া যে ঘটনাটি সবচেয়ে আলোড়ন ফেলেছে তা ঘটেছিল ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে দীঘা সমুদ্র উপকূলে। বিস্তারিত তথ্য পাওয়া না গেলেও ছবি ও স্বল্প সময়ের ভিডিওতে দেখা গেছে অদ্ভুত এক প্রাণীর অদ্ভুত শারীরিক গঠন। এই প্রাণীটির মাথা ছিল সম্পূর্ণ মাছের মতো তবে গলা থেকে দেহের অর্ধেক ছিল হুবহু মানুষের মতো। তবে তার‌ হাত দুটি পিছনে বাঁধা ছিল।

প্রায় ৩০ হাজার আগেকার কথা মানুষ সেসময় মাটিতে ফসল ফলাতে শিখেছে, সমুদ্রপথে ভাসানো শুরু করেছে জাহাজ। অনেকে মৎসকন্যার অস্তিত্ব বিশ্বাস করে, কেউ কেউ তা উড়িয়ে দেয়। পড়ে থাকে শুধু রহস্য যার সমাধান আজও হয়নি।