ব্রিটিশকে হারিয়ে ডুরান্ড জয়ী, পাকিস্তানকেও গোল দিয়ে চিরকালীন নজির মহামেডানের

#MohammedanSportingClub প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ভারত তখনও পরাধীন। ১১ জনের ভারতীয় ফুটবল যোদ্ধারা ঐতিহ্যবাহী ডুরান্ড কাপ, প্রথম কোনও ভারতীয় দল হিসেবে জিতে নিল। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ফুটবল…

Mohammedan Sporting Club

#MohammedanSportingClub
প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ভারত তখনও পরাধীন। ১১ জনের ভারতীয় ফুটবল যোদ্ধারা ঐতিহ্যবাহী ডুরান্ড কাপ, প্রথম কোনও ভারতীয় দল হিসেবে জিতে নিল। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ফুটবল ট্রফি ঢুকল ক্লাব তাঁবুতে। ফুটবল মক্কা কলকাতা সেলাম করছে। সুদূর নিজামশাহী হায়দরাবাদে আতশবাজি ফুটছে। পরাধীন জাতির কাছে এই ডুরান্ড জয় মারাত্মক ব্যাপার।

সাদা-কালো জার্সির এই রঙিন ইতিহাসের ফলাফল ২-১, সেবারই প্রথমবার ব্রিটিশ আধিপত্য কাটল ডুরান্ড ট্রফিতে। মহামেডানের কাছে হারল ব্রিটিশ সেনাবাহিনির Royal Warwickshire Regiment দল। মহানগরী পাগল হয়ে গেছিল। আইএফএ শিল্ড, কলকাতা লিগ তো জয় করেছে আগেই মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল। এবার তৃতীয় ফুটবল শিরোপা ঢুকে পড়ল ভারতের খাতায়। চমকের আরও বাকি আছে।

Mohammedan Sporting Club

চরম আবেগের কলকাতা ফুটবল লিগ জয়ীদের খতিয়ানে লেখা আছে ‘৩০ দশকটি। ১৯৩৫ সালে মহামেডানের আরও এক নজির-প্রথম কোনও ভারতীয় দল যারা জিতে নিয়েছিল লিগ ট্রফি। ফুটবল মক্কায় তখন একটাই শব্দ ‘হারা দিয়া হামনে গোরে লোগো কো’। ১৯৩৫-৩৮ ভারতীয় ফুটবল দল হিসেবে ময়দানে সাদা কালো দাপট। পরপর কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে মহামেডান। ধারে পাশে কেউ নেই। ময়দানের কথা-খেলছে কালো প্যান্থার দল।

১৮৯১ সালে জন্ম এই ক্লাবের। মূলত ভারতীয় বিত্তশালী মুসলমান সমাজের ফুটবল প্রীতি এই ক্লাবকে ময়দানে নিয়ে এসেছিল। ১৯৩৬ সালে তৈরি হয় ‘ঢাকা মোহামেডান’। ব্ল্যাক প্যান্থার্স-কলকাতা মহামেডানের ডাক নাম।

সাদা-কালো জার্সির কলকাতা মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সোনালি অতীত এমনই জ্বলজ্বলে যে তার পাশে সমকালীন ক্লাবটি যেন মলিন বটপাতার মতো। এই ক্লাবের অবনমন ‘ফুটবলের মক্কা’ নগরীর জৌলুস কমাচ্ছে।
মহামেডানের যে নজির আসলেই নজিরবিহীনভাবে বিশ্বে আলোচিত সেটি হলো স্বাধীনতার পর প্রথম কোনও ভারতীয় ফুটবল দল হিসেবে বিদেশে চ্যাম্পিয়ন। এই মারাত্মক ঘটনার কেন্দ্র ততকালীন যুক্ত পাকিস্তানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর ঢাকা। ১৯৬০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী শহর ঢাকায় অনুষ্ঠিত আগা খান ট্রফি ঘিরে মারমার কাটকাট পরিস্থিতি। দর্শক ভেঙে পড়ছিল ঢাকা স্টেডিয়ামে। সেবার পাকিস্তান দল আর ফাইনালে নেই। তাতে কী হয়েছে ! কলকাতার মহামেডান তো আছে।

Mohammedan Sporting Club

পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকাতে রয়েছে ‘ঢাকা মোহামেডান’ ক্লাব। তাদেরও জার্সি সাদা কালো। ফলে যাবতীয় দর্শক সমর্থন ফাইনাল খেলতে নামা কলকাতার মহামেডানের দিকে। প্রতিদ্বন্দ্বী ইন্দোনেশিয়া তথা এশিয়ার বেশ সাড়া জাগানো PSM Makassar ক্লাব।

ঢাকায় আগা খান কাপের ফাইনালে প্রথম ভারতীয় ক্লাব হিসেবে মহামেডানের দাপট বজায় থাকল। ৪-১ গোলে জয়ী হয়ে পাকিস্তান কাঁপিয়ে ভারতীয় দল মহামেডান ফিরতেই কলকাতা ফের পাগল। গোটা দেশে লেগেছিল চমক। ভারতীয় ফুটবলের এই সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়ল বিশ্বে।

ষাট, সত্তর, আশি, নব্বই দশক কলকাতার তিন ফুটবল প্রধান দলের মারকাটারি লড়াইয়ের দিন শেষ। ব্ল্যাক প্যান্থার্সের অবনমন চলছে। এ ভারতীয় ফুটবলের পক্ষে লজ্জার। যে ইতিহাস, গৌরব মহামেডান দিয়েছে সেটি এখন ময়দান থেকেই বিলীন। তবে দলটি আছে। আধুনিকতার মোড়কে মুড়ছে। সফলতা ব্যর্থতার মাঝে ঝিলিক মারে এর ইতিহাস, যে ইতিহাসে ১১ জন ভারতীয় বারবার বল নিয়ে দেশে ও বিদেশের মাঠে ভারত গৌরব হয়েছেন।