Sikkim: তখন সিকিম ‘স্বাধীন’, সিআইএ’র সেই রহস্যজনক রিপোর্টে লেখা ছিল বিপজ্জনক হ্রদ লোনাক

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে (CIA) বলা হয়েছিল, এমন একটি হ্রদ আছে হিমালয়ের গভীরে যার স্ফীতি চমকে দেওয়ার মতো। এই হ্রদটি ভারত ও চিনের সীমান্তে…

South Lhonak lake

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে (CIA) বলা হয়েছিল, এমন একটি হ্রদ আছে হিমালয়ের গভীরে যার স্ফীতি চমকে দেওয়ার মতো। এই হ্রদটি ভারত ও চিনের সীমান্তে অবস্থিত স্বশাসিত ছোট্ট ভূখণ্ড সিকিমের (Sikkim) অন্তর্ভুক্ত। বস্তুতপক্ষে সিআইএ যখন অতি বিপজ্জনক হ্রদটির বিষয়ে প্রথমবার তথ্য লিপিবদ্ধ করেছিল সেটা ১৯৬০ সাল। আর তখনও সিকিম একটি স্বাধীন দেশ। ১৯৭৫ সালে সিকিম অধিগ্রহণ করে ভারত। হিমালয়ের সেই বিপজ্জনক হ্রদটির নাম লোনাক। এই হ্রদ ফেটে প্রবল গতিতে হিমবাহ গলিত জল নিচের দিকে নেমে এসে তিস্তা নদীর সাথে মিশে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। হ্রদ ফাটা জল ও আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার স্রোতে সিকিমের নিম্নাঞ্চলে থাকা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিস্তির্ণ অংশে জারি সতর্কতা।

পিটিআই জানাচ্ছে, লোনাক হ্রদের সংলগ্ন এলাকা এমনিতেই দুর্গম। বিপর্যয়ের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ।মঙ্গলবার রাতে সিকিমের লাচেন উপত্যকায় তিস্তা নদীতে আকস্মিক বন্যায় তিনজন নিহত এবং ২৩ জন সেনা সদস্য নিখোঁজ হনউত্তর সিকিমের লোনাক হ্রদের উপর আকস্মিক মেঘ বিস্ফোরণের ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়। যার ফলে তিস্তার জলস্তর হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর চুংথাং বাঁধ থেকে জল ছেড়ে দেওয়া বন্যা পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। যার ফলে তিস্তার জলস্তর ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচুতে উঠে গেছে।

   

বিপজ্জনক লোনাক হ্রদ। এর ভৌগোলিক অবস্থান চরম কৌশলগত বলে সেই পাঁচ দশক আগে গোপন রিপোর্ট লিখেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ গোয়েন্দা বিভাগ।বিশ্ব জুড়ে ছড়ানো তাদের এজেন্ট। সেই সূত্রে ১৯৬০ দশকে সিকিমের মতো একটি ভূখণ্ড যা ভারত ও চিনের মধ্যে রাজতান্ত্রিক স্বশাসিত দেশ হিসেবে অবস্থান করছে তাকে নিয়ে সিআইএ বিস্তারিত গবেষণা চালায়। সিআইএ ভীত ছিল বৌদ্ধধর্মাবলম্বী প্রধান সিকিমকে যেন কোনওভাবেই চিন তাদের দখলে নিতে না পারে। এদিকে জীবনযাত্রার চিনা-তিব্বতি প্রভাব বেশি থাকলেও সিকিমের ততকালীন শাসক চোগিয়াল রাজপরিবার আমেরিকার ঘনিষ্ঠ ও ভারতের সাথে যোগাযোগ বেশি। ফলে সিকিমের ভূ-রাজনৈতিক তথ্য সংগ্রহে কোনও খামতি রাখেনি সিআইএ।

সিকিম সহ চিন ও ভারতের সীমান্তবর্তী হিমালয়ের অঞ্চল নিয়ে সিআইএ যে কৌশলগত রিপোর্ট জমা দিয়েছিল তাতে লোনাক হ্রদকে বলা হয়, এটি অতি দ্রুত প্রসারিত হতে পারে। সিকিম সংলগ্ন এলাকায় সিআইএ ও মার্কিন বিমান বাহিনীর যৌথ অনুষন্ধান চলে ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত। পাঁচ দশক পুরনো সেই গোপন রিপোর্টে উঠে এসেছে দক্ষিণ লোনাক হ্রদ হল একটি হিমবাহ বাঁধা হ্রদ যা সিকিমের সুদূর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এটি সিকিম হিমালয় অঞ্চলের দ্রুততম প্রসারিত হ্রদগুলির মধ্যে একটি। লোনাক হ্রদ এমন ১৪টি সম্ভাব্য বিপজ্জনক হ্রদগুলির মধ্যে একটি যা হিমবাহ গলিত বন্যার জন্য সংবেদনশীল৷

মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ রিপোর্টে লেখা আছে লোনাক হ্রদটির সাথে যুক্ত দক্ষিণ লোনাক হিমবাহ এবং পার্শ্ববর্তী উত্তর লোনাক এবং প্রধান লোনাক হিমবাহ থেকে অতিরিক্ত গলিত জলের কারণে হ্রদটি অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৭৭ সালে হ্রদটির আয়তন ছিল ১৭.৫৪ হেক্টর। ২০০৮ সালের মধ্যে এই হ্রদ পৃষ্ঠের আয়তন ৮১.১ হেক্টর বেড়েছে।

সিআইএ রিপোর্টেই স্পষ্ট ছোট্ট সিকিমের মধ্যে কী বিপজ্জনক প্রকৃতি লুকিয়ে আছে। হিমালয়ের রহস্যময় পরিবেশ এখনও বেশিরভাগ অজানা বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন। সিআইএ যখন তাদের রিপোর্ট লিখেছিল ততদিনে সিকিমের অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন। এই আন্দোলনকারীরা ভারতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পক্ষে। যার ফলে ১৯৭৫ সাল নাগাদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে সেনা অভিযান হয়েছিল সিকিমে। তরপরেই সিকিমের রাজতন্ত্রের পতন হয়। সেই থেকে এটি ভারতের অঙ্গরাজ্য।